অনশনের ২৩ ঘণ্টা, বারবার জ্ঞান হারাচ্ছেন ঢাবি শিক্ষার্থী
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) প্রশাসনিক ভবনে শিক্ষার্থী হয়রানি ও নানা অনিয়মের অভিযোগে ৮ দফা দাবিতে আমরণ অনশনরত বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের মাস্টার্সের শিক্ষার্থী মো. আবুল হাসনাত আব্দুল্লাহ গুরুতর অসুস্থ হয়ে বারবার জ্ঞান হারিয়ে ফেলছেন। তার একক অনশন প্রায় ২৪ ঘণ্টায় এসে পৌঁছালেও, এখন অবধি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কারও দেখা মেলেনি। গতকাল মঙ্গলবার সকাল ১১টা থেকে তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনের মূল ফটকের সামনে এ অনশন শুরু করেন।
জানা যায়, না খেয়ে থাকায় গতকাল রাতে হাসনাত অসুস্থ হয়ে যান। তাঁর কিডনি ও লিভারের সমস্যা থাকায় খাবার ও পানি না খাওয়াতে শারীরিক ক্রিয়া হারিয়ে রাত দেড়টায় গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন। এসময় সহপাঠীরা তাঁকে হাসপাতালে নিয়ে যেতে চান। এতে তিনি রাজি না হলে তাৎক্ষণিকভাবে চিকিৎসক নিয়ে আসা হয়। পরে চিকিৎসকের লিখে দেওয়া ওষুধ আনা হলেও তিনি তা গ্রহণ করেননি।
এদিকে চিকিৎসক জানিয়েছেন, প্রয়োজনীয় খাবার, ওষুধ ও গ্লুকোজ গ্রহণ না করলে হাসনাতের গুরুতর অসুস্থ হবার আশঙ্কা রয়েছে।
হাসনাতের সঙ্গে অবস্থানরত শিক্ষার্থী রিফাত রশিদ এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘হাসনাত আব্দুল্লাহর কয়েকটি গুরুতর অসুখ থাকায় ও খাবার পানি না নেওয়ায় রাতেই শরীরের ইন্টার্নাল অরগ্যানগুলো কার্যক্ষমতা হারিয়ে ফেলে। এজন্য তাঁর শরীরে বার বার খিঁচুনি হয় এবং জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন। রাতে আমরা অ্যাম্বুল্যান্সের ব্যবস্থা করলেও হাসপাতালে যেতে রাজি হননি তিনি। এরপর ডাক্তার এনে তার পরামর্শ অনুযায়ী ওষুধ আনলেও তিনি তা সেবন করতে রাজি হননি। রাত থেকে বার বার অজ্ঞান হয়ে যাচ্ছেন’
রিফাত আরও বলেন, ‘২২ ঘন্টা (রিপোর্ট লেখার পূর্বে বক্তব্য নেয়ার সময়) পার হতে চললো, এখন পর্যন্ত প্রশাসনের কেউ আসেনি। যদি তাঁর কিছু হয়, তাহলে প্রশাসনকেই এর দায় নিতে হবে। আজ বুধবার বেলা ১১টায় প্রশাসনিক ভবনের সামনে আমাদের মানববন্ধন কর্মসূচি রয়েছে।’
হাসনাত আব্দুল্লাহর আট দফা দাবিগুলো হলো-
১. শিক্ষার্থীদের হয়রানি নিরসনের জন্য ও প্রশাসনিক কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের কাজের জবাবদিহিতা নিশ্চিতে শিক্ষক ও ছাত্র প্রতিনিধিদের সমন্বয়ে অভিযোগ সেল গঠন করতে হবে। যেখানে সেবাগ্রহীতারা সুনির্দিষ্ট প্রমাণাদির ভিত্তিতে অভিযোগ জানাতে পারেন।
২. প্রশাসনিক সকল কার্যক্রম অনতিবিলম্বে ডিজিটাইজড করতে হবে।
৩. নিরাপত্তা ও হারিয়ে যাওয়া কাগজপত্র তদন্তের স্বার্থে অফিসসমূহের অভ্যন্তরে প্রতিটি রুমে পর্যাপ্ত পরিমাণে সিসি ক্যামেরা স্থাপন করতে হবে।
৪. প্রশাসনিক ভবনে অফিস সমূহের প্রবেশদ্বারে ডিজিটাল ডিসপ্লে স্থাপন করতে হবে। ডিসপ্লেতে অফিস সমূহের নাম, কক্ষ নম্বর ও সেখানে প্রদত্ত সেবার বিবরণী, কর্তব্যরত কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের নাম ও ছবি সহ প্রয়োজনীয় তথ্যাবলি প্রদর্শন করতে হবে।
৫. কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য স্বাস্থ্যকর ও সুন্দর কর্ম পরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে। প্রশাসনিক ভবনের ক্যান্টিনেরও সংস্কার করতে হবে।
৬. কর্মকর্তা-কর্মচারীদের আধুনিক সাচিবিক-বিদ্যা, পেশাদারিত্ব, মানবিক ও আচরণগত প্রশিক্ষণ আইন করে বাধ্যতামূলক করতে হবে। প্রয়োজনে বিশ্ববিদ্যালয়ে অবস্থিত মানসিক সেবা প্রদানকারী বিভাগ ও সেন্টারসমূহের শরণাপন্ন হতে হবে।
৭. অফিস চলাকালীন প্রশাসনিক কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা ব্যক্তিগত, ব্যবসায়িক কিংবা রাজনৈতিক কোনো কাজেই লিপ্ত থাকতে পারবেন না। সে নিরিখে প্রশাসনিক ভবনের অভ্যন্তরে অবস্থিত কর্মচারী ইউনিয়ন অফিস বাধ্যতামূলকভাবে তাদের ক্লাবসমূহে স্থানান্তর নিশ্চিত করতে হবে।
৮. কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নির্বাচনকালীন প্রচারণা পরিবেশবান্ধব করতে হবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাভাবিক শিক্ষার পরিবেশ বজায় রাখতে, বিশেষ করে বিশ্ববিদ্যালয়ের সৌন্দর্য হানিকর ও পরিবেশ বিপর্যয়কারী অপ্রয়োজনীয় পোস্টার লিফলেট ও ব্যানার ব্যবহার আইন করে নিষিদ্ধ করতে হবে।