অবশেষে শাবিপ্রবি’র উপাচার্যের দুঃখপ্রকাশ
শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (শাবিপ্রবি) চলমান ঘটনায় দুঃখ প্রকাশ করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য (ভিসি) ফরিদ উদ্দিন আহমেদ। এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে আজ শনিবার দুঃখ প্রকাশ করেন তিনি।
বিজ্ঞপ্তিতে ভিসি বলেন, ‘আমাদের প্রিয় বিশ্ববিদ্যালয়ে ঘটে যাওয়া অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনায় শিক্ষক, শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ যাঁরা আহত হয়েছেন, তাঁদের সবার প্রতি আমার আন্তরিক সমবেদনা ও সহমর্মিতা প্রকাশ করছি। বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ অভিভাবক হিসেবে ঘটে যাওয়া অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার জন্য আমি আন্তরিকভাবে গভীর দুঃখ প্রকাশ করছি।’
অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার ধারাবাহিকতায় সৃষ্ট অচলাবস্থা কাটিয়ে উঠতে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা ও কর্মচারী—যাঁরা আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন তাঁদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান ভিসি ফরিদ উদ্দিন।
বিজ্ঞপ্তিতে ভিসি আরও বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাভাবিক অবস্থা দ্রুত ফিরিয়ে আনতে শিক্ষামন্ত্রীর নেতৃত্বে শিক্ষা উপমন্ত্রীসহ সরকারের সব স্তরের দায়িত্বশীল ব্যক্তিবর্গ, কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাসহ সিলেটের সুশীল সমাজের সবাইকে এবং বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থাসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যকে জানাই আমার আন্তরিক ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা। বিশ্ববিদ্যালয়ের সমস্যা নিরসনে গণমাধ্যমকর্মীদের যাঁরা দায়িত্বশীল ভূমিকা রেখেছেন, তাঁদেরও ধন্যবাদ জানাচ্ছি।’
ভিসি আরও উল্লেখ করেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের সুন্দর ও স্বাভাবিক কার্যক্রম ফিরিয়ে আনার জন্য আমি বিশ্ববিদ্যালয় পরিবারের সবাইকে স্ব স্ব অবস্থান থেকে ভূমিকা রাখার জন্য অনুরোধ জানাচ্ছি। আমার দৃঢ় বিশ্বাস, সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টায় আমাদের এই প্রিয় প্রতিষ্ঠানটিকে বিশ্বমানের বিশ্ববিদ্যালয়ে পরিণত করা সম্ভব হবে।’
এদিকে, দীর্ঘ ২৫ দিন পর গতকাল শুক্রবার নিজ বাসভবন থেকে বাইরে বেরিয়ে আসেন শাবিপ্রবি’র ভিসি অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদ।
এর আগে দাবি আদায়ে শাবিপ্রবি’র ভিসিকে অবরুদ্ধ করে রেখেছিলেন আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা। গত ১৬ জানুয়ারি বিকেল ৩টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের ড. এম এ ওয়াজেদ মিয়া আইআইসিটি ভবনেও তাঁরা উপাচার্যকে অবরুদ্ধ করে রেখেছিলেন। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন অব্যাহত থাকবে বলে জানিয়েছেন শিক্ষার্থীরা।
গত ১৩ জানুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয়টির বেগম সিরাজুন্নেসা চৌধুরী হলের প্রাধ্যক্ষের বিরুদ্ধে অসদাচরণসহ বিভিন্ন অভিযোগ তুলে তাঁর পদত্যাগসহ তিন দফা দাবিতে আন্দোলন শুরু করেন হলের কয়েকশ ছাত্রী। আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর ১৫ জানুয়ারি ছাত্রলীগ হামলা চালায়। পরদিন ১৬ জানুয়ারি শিক্ষার্থীদের ওপর পুলিশ লাঠিপেটা করে এবং শটগানের গুলি ও সাউন্ড গ্রেনেড ছোড়ে। পরে আন্দোলনটি উপাচার্য ফরিদ উদ্দিন আহমেদের পদত্যাগের এক দফা দাবিতে রূপ নেয়।
কর্মসূচির একপর্যায়ে ১৯ জানুয়ারি থেকে এক দফা দাবিতে আমরণ অনশন শুরু করেন ২৪ জন শিক্ষার্থী। অনশনের আট দিন পর ২৬ জানুয়ারি সকাল ১০টা ২০ মিনিটে বরেণ্য কথাসাহিত্যিক, শিক্ষাবিদ ড. মুহম্মদ জাফর ইকবালের অনুরোধে অনশন ভাঙেন শিক্ষার্থীরা।
এর ১৪ দিন পর গত বুধবার বিকেল থেকে পরপর দুদিন উপাচার্যের পদত্যাগ দাবিতে আন্দোলনের ছবি, ব্যঙ্গচিত্র সংবলিত প্ল্যাকার্ড নিয়ে বিক্ষোভ মিছিল করেন শিক্ষার্থীরা। এ সময় তাঁরা বলেন, ‘আমাদের আন্দোলন চলছে ও চলবে।’ এদিন তাঁরা অবিলম্বে মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার করে উপাচার্যের পক্ষ নেওয়াদের হুঁশিয়ারি দেন।
এরপর গতকাল শুক্রবার সকালে শাবিপ্রবি’র আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলতে ও চলমান সংকট নিরসনে সিলেট পৌঁছান শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি।
এ ছাড়া, শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি শাবিপ্রবি’র ভিসিকে দায়িত্ব পালন করে যাওয়ার পরামর্শ দেন। গতকাল শুক্রবার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে উপাচার্যের সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভূত পরিস্থিতি নিয়ে প্রশাসনিক ভবনে বৈঠকে শিক্ষামন্ত্রী এ পরামর্শ দেন। একই সঙ্গে আগামী ১৪ ফেব্রুয়ারি শাবিপ্রবি দিবস যেন যথাযথভাবে পালন করা হয়, সে বিষয়েও ব্যবস্থা নিতে বলেন তিনি।
যদিও উপাচার্যের বিষয়ে শিক্ষার্থীরা যেসব অভিযোগ তুলেছেন, তার তদন্ত হচ্ছে। তদন্ত শেষে রাষ্ট্রপতিই সব সিদ্ধান্ত দেবেন বলে জানানো হয়েছে।
বৈঠক শেষে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার ইশফাকুল হোসেন ও কোষাধ্যক্ষ আনোয়ারুল ইসলাম সাংবাদিকদের এসব কথা জানান।
ইশফাকুল হোসেন বলেন, ‘মন্ত্রী আলোচনায় শিক্ষকদের প্রতি ক্যাম্পাসের স্বাভাবিক পরিস্থিতি ফিরিয়ে আনার আহ্বান জানিয়েছেন। সেই সঙ্গে তিনি উপাচার্যকে তাঁর দায়িত্ব পালন করে যেতে বলেছেন।’
শিক্ষামন্ত্রীর পরামর্শের বিষয়ে কোষাধ্যক্ষ আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, ‘মন্ত্রী বলেছেন—উপাচার্যের বিষয়ে শিক্ষার্থীরা যেসব অভিযোগ তুলেছেন, তার তদন্ত হচ্ছে। তদন্ত শেষে রাষ্ট্রপতিই সব সিদ্ধান্ত দেবেন। আগামী ১৪ ফেব্রুয়ারি শাবিপ্রবি দিবস। দিবসটি যেন যথাযথভাবে পালন করা হয়, সে বিষয়ে শিক্ষামন্ত্রী ব্যবস্থা নিতে বলেছেন।’