কালাজ্বর শনাক্তকরণে নতুন পদ্ধতি উদ্ভাবন করেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
দ্রুততম সময়ের মধ্যে প্রাণঘাতী কালাজ্বর নির্ভুলভাবে শনাক্ত করার পদ্ধতি উদ্ভাবন করেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি)। ঢাবির অণুজীববিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক মুহাম্মদ মনজুরুল করিমের নেতৃত্বে একটি গবেষকদল এই পদ্ধতি উদ্ভাবন করে।
অধ্যাপক আব্দুল মতিন চৌধুরী ভার্চুয়াল ক্লাসরুমে আজ সোমবার (২ জানুয়ারি) এক সংবাদ সম্মেলনে এই নতুন পদ্ধতি সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরা হয়। সংবাদ সম্মেলনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান সভাপতিত্ব করেন।
এ সময় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক মমতাজ উদ্দিন আহমেদ, স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. মো. টিটো মিয়া, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় জীববিজ্ঞান অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. এ কে এম মাহবুব হাসান, চিকিৎসা অনুষদের ডিন অধ্যাপক ডা. শাহরিয়ার নবী, অণুজীববিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারপারসন অধ্যাপক ড. আনোয়ারা বেগমসহ বিভিন্ন অনুষদের ডিন, বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষক ও গবেষকদলের সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।
উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান এই অসাধারণ উদ্ভাবনের জন্য গবেষকদলকে অভিনন্দন জানিয়ে বলেন, ‘মৌলিক গবেষণার ক্ষেত্রে এটি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি উল্লেখযোগ্য সাফল্য। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বিশ্বমানের অনেক গবেষক ও বিজ্ঞানী রয়েছেন। নতুন নতুন উদ্ভাবনের মাধ্যমে তাঁরা দেশের আর্থসামাজিক উন্নয়নে ভূমিকা রাখতে সক্ষম। আধুনিক ও সমৃদ্ধ ল্যাব স্থাপন করা গেলে শিগগিরই এই বিশ্ববিদ্যালয়ে কোভিড-১৯ টিকাসহ বিভিন্ন ধরনের টিকা উদ্ভাবন ও উৎপাদন করা যাবে।’
গবেষকদলের প্রধান অধ্যাপক মুহাম্মদ মনজুরুল করিম জানান, রিয়েল টাইম পিসিআর-ভিত্তিক এই মলিকুলার ডায়াগনস্টিক পদ্ধতি সম্পূর্ণ নির্ভুল ও নিখুঁতভাবে কালাজ্বর শনাক্তকরণের একটি রোগীবান্ধব পদ্ধতি। মূত্রের নমুনা ব্যবহার করে এই পদ্ধতিতে মাত্র তিন ঘণ্টার মধ্যে কালাজ্বর শনাক্ত করা সম্ভব। আগে কালাজ্বর নির্ণয়ের ক্ষেত্রে রক্তের ইমিউনোক্রোমাটোগ্রাফিক পরীক্ষা এবং অস্থি-মজ্জা, যকৃত, প্লীহা, লিম্ফ নোডের টিস্যু অণুবীক্ষণ যন্ত্রের মাধ্যমে পরীক্ষা করা হতো। এতে রোগ শনাক্তকরণের জন্য সাত দিন সময় লাগত।
অধ্যাপক মুহাম্মদ মনজুরুল করিম বলেন, ‘নতুন এই পদ্ধতিতে কালাজ্বর নির্ণয় ও নির্মূলের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ একধাপ এগিয়ে গেল। এই ধরনের উদ্ভাবন বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা কর্তৃক ২০৩০ সালের মধ্যে উপেক্ষিত গ্রীষ্মমণ্ডলীয় রোগ নির্মূলের জন্য নির্ধারিত কার্যপ্রণালির অন্যতম লক্ষ্য। প্রস্রাবের নমুনা ব্যবহার করে এই পদ্ধতিতে যে উল্লেখযোগ্য সংবেদনশীলতা এবং নির্দিষ্টতা পাওয়া গেছে তা রক্ত বা আরও জটিল নমুনা যেমন অস্থি-মজ্জা বা প্লীহার নমুনা ভিত্তিক কালাজ্বর নির্ণয় পদ্ধতিকে প্রতিস্থাপন করতে পারবে।’
অধ্যাপক মুহাম্মদ মনজুরুল করিম আরও বলেন, ‘প্রচলিত পিসিআর ও নেস্টেড পিসিআর-ভিত্তিক কৌশলগুলোর সঙ্গে তুলনা করলে, রিয়েল টাইম-পিসিআরের একটি ধাপেই রোগকে অধিক নির্ভুলতা এবং নিশ্চয়তার সঙ্গে শনাক্তকরণে সক্ষম, যা প্যাথলজিস্টদের জন্য কাজের চাপ কমিয়ে দেবে। এই পদ্ধতিটি একইসঙ্গে রোগী ও জীবাণুর প্রতিক্রিয়া মূল্যায়ন, আক্রান্ত ব্যক্তির শরীরে পরজীবীর গতিবিধি, পরিবেশে সংক্রমণের গতিবিধি নিরুপণ এবং মহামারি সংক্রান্ত জরিপ পর্যবেক্ষণেও ব্যবহার করা যেতে পারে।’
জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে কালাজ্বর নির্মূলে এই গবেষণা উল্লেখযোগ্য প্রভাব ফেলবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন অধ্যাপক মুহাম্মদ মনজুরুল করিম। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অণুজীববিজ্ঞান বিভাগে করা কালাজ্বরের MDx-এ ক্লিনিকাল নমুনা হিসেবে প্রস্রাব ব্যবহার করার দৃষ্টান্ত ভারতীয় উপমহাদেশে এই প্রথম এবং এর ফলাফল বিশ্বখ্যাত জার্নালে (PLOS Global Public Health) প্রকাশিত হয়েছে বলে জানান তিনি।