ক্যাম্পাস ছাড়লেন ইবি ছাত্রলীগনেত্রী সানজিদা-তাবাসসুম
কুষ্টিয়া ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) শেখ হাসিনা হলে ছাত্রী নির্যাতনে ঘটনার জেরে ছাত্রলীগনেত্রী সানজিদা ও তাবাসসুম ক্যাম্পাস ছেড়েছেন। গতকাল বৃহস্পতিবার (১৬ ফেব্রুয়ারি) সন্ধ্যার দিকে তারা বাড়িতে চলে যান। আজ শুক্রবার সকালে প্রক্টর অধ্যাপক ড. শাহাদাত হোসেন আজাদ এ তথ্য নিশ্চিত করেন।
প্রক্টর বলেন, ‘ছাত্রলীগনেত্রীদের বিষয়ে হাইকোর্টের লিখিত আদেশ এখনও হাতে পাননি। তবে, গণমাধ্যমে বিষয়টি জানার পর উপাচার্য ওই দুই ছাত্রীকে ক্যাম্পাস ছাড়তে বলেন। সন্ধ্যার পর তারা হল ছেড়েছেন বলে নিশ্চিত করেছেন প্রভোস্ট।’
প্রক্টর আরও বলেন, ‘দুই ছাত্রীর পরিবারের সঙ্গেও কথা হয়েছে। এরপর তারা ক্যাম্পাস ছাড়ে। এদের একজনের বাড়ি রংপুর, সে তার বাবার কর্মস্থল রাজশাহীতে গেছেন। আরেক ছাত্রী একটু দূরের জেলার, তাই তিনি রাতে কুষ্টিয়ায় অবস্থান করেন।’
ভুক্তভোগী ছাত্রীকে নিরাপত্তা দেওয়ার বিষয়ে প্রক্টর শাহাদাত বলেন, ‘আমি ভুক্তভোগী ছাত্রী ও তাঁর বাবার সঙ্গে কথা বলেছি। ক্যাম্পাসে তাঁকে নিরাপত্তা দেওয়া হবে বলে জানিয়েছি। ওসি ও আমার ফোন নম্বর দিয়ে রেখেছি।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের শেখ হাসিনা হলের গণরুমে গত রোববার রাতে সাড়ে চার ঘণ্টা আটকে রেখে নির্যাতনের অভিযোগ করেছেন প্রথম বর্ষের এক ছাত্রী। ভুক্তভোগী ছাত্রীর ভাষ্য, বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সহসভাপতি সানজিদা চৌধুরী এবং তার অনুসারীরা নির্যাতন চালিয়েছেন। নির্যাতনের সময় বিবস্ত্র করে ভিডিও ধারণ, গালাগাল এবং এই ঘটনা কাউকে জানালে হত্যার হুমকি দেওয়া হয় বলে ওই ছাত্রী বিশ্ববিদ্যালয় প্রক্টর, হলের প্রভোস্ট ও ছাত্র উপদেষ্টার কাছে লিখিত অভিযোগ করেন।
অভিযুক্ত সানজিদা চৌধুরী বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিসংখ্যান বিভাগের ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী। অপর অভিযুক্ত তাবাসসুম ফিন্যান্স অ্যান্ড ব্যাংকিং বিভাগের ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের ছাত্রী। ভুক্তভোগী ছাত্রীও একই বিভাগের নবীন শিক্ষার্থী।
ছাত্রী নির্যাতনের ঘটনা তদন্ত করতে পাঁচ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
এদিকে, এ ঘটনায় আইনজীবী গাজী মো. মহসীনের করা রিটের পরিপ্রেক্ষিতে হাইকোর্ট বৃহস্পতিবার কুষ্টিয়া জেলা প্রশাসককে তিন সদস্যবিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করতে বলেছেন। তিন সদস্যের কমিটিতে প্রশাসন ক্যাডারের একজন কর্মকর্তা, জেলা জজ মনোনীত বিচার বিভাগীয় একজন কর্মকর্তা এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন সহকারী অধ্যাপক থাকবেন। কমিটি গঠনের সাত দিনের মধ্যে আদালতে প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে।
হাইকোর্টের আদেশে তদন্ত চলাকালে অভিযুক্ত দুজনকে হল ও ক্লাসের বাইরে রাখতে এবং নির্যাতনের শিকার শিক্ষার্থীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া ভুক্তভোগী চাইলে মামলা করতে পারবেন এবং মামলা নিতে ইবি থানা বাধ্য থাকবে বলেও আদেশ দেন হাইকোর্ট। একইসঙ্গে এই ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনের করা কমিটির প্রতিবেদনও ১০ দিনের মধ্যে দাখিল করতে বলেছেন আদালত।
এ বিষয়ে কুষ্টিয়ার জেলা প্রশাসক মো. সাইদুল ইসলাম বলেন, ‘আদালতের নির্দেশনার কাগজ হাতে পেলেই কমিটি গঠনসহ কার্যকরী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’