খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষক বরখাস্ত, দুজন অপসারণ
শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে উসকানি দেওয়ার দায়ে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের তিন শিক্ষকের বিরুদ্ধে শাস্তির সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করা হয়েছে। এর মধ্যে একজনকে চাকরি থেকে বরখাস্ত এবং বাকি দুজনকে অপসারণ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় সিন্ডিকেট।
বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংযোগ বিভাগের পরিচালক এস এম আতিয়ার রহমান বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি আরো বলেন, আজ শনিবার অনুষ্ঠিত বিশ্ববিদ্যালয় সিন্ডিকেটের ২১২তম সভায় এই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
বরখাস্ত শিক্ষক হলেন বাংলা ডিসিপ্লিনের সহকারী শিক্ষক মো. আবুল ফজল। আর অপসারণ করা দুই শিক্ষক হলেন ইতিহাস ও সভ্যতা ডিসিপ্লিনের প্রভাষক হৈমন্তী শুক্লা কাবেরী ও বাংলা ডিসিপ্লিনের প্রভাষক শাকিলা আলম।
গত বছরের জানুয়ারিতে আন্দোলনের জের ধরে দুই শিক্ষার্থী বহিষ্কারের পর এবার তিনি শিক্ষকের বিরুদ্ধে শাস্তি চূড়ান্ত করা হলো।
বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট সচিব ও ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার অধ্যাপক খান গোলাম কুদ্দুস গণমাধ্যমকে বলেন, উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ ফায়েক উজ্জামানের সভাপতিত্বে এই সিন্ডিকেট সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় উপউপাচার্য অধ্যাপক ড. মোসাম্মাৎ হোসনে আরা, নতুন সদস্য প্রধানমন্ত্রীর একান্ত সচিব-২ ওয়াহিদা আক্তার, অধ্যাপক ড. মো. মনিরুল ইসলাম, অধ্যাপক এ কে ফজলুল হক, অধ্যাপক ড. মো. আব্দুল জব্বার, ড. নিহার রঞ্জন সিংহকে ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানানো হয়।
এ ছাড়া সিন্ডিকেট সদস্য অধ্যাপক ড. মুনতাসীর মামুন, অধ্যাপক ড. আনন্দ কুমার সাহা, অধ্যাপক ড. মো. মাহবুবুর রহমানসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন ক্যাটাগিরর অন্যান্য সব সদস্য সভায় উপস্থিত ছিলেন।
সিন্ডিকেটের অপর দুই সদস্য খুলনা প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন উপাচার্য ও বর্তমান ইউজিসির সদস্য অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ আলমগীর ও খুলনা বিভাগীয় কমিশনার মো. ইসমাইল হোসেন (এনডিসি) অনলাইনে যুক্ত থেকে এ সভায় অংশগ্রহণ করেন। সভায় বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রধান ফটক স্থাপনের নকশাও গৃহীত হয় বলে জানান সিন্ডিকেট সচিব।
সভা শেষে উপাচার্য অধ্যাপক ড. ফায়েক উজ্জামান এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের যে সংস্কৃতি তাতে যেকোনো সমস্যায় শিক্ষকরা উপাচার্যের কাছে সরাসরি চলে আসেন। কিন্তু ওই তিনজন শিক্ষক কিন্তু একবারও কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করে নাই। কী করেছে? সরাসরি শিক্ষার্থীদের উসকে দিয়েছে।’
‘তাদের বিভিন্ন সময়ে তিনবার করে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয়েছে। তদন্ত কমিটি দুই মাস ধরে কাজ করেছে। তদন্ত কমিটিকে তারা কোনো সহযোগিতাই করেনি। তারা নানা কারণ দেখিয়ে তদন্ত কমিটিকে প্রত্যাখ্যান করেছে’, যোগ করেন উপাচার্য।
এর আগে গত ১৮ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত বিশ্ববিদ্যালয় সিন্ডিকেটের ২১১তম সভায় তিন শিক্ষকের বিরুদ্ধে উপরিউক্ত শাস্তির সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। তবে নিয়মানুযায়ী, রেজিস্ট্রার স্বাক্ষরিত এক অফিস আদেশে তাদের স্ব স্ব নামে কেন তাদেরকে বরখাস্ত এবং অপসারণ করা হবে না মর্মে আত্মপক্ষ সমর্থনের চিঠি দেওয়া হয়।
তিনজন শিক্ষক নির্ধারিত ২১ জানুয়ারি দুপুর মধ্যে চিঠির জবাব দেন। জবাব দিলেও তাঁরা কোনোরকম দুঃখ বা ক্ষমাপ্রকাশ করেননি বলে বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে।
দুই দফায় উপাচার্ষ পদে নিয়োগ পাওয়া অধ্যাপক ফায়েক উজ্জামানের মেয়াদ শেষ হচ্ছে আগামী ২৯ জানুয়ারি। শেষ মুহূর্তে এসে ১৩০ জনকে নিয়োগ এবং গত বছরের জানুয়ারি মাসে ছাত্র আন্দোলনের বিষয় নিয়ে ক্যাম্পাস কিছুটা উত্তপ্ত।
এরই মধ্যে দুজন শিক্ষার্থী তাদের বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহারের জন্য গত ১৯ জানুয়ারি থেকে আমরণ অনশন করছে। আজ সেই অনশনের পঞ্চম দিন অতিবাহিত হচ্ছে।
গত বছর জানুয়ারিতে ছাত্রদের পাঁচ দফা দাবি আদায়ের সময় শিক্ষকদের সঙ্গে এই দুই ছাত্র অসৌজন্যমূলক আচরণ করেন বলে শিক্ষকরা অভিযোগ করেছিলেন। সেই অভিযোগের ভিত্তিতে সম্প্রতি এই দুই শিক্ষার্থীকে বহিষ্কার এবং ছাত্র আন্দোলনে উসকানি দেওয়ার অভিযোগে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেয় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।
শিক্ষার্থীরা গত ১৬ জানুয়ারি সংবাদ সম্মেলন করে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে তাঁদের বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহারের দাবি জানান। এরপর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনের সামনে ৪৮ ঘণ্টা অবস্থান ধর্মঘট পালন করেন। এরই ধারাবাহিকতায় গত ১৯ জানুয়ারি সন্ধ্যা থেকে একই স্থানে অমরণ অনশন শুরু করেন তাঁরা। শিক্ষার্থীদের সহপাঠীরা বিভিন্ন সময় মোমবাতি প্রজ্জ্বলন এবং দুই শিক্ষার্থীর দাবির সমর্থনে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করছে।