ছুটির পর ভেলপুরি
দেড় বছর পর সব বন্ধুরা একসঙ্গে। হাসি-ঠাট্টায় মুখরিত স্কুল-কলেজ প্রাঙ্গণ ও শ্রেণিকক্ষ। স্কুল-কলেজের পোশাকে বহুদিন পর পরিপূর্ণ রাস্তাঘাট। অভিভাবকেরাও নিজেদের মধ্যে মেতে উঠেছেন আড্ডায়। এমন উৎসব-উদ্দীপনার মধ্যে রাস্তার পাশের ভেলপুরি বিক্রেতার মুখে হাসি থাকবে না, তা হয় না। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বিক্রিও হচ্ছে বেশ। দেড় বছর পর ‘বাঁন্ধা কাস্টমার’ (নিয়মিত ক্রেতা) আবারও চোখের সামনে।
মতিঝিল আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজের পাশে আজ রোববার সকালে এমন দৃশ্য ধরা পড়ে। স্কুল-কলেজে স্বল্প পরিসরে ক্লাস হওয়ার পর যখন ছুটির ঘণ্টা বাজে, তখনই লোভ সামলানো যেন দায় হয়ে পড়ে শিক্ষার্থীদের মধ্যে। প্রতিষ্ঠানের পাশে অপেক্ষায়ও রয়েছেন ‘ভেলপুরি মামা’। সেখানে জড়ো হয় শিক্ষার্থীরা। অনেক দিন পর বন্ধুকে সামনে পেয়ে আবেগের কাছে হার মানে স্বাস্থ্যবিধি। মাস্ক পরেই একে-অন্যকে জড়িয়ে ধরে পুরোনো স্মৃতিতে ফিরে যায় তারা।
আজ দিনের শুরুতে রাজধানী ঢাকা এবং ঢাকার বাইরের অনেক এলাকায় দেখা গেছে পথে পথে শিক্ষার্থীরা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের উদ্দেশে হেঁটে যাচ্ছে। কেউ অভিভাবকের সঙ্গে, কেউ দল বেঁধে সহপাঠীদের সঙ্গে; কেউ বা একা। তাদের পরনে স্কুল-কলেজের পোশাক, পিঠে ব্যাগ।
সম্ভাবনা ও শঙ্কার মধ্য দিয়ে আজ রোববার থেকে প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শ্রেণিকক্ষে পাঠদান শুরু হয়েছে।
তবে, গতকাল শনিবার দুপুরে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি সাংবাদিকদের বলেছেন, ‘করোনা সংক্রমণ কমে আসায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়া হয়েছে। তবে, সংক্রমণ বেড়ে গেলে আবারও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধের সিদ্ধান্ত নেওয়া হতে পারে।’ এর আগে একই ধরনের বার্তা দিয়েছিলেন স্বাস্থ্যমন্ত্রীও।
এদিকে, করোনার মধ্যে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলায় শিক্ষার্থীরা বিদ্যালয়ে বসে টিফিন খেতে পারবে না বলে জানিয়েছে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তর (মাউশি)। প্রতিষ্ঠানটির মহাপরিচালক ড. সৈয়দ মোহাম্মদ গোলাম ফারুক আরও বলেছেন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের আবাসিক শিক্ষার্থীদের হোস্টেল চালানোর জন্যও ১৪টি নির্দেশনা জারি করা হয়েছে। সেগুলো মেনেই হোস্টেল পরিচালনা করতে হবে।
গত ৫ সেপ্টেম্বর শিক্ষামন্ত্রীর সভাপতিত্বে মন্ত্রিপরিষদের উচ্চ পর্যায়ের বৈঠক সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়—দেশে করোনার সংক্রমণ দ্রুত কমে যাচ্ছে। জুলাই মাসের তুলনায় সংক্রমণ ৭০ শতাংশ কমেছে। এ অবস্থায় ১২ সেপ্টেম্বর থেকে প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শ্রেণিকক্ষে পাঠদান শুরু হবে। প্রথম দিন চার-পাঁচ ঘণ্টা ক্লাস হবে। পর্যায়ক্রমে এই ক্লাসের সংখ্যা বাড়বে। শ্রেণিকক্ষে পাঠদানকালে শিক্ষার্থী-শিক্ষকসহ সবাইকে মাস্ক পরিধান করতে হবে।
পরে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর (মাউশি) এবং প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর (ডিপিই) থেকে আলাদাভাবে স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিত করে পাঠদান কার্যক্রম পরিচালনাসহ বেশ কিছু সতর্কতা ও সচেতনতামূলক নির্দেশনা জারি করা হয়েছে।
অভিভাবকদের জন্য আট নির্দেশনা
মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তর (মাউশি) গত বৃহস্পতিবার নতুন এক নির্দেশনায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার পর স্বাস্থ্যবিধি মানার বিষয়ে মানসম্পন্ন কার্যপ্রণালিবিধি (এসওপি) ঠিক করে দিয়েছে। যেখানে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে প্রধান, শিক্ষক, শিক্ষার্থী, অভিভাবক, পরিচালনা কমিটি এবং মাঠ প্রশাসনের কর্মকর্তাদের জন্য মোট ৬৩টি নির্দেশনা রয়েছে। এগুলোর মধ্যে অভিভাবকদের আটটি বিষয় অনুসরণ করতে বলা হয়েছে। এগুলো হলো—সন্তানকে মাস্ক পরিয়ে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পাঠানো, শিক্ষার্থীদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পাঠাতে উৎসাহ দেওয়া, নিজ স্বাস্থ্য সম্পর্কে (পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা) সচেতন করা, প্রতিষ্ঠানে সঠিক সময়ে পাঠানো ও বাসায় আসা নিশ্চিত করা, সন্তান অথবা পরিবারের কোনো সদস্য করোনায় আক্রান্ত হলে অবিলম্বে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রধানকে জানানো, প্রতিষ্ঠানের নির্দেশনা অনুসরণ করা এবং স্কুলে যাওয়ার সময় পানি ছাড়া অন্য কোনো খাবার সন্তানের কাছে না দেওয়া এবং বাইরের খাবার না খাওয়ার বিষয়ে সন্তানকে সচেতন করা।
প্রাথমিকে দিনে তিনটি ক্লাস
মাধ্যমিক পর্যায়ে দিনে কয়টি ক্লাস হবে, তা মাউশি আগেই জানিয়েছে। এবার প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর জানিয়েছে, প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে দিনে তিনটি করে ক্লাস হবে। এই সময়সূচি সব প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পাঠানো হয়।
সময়সূচি অনুযায়ী, পঞ্চম শ্রেণিতে প্রতিদিন তিনটি করে ছয় দিন ক্লাস হবে। শনিবার চতুর্থ শ্রেণি, রোববার তৃতীয় শ্রেণি, সোমবার দ্বিতীয় শ্রেণি ও মঙ্গলবার প্রথম শ্রেণির ক্লাস হবে। সময়সূচিতে বাংলা, ইংরেজি ও গণিতের ওপর বেশি জোর দেওয়া হয়েছে। এই সূচি আপাতত ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত চলবে।