ঝিনাইদহে ভেটেরিনারি কলেজ শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ, সড়ক অবরোধ
ঝিনাইদহ সরকারি ভেটেরিনারি কলেজের তিন শতাধিক ছাত্রছাত্রীর শিক্ষাজীবন বিপন্নের পথে। তাই বিক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছে তারা। সড়ক অবোরধ ভাঙচুর ডিসি অফিস ঘেরাও স্মারকলিপি প্রদান, সরকারের পদস্থদের সঙ্গে দফায় দফায় করেছে বৈঠক। তবে, তাতে কাজে আসেনি বলে দাবি তাদের।
আজ বুধবার বিকেল ৪টা থেকে সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত ঝিনাইদহ-চুয়াডাঙ্গা সড়কে টায়ার জ্বালিয়ে বিক্ষোভ করেছে শিক্ষার্থীরা।
জানা গেছে, বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা অধ্যক্ষর বাসভবনে ব্যাপক ভাঙচুর করে কলেজের ফটকের সাইনবোর্ড খুলে আগুন ধরিয়ে দেয়।
ডক্টরস অব ভেটেরিনারি মেডিসিন (ডিভিএম) ডিগ্রিসহ সাত দফা দাবি আদায়ে গত জুন মাস থেকে ৫৩ দিন ধরে টানা আন্দোলন করে আসছে তারা। আন্তমন্ত্রণালয় সভায় ডিভিএম ডিগ্রি দেওয়ার বিষয়ে সিদ্ধান্ত হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু তেমন কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি।
বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, কলেজ কর্তৃপক্ষ তাদের সঙ্গে প্রতারণা করেছে। এ অবস্থায় চরম হতাশায় দিন কাটছে তাদের।
ব্ক্ষিুব্ধ শিক্ষার্থীরা সড়কে টায়ার জ্বালিয়ে অবরোধ করে বিভিন্ন স্লোগান দেয় এবং প্লাকার্ড নিয়ে বিক্ষোভ করে তারা। এর আগে কলেজ ক্যাম্পাসে অধ্যক্ষর বাসভবনের ফুলবাগান, ফটকসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ভবনে হামলা চালিয়ে ব্যাপক ভাঙচুর করে তারা। ফটকের বিশাল সাইনবোর্ড ভেঙে রাস্তায় নিয়ে আসে এবং পেট্রল ঢেলে তাতে আগুন ধরিয়ে দেয়। এ অবস্থায় চরম দুর্ভোগে পড়ে সড়কটি দিয়ে চলাচল করা দূরপাল্লারসহ বিভিন্ন যানবাহনের যাত্রীরা।
খবর পেয়ে ঝিনাইদহ সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সোহেল রানা ঘটনাস্থলে ছুটে যান। তিনি আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেন।
ওসি বলেন, ‘শিক্ষার্থীরা ডিভিএম ডিগ্রিসহ সাত দফা দাবি আদায়ে টানা আন্দোলন করে আসছে। এত দিন আশ্বাস দেওয়া হয়ে ছিল তাদের। কিন্তু, দাবি মেনে নেয়নি কর্তৃপক্ষ—এমন অভিযোগে রাস্তায় নেমেছে শিক্ষার্থী।’
ওসি আরও বলেন, ‘নানাভাবে বুঝিয়ে শান্ত করা হয়েছে তাদের। রাত ৮টার দিকে এক ঘোষণায় আগামী সোমবার পর্যন্ত চলমান আন্দোলন কর্মসূচি স্থগিত করে শিক্ষার্থীরা। এরপর ঝিনাইদহ-চুয়াডাঙ্গা সড়কে যান চলাচল স্বাভাবিক হয়ে আসে। এ সময় কলেজ কর্তৃপক্ষের কাওকে দেখা যায়নি। অধ্যক্ষ ঢাকাতে। অন্যরা মোবাইল ফোন বন্ধ করে লুকিয়ে পড়ে।’
সংশ্লিষ্টসূত্র জানায়, ঝিনাইদহ জেলা শহর থেকে ১০ কিলোমিটার পশ্চিমে ঝিনাইদহ-চুয়াডাঙ্গা মহাসড়কের নগরবাথান এলাকায় ২০১৩ সালের ৮ অক্টোবর সরকারি ভেটেরিনারি কলেজের কার্যক্রম শুরু হয়। ওই দিন বর্তমান প্রধানমন্ত্রী উদ্বোধন করেন। ২০১৩-১৪ শিক্ষা বর্ষে প্রথম ছাত্রছাত্রী ভর্তি করা হয়। এর আগে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের অধীনস্থ প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর একটি প্রকল্প গ্রহণ করে। ওই প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হয় ২০১৮ সালের ডিসেম্বরে।
বর্তমানে ছয়টি ব্যাচে ৩৫০ জন শিক্ষার্থী পড়ালেখা করছে। দেশের প্রাণিসম্পদ বিভাগে ভেটেরিনারি ডাক্তার তৈরির জন্য প্রতিষ্ঠানটি গড়ে তোলা হলেও নানা জটিলতায় শিক্ষার্থীরা হতাশ হয়ে পড়েছেন। কারণ, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান হিসেবে আজও স্বীকৃতি মেলেনি। প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হওয়ার কারণে অভিভাবকহীন হয়ে পড়ে প্রতিষ্ঠানটি। শিক্ষক সংকট এবং অর্থ সংকটে লেখাপড়ার পরিবেশ ভেঙে পড়ে।
ভর্তি বিজ্ঞপ্তিতে ডিভিএম ডিগ্রি দেওয়া কথা থাকলেও আজও সেটি করা হয়নি। যে কারণে ধীরে হতাশাগ্রস্ত শিক্ষার্থীরা আন্দোলনে নামে। প্রশাসনসহ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সঙ্গে দফায় দফায় বৈঠক করেও দাবি আদায় করতে পারেনি শিক্ষার্থীরা।