ঢাবিতে ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে ছাত্র অধিকারকর্মীকে মারধরের অভিযোগ
ছাত্র অধিকার পরিষদের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) শাখার কর্মী তারেক রেজাকে রাস্তা থেকে তুলে ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ হলে নিয়ে মারধরের অভিযোগ উঠেছে ঢাবি ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক তানভীর হাসান সৈকতের কয়েকজন অনুসারীর বিরুদ্ধে।
গতকাল বৃহস্পতিবার (২ ফেব্রুয়ারি) টিএসসিতে কাওয়ালি গানের ব্যান্ড ‘সিলসিলা’র প্রতিষ্ঠাতা লুৎফর রহমানের ওপর ছাত্রলীগের হামলার প্রতিবাদ মিছিল থেকে বাসায় ফেরার সময় শহীদুল্লাহ হলের সামনে রাত ৯টার দিকে এ ঘটনা ঘটে।
ঘটনার ভুক্তভোগী ওই শিক্ষার্থী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের ও হাজী মুহম্মদ মুহসীন হলের আবাসিক ছাত্র। তিনি ছাত্র অধিকার পরিষদের সাংগঠনিক কোনো দায়িত্বে না থাকলেও তাকে বিভিন্ন সময় ওই সংগঠনের বিভিন্ন কর্মসূচিতে অংশ নিতে দেখা গেছে।
ঘটনা প্রসঙ্গে ভুক্তভোগী তারেক রেজা বলেন, ‘রাত ৯টার দিকে আমাকে শহীদুল্লাহ হলের সামনে থেকে কয়েকজন ধরে নিয়ে যায়। পরে জিজ্ঞাসাবাদ করে এবং জোরপূর্বক স্বীকারোক্তি নেয়। ৮ থেকে ১০ জন ছাত্রলীগ নেতাকর্মী প্রায় এক ঘণ্টা আমাকে হেনস্তা ও মারধর করে। পরে দুজন শিক্ষক আসার পর তারা আমাকে ছেড়ে দেয়। আমার পুরো শরীরে ব্যথা হয়ে গেছে।’
তারেক রেজার এক সহপাঠী এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘তারেককে শহীদুল্লাহ হলে ছাত্রলীগের কর্মীরা আটকে রেখে ঘন্টাখানেক নির্যাতন করেছে। তারা কিল, ঘুষি মারার পাশাপাশি বেল্ট ও স্টাম্প দিয়ে আঘাত করেছে। কোমর, হাত এবং পিঠসহ তার পুরো শরীরে আঘাত করা হয়েছে। এ ঘটনার সঙ্গে ঢাবি ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক তানভীর হাসান সৈকতের অনুসারীরা সম্পৃক্ত রয়েছে। তাদের মধ্যে জহুরুল হক হলের রাব্বি এবং শহিদুল্লাহ হলের বায়েজিদকে তাৎক্ষণিকভাবে শনাক্ত করা গেছে।’
ছাত্র অধিকার পরিষদ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাবেক সহসভাপতি আসিফ মাহমুদ বলেন, ‘বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় কাওয়ালি গানের ব্যান্ড ‘সিলসিলা’র প্রতিষ্ঠাতা লুৎফর ভাইয়ের ওপর ছাত্রলীগের নৃশংস হামলার প্রতিবাদে আমরা রাত ৯টার দিকে একটি প্রতিবাদ মিছিল করেছিলাম। সেই প্রতিবাদ মিছিলে তারেক রেজা ছিল। মিছিল থেকে যাওয়ার সময় চানখারপুলের দিকে যাওয়ার জন্য শহীদুল্লাহ হলের গেট পর্যন্ত গেলে ছাত্রলীগের কিছু কর্মী তাকে শহীদুল্লাহ হলে নিয়ে যায়। তাকে ধরে নেওয়ার সময় ছাত্রলীগের কর্মীদের মধ্যে শহীদুল্লাহ হলের বায়েজিদ ও জহুরুল হক হলের রাব্বিও ছিল। এই দুজনকে আপাতত শনাক্ত করা গেছে। তাকে ওই হলে নেওয়ার পর স্টাম্প এবং বেল্ট দিয়ে এলোপাতাড়ি মারধর করে ছাত্রলীগের কর্মীরা। এ সময় তাকে ঘণ্টাখানেক আটকে রাখে, হুমকি দেয় এবং জিজ্ঞাসাবাদ করে। মারধর করে ছেড়ে দেওয়ার পর আমরা তাকে প্রাইভেট হাসপাতালে নিয়ে জরুরি চিকিৎসা দেওয়ার ব্যবস্থা করি।’
শহীদুল্লাহ হল শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক শরীফ আহমেদ মুনীম এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘আমি শুনলাম তারেক নামের এক শিক্ষার্থীকে হলে ডেকে আনা হয়েছিল। তবে তাকে মারধর করার মতো কিছু ঘটেনি। সে নাকি ছাত্র অধিকার পরিষদের সঙ্গে জড়িত। এ জন্য মূলত জিজ্ঞাসাবাদের জন্য হলে এনেছিল শিক্ষার্থীরা। পরে দুজন আবাসিক শিক্ষক আসলে তাকে ছেড়ে দেওয়া হয়।’
এ প্রসঙ্গে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক তানভীর হাসান সৈকত এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘এ ব্যাপারে আমি কিছু জানি না। আমার কোনো অনুসারী এ রকম কাজ করে নাই। এগুলো সব বানোয়াট ও উদ্ভট অভিযোগ। এগুলো সব নুরু ইচ্ছা করে করতেছে। নুরুর সঙ্গে আমার ব্যক্তিগত ঝামেলা ছিল। এ জন্য আমাকে ঝামেলায় ফেলার জন্য এগুলো করতেছে। আমার কোনো অনুসারী বা ছাত্রলীগের সঙ্গে সম্পৃক্ত কেউ এ রকম কিছু করে নাই।’
ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ জাবেদ হোসেন এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘এক ছেলেকে হলে আনা হয়েছে এ রকম তথ্য পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই আমি দুইজন হাউজ টিউটর পাঠিয়েছি। তারপর তারা গিয়ে ওই ছেলেকে রিকশায় তুলে বাসায় পাঠানোর ব্যবস্থা করেছে।’