ঢাবির সিন্ডিকেট নির্বাচনে সব পদেই নীল দলের নিরঙ্কুশ জয়
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম সিন্ডিকেটের একাডেমিক কাউন্সিল ও ফাইন্যান্স কমিটির শিক্ষক প্রতিনিধি নির্বাচনে সিন্ডিকেটের ছয়টি পদ, একাডেমিক কাউন্সিলের ছয়টি এবং ফাইন্যান্স কমিটির একটি পদের সবগুলোতেই নিরঙ্কুশ বিজয় অর্জন করেছে ক্ষমতাসীন আওয়ামীপন্থী শিক্ষকদের সংগঠন নীল দলের প্রার্থীরা। অন্যদিকে বিএনপি-জামায়াতপন্থী শিক্ষকদের সংগঠন সাদা দল থেকে কোনো পদেই কেউ জয়ী হতে পারেননি।
মঙ্গলবার (১৩ সেপ্টেম্বর) সকাল ৯টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের নবাব নওয়াব আলী চৌধুরী সিনেট ভবনে ভোট গ্রহণ শেষে বিকেল ৩টায় ফল ঘোষণা করেন নির্বাচনের কমিশনার, বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. মমতাজ উদ্দিন আহমেদ। এসময় নির্বাচনে মোট ২ হাজার ৪২৫ জন ভোটারের মধ্যে ১ হাজার ২৫৯ জন ভোট দিয়েছেন বলে তিনি জানান।
সিন্ডিকেট শিক্ষক নির্বাচনে প্রভোস্ট ক্যাটাগরিতে হাজী মুহম্মদ মুহসীন হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. মাসুদুর রহমান ৭৭৫ ভোট, অধ্যাপক পদে ঢাবি শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক নিজামুল হক ভূইয়া ৭৯৮ ভোট, সহযোগী অধ্যাপক পদে লোকপ্রশাসন বিভাগের আবু হোসেন মুহম্মদ আহসান ৮৮৫ ভোট, সহকারী অধ্যাপক পদে তথ্যবিজ্ঞান ও গ্রন্থাগার ব্যবস্থাপনা বিভাগের মোহাম্মদ শরিফ উল ইসলাম ৭৮৬ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছেন।
এছাড়া সাদা দলের প্রার্থী না থাকায় ডিন পদে নীল দলের আহ্বায়ক অধ্যাপক ও বিজ্ঞান অনুষদের ডিন অধ্যাপক আব্দুস ছামাদ এবং প্রভাষক পদে উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগের মাহিন মোহিদ বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন।
একাডেমিক পরিষদে তিনজন সহযোগী অধ্যাপক কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ড. ইসমাত রহমান ৮০৩, আধুনিক ভাষা ইনস্টিটিউটের বিপুল চন্দ্র দেবনাথ ৬৭৬ ও দর্শন বিভাগের মন্দিরা চৌধুরী ৭৩২, সহকারী অধ্যাপক পদে দুজন ওষুধ প্রযুক্তি বিভাগের ড. আ স ম মনজুর আল হোসেন ৮৭৮ ও আইন বিভাগের এ বি এম আশরাফুজ্জামান ৮৫১ এবং আবহাওয়া বিজ্ঞান বিভাগের প্রভাষক মো. মমিন ইসলাম ৭৫১ ভোট পেয়ে জয়ী হয়েছেন।
এ ছাড়া ফাইন্যান্স কমিটিতে ফলিত গণিত বিভাগের অধ্যাপক ও সিনেট সদস্য অধ্যাপক ড. মো. শফিকুল ইসলাম ৭০৭ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছেন।
অন্যদিকে, সাদা দলে প্রভোস্ট ক্যাটাগরিতে স্যার পি জে হার্টগ ইন্টারন্যাশনাল হলের প্রাধ্যক্ষ এবং ব্যবসায় প্রশাসন ইনস্টিটিউটের (আইবিএ) অধ্যাপক ড. মো. মহিউদ্দিন ৪২০ ভোট, অধ্যাপক ক্যাটাগরিতে পরিসংখ্যান বিভাগের অধ্যাপক ও সিনেট সদস্য মো. লুৎফর রহমান ৪২০ ভোট, সহযোগী অধ্যাপক পদে অ্যাকাউন্টিং অ্যান্ড ইনফরমেশন সিস্টেমস বিভাগের আল-আমিন ৩২৪ ভোট, সহকারী অধ্যাপক পদে বিশ্বধর্ম ও সংস্কৃতি বিভাগের ড. শাফী মো. মোস্তফা ৩৭২ ভোট পেয়েছেন।
একাডেমিক পরিষদে সাদা দলের সহযোগী অধ্যাপক পদে মৃৎশিল্প বিভাগের দেবাশীষ পাল ৩০৪ ভোট, অ্যাকাউন্টিং অ্যান্ড ইনফরমেশন সিস্টেমস বিভাগের ড. মো. সাইফুল আলম ৪৩১ ভোট, মনোবিজ্ঞান বিভাগের সৈয়দ তানভীর রহমান ৪০৯ ভোট আর সহকারী অধ্যাপক বা প্রভাষক পদে মার্কেটিং বিভাগের আলী মোহাম্মদ কাওসার ৪২২ ভোট পেয়েছেন। এছাড়া ফাইন্যান্স কমিটিতে ফিন্যান্স বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী ৪৫৬ ভোট পেয়েছেন।
নির্বাচনের ফলাফল ঘোষণার পর নীল দলের আহ্বায়ক অধ্যাপক ড. আব্দুস ছামাদ গণমাধ্যমকে বলেন, ‘বর্তমান সরকারের সময় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে যে একাডেমিক ডেভেলপমেন্ট হয়েছে, এ বিজয় তার স্বীকৃতি। মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের শক্তির প্রতি আমাদের মেধাবী শিক্ষকদের যে আস্থা, তা প্রমাণিত হয়েছে। মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের শক্তির বিকল্প যে অন্য কেউ নেই, এটা তার বহিঃপ্রকাশ। ১৯৮৩ সালের পর এই প্রথম আমাদের নীল দল পূর্ণ প্যানেলে জয়ী হয়েছে।’
উল্লেখ্য, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অধ্যাদেশ, ১৯৭৩ এর আর্টিক্যাল ২৩ (১) (ডি) এবং ২৩ (২) অনুযায়ী সিন্ডিকেটে ৬ ক্যাটাগরিতে সিন্ডিকেট সদস্য নির্বাচিত হন। নিয়মানুযায়ী ক্যাটাগরিগুলো হলো ডিন, প্রভোস্ট, অধ্যাপক, সহযোগী অধ্যাপক, সহকারী অধ্যাপক ও প্রভাষক। এ ছয় ক্যাটাগরির প্রতিটি পদ থেকে একজন করে নির্বাচিত হয়ে থাকেন। এছাড়া সিন্ডিকেটে শিক্ষক প্রতিনিধি ছাড়া একাডেমিক কাউন্সিলের দুটি ক্যাটাগরিতে ছয়টি পদে ও ফাইন্যান্স কমিটির একটি পদে নির্বাচন হয়।