নানা সমালোচনায় শেষ হলো ঢাবির ৫৩তম সমাবর্তন
করোনা মহামারির কারণে দীর্ঘ বিরতির পর সংঘটিত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ৫৩তম সমাবর্তন নানা সমালোচনার মধ্য দিয়ে শেষ হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় খেলার মাঠে আজ শনিবার (১৯ নভেম্বর) দুপুর ১২টায় শুরু হয়ে বেলা ২টা পর্যন্ত চলা এ সমাবর্তনে রাষ্ট্রপতি ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চ্যান্সেলর মো. আবদুল হামিদ সভাপতিত্ব করেন এবং নোবেলজয়ী ফরাসি অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক ড. জ্যাঁ তিরোল সমাবর্তন বক্তা হিসেবে উপস্থিত ছিলেন।
জানা যায়, সমাবর্তনের কয়েকদিন আগেই প্রশাসন নিবন্ধিতদের টুপি-গাউন, টাই ও অন্যান্য উপহারসামগ্রী বিতরণ শুরু করে। প্রতিবার বিশ্ববিদ্যালয়ের লোগো ও নাম সংবলিত কাপড় বা পাটের তৈরি বিশেষ পরিবেশবান্ধব ব্যাগে সেগুলো সরবরাহ করা হলেও এবার কয়েকটি বিতরণ কেন্দ্র থেকে তা দেওয়া হয় পলিথিনের ব্যাগে। এ নিয়ে শিক্ষার্থীদের মধ্যে এক ধরনের ক্ষোভের সৃষ্টি তৈরি হয়। বয়ে যায় সমালোচনার ঝড়। যদিও এ বিষয়ে গত বৃহস্পতিবার (১৭ নভেম্বর) এক সংবাদ সম্মেলনে উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান দুঃখ প্রকাশ করে বলেছিলেন, ‘পলিথিন ব্যবহার অনাকাঙ্ক্ষিত, এটি কোনোভাবেই কাম্য নয়। দুটি ভেন্যুতে অসতর্কতাবশত এটি ঘটে গেছে, এজন্য আমরা দুঃখিত। ভবিষ্যতে ইনভাইটেশনের কার্ডে পলিথিনের যে প্রলেপ দেওয়া হয়, সেটিও বন্ধ করা হবে।’
অন্যদিকে নিবন্ধিতদের প্রদান করা টাইয়ের পেছনে উল্লিখিত লেখায়ও ধরা পড়েছে ভুল। এতে ইংরেজি ভাষায় শুদ্ধ ফিফটি থার্ড (53rd) শব্দের পরিবর্তে ভুলভাবে ফিফটিথ্রির পর টিএইচ (53th) মুদ্রিত হয়। এ নিয়ে এসব উপহারসামগ্রী ব্যবস্থাপনা নিয়ে বিভিন্ন মহল থেকে প্রশ্ন তোলা হয়। এ ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য দুঃখ প্রকাশ করে বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ে এটি কখনই কাম্য হতে পারে না। সরবরাহকারীরা এই ভুল করেছে, আমরা তাদের কাছে জবাব চেয়েছি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে এই ধরনের ভুলের ব্যাপারে জিরো টলারেন্স নীতিতে বিশ্বাসী।’
আবার এবারের সমাবর্তন উপলক্ষে ‘দাদা মেটাল প্রসেস’ নামে একটি প্রতিষ্ঠানকে ১৭১টি স্বর্ণপদক তৈরি ও সরবরাহের অর্ডার দেওয়া হয়। প্রতিটি স্বর্ণপদকে স্বর্ণের ওজন সাড়ে চার গ্রাম করে থাকবে বলে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে নির্ধারণ করে দেওয়া হয়। পদক তৈরির পর এদের ৩৫টি স্বর্ণপদকের স্বর্ণের ওজন ও খাঁটিত্ব (ক্যারেট) পরীক্ষার জন্য বাংলাদেশ পরমাণু শক্তি কমিশনে পাঠানো হলে ৩৩টি স্বর্ণপদকেই গরমিল পাওয়া যায়।
এই ৫৩তম সমাবর্তনে অংশগ্রহণকৃত মাস্টার্সের শিক্ষার্থীদের জন্য চার হাজার এবং স্নাতকের শিক্ষার্থীদের জন্য তিন হাজার টাকা ফি নির্ধারণ করা হয়। এছাড়া এমবিবিএস/বিডিএস পাঁচ হাজার এবং সান্ধ্যাকালীন কোর্সের শিক্ষার্থীদের জন্য সাত হাজার টাকা নির্ধারণ করা হয়। এর সাথে আরও বিবিধ খরচ বাবদ ৩২০ টাকা অতিরিক্ত দেওয়ার জন্য বলা হয়। অধিভুক্ত সাত কলেজের সমাবর্তন প্রত্যাশীদের জন্যও সমপরিমাণ টাকা ফি ধরা হয়। এ নিয়ে সমাবর্তন প্রত্যাশী শিক্ষার্থীদের মাঝে এক ধরনের অসন্তোষ দেখা দেয়।
এবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্র্যাজুয়েট ও উপাদানকল্প কলেজ ও ইনস্টিটিউটের গ্র্যাজুয়েটদের সমাবর্তনের মূল ভেন্যু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় খেলার মাঠ থাকলেও অধিভুক্ত সরকারি সাত কলেজের গ্র্যাজুয়েটদেরকে ডিজিটাল প্রযুক্তির (লাইভ স্ক্রিন) মাধ্যমে ঢাকা কলেজ ও ইডেন কলেজ ভেন্যু থেকে সরাসরি সমাবর্তন অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণের জন্য বলা হয়। তারা বিগত ৫১তম ও ৫২তম সমাবর্তনেও একইভাবে স্ক্রিনে লাইভ ভিডিওয়ের মাধ্যমে সমাবর্তনে অংশ নিয়েছিলেন। এর বিরোধিতা করে আলাদা সমাবর্তনের দাবি জানিয়েছিলেন অধিভুক্ত সরকারি সাত কলেজের অনেক শিক্ষার্থীই। এরই ধারাবাহিকতায় এবারও ৫৩তম সমাবর্তনের তারিখ ঘোষণার পর এ ‘স্ক্রিন সমাবর্তন’বয়কট করে সরাসরি আলাদাভাবে সমাবর্তনের দাবি নিয়ে বিভিন্ন কর্মসূচি ঘোষণা করে মাঠে নামেন তারা।
উল্লেখ্য, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এ ৫৩তম সমাবর্তনে মোট ৩০ হাজার ৩৪৮ জন গ্র্যাজুয়েট ও গবেষক অংশগ্রহণের জন্য রেজিস্ট্রেশন করেন। এদের মধ্যে মোট ২২,২৮৭ জন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্র্যাজুয়েট এবং ৭,৭৯৬ জন অধিভুক্ত সাত কলেজের গ্র্যাজুয়েট। তন্মধ্যে ১৩১ জন কৃতী শিক্ষক, গবেষক ও শিক্ষার্থীকে ১৫৩টি স্বর্ণপদক, ১৯৭জনকে পিএইচডি, ২ জনকে ডিবিএ এবং ৩৫ জনকে এমফিল ডিগ্রি প্রদান করা হয়। এছাড়া সমাবর্তনের প্রধান বক্তা অধ্যাপক ড. জ্যাঁ তিরোলকে সম্মানসূচক ডক্টরেট ডিগ্রি Doctor of Laws (Honoris Causa) প্রদান করা হয়।