প্রশাসনকে উপেক্ষা করে নির্মাণাধীন ভবনের নাম দিলেন রাবি শিক্ষার্থীরা
প্রশাসনের আশ্বাস উপেক্ষা করে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) নির্মাণাধীন একাডেমিক ভবনের নাম দিয়ে সাইনবোর্ড ঝুলিয়েছেন চারুকলার শিক্ষার্থীরা। প্রথমে শিক্ষার্থীরা ‘মাহমুদ হাবিব হিমেল একাডেমিক ভবন’ দিলেও পরবর্তীতে তা পরিবর্তন করে শিক্ষার্থীরা নাম দিয়েছেন ‘শহীদ মাহমুদ হাবিব হিমেল একাডেমিক ভবন’।
আজ সোমবার দুপুর ১২টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ হবিবুর রহমান হলের সামনে এ সাইনবোর্ড টানান তাঁরা।
গত পহেলা ফেব্রুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয়ে নির্মাণাধীন একাডেমিক ভবনের নির্মাণসামগ্রী বহন করা একটি ট্রাকের নিচে চাপা পড়ে ঘটনাস্থলেই মারা যান মাহমুদ হাবিব হিমেল৷ এ ঘটনার পর থেকে ওই ভবনের নামকরণ হিমেলের নামে করার দাবি জানান শিক্ষার্থীরা৷ সেই দাবিও মেনে নিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
চারুকলা অনুষদের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী ইমরান বলেন, প্রশাসন তো লাগাচ্ছে না। আমরা তো দেখছি না৷ তবে আমরা চাচ্ছি যে জায়গার নামটা এভাবেই হোক৷ আমরা চাই একাডেমিক ভবনের নামটা এভাবেই সবাই জানুক। তাহলে এ ভবনের নাম হিমেলের নামে দিতে সুবিধা হবে৷
এক প্রশ্নের জবাবে ইমরান বলেন, ‘অবশ্যই একটি ভবনের নাম দেওয়ার জন্য কিছু প্রক্রিয়া অনুসরণ করা হয়। কিন্তু তা বাস্তবায়নের জন্য আমরা বলছি। প্রশাসন সেটা হবে হবে বলছে। তাই আমরা অপেক্ষা না করে এই সাইনবোর্ড দিয়েছি। প্রশাসনের আশ্বাসে আমরা ভরসা পাচ্ছি না। তবে এখনো আশা রাখছি।’
চারুকলা অনুষদের মাস্টার্সের শিক্ষার্থী শাকিলা খাতুন বলেন, এখানে আসলে ‘শহীদ’ শব্দটি মিসিং হয়ে গেছে। যুদ্ধের ময়দানে যারা মারা যান তাঁদেরকে শহীদ বলা হয়। হিমেল একজন শহীদ। বিশ্ববিদ্যালয় তো রাষ্ট্রীয়ভাবে পরিচালিত হয়। তাই হিমেল একজন রাষ্ট্রীয় শহীদ। আমরা দীর্ঘদিন ধরে আমাদের নিরাপত্তা নিশ্চিতের জন্য আন্দোলন করেছি। কিন্তু আমরা মনে করি না যে, প্রশাসন আমাদের নিরাপত্তার ব্যবস্থা করতে পারছে। বিভিন্নভাবে যে আমরা অনিরাপদ তার অনেক দৃষ্টান্ত আছে। আমরা চুরি-ছিনতাইয়ের শিকার হই৷ এমনকি স্থানীয় রাজনৈতিক ব্যক্তিরাও আমাদের ভিসিদের পর্যন্ত হেনস্তা করে গেছেন৷ সেক্ষেত্রে আমরাও নিরাপদ ছিলাম না আর প্রশাসনও আমাদের প্রতি আন্তরিক ছিল না। শিক্ষার্থীদের প্রতি প্রশাসনের যে দায়িত্ব-জ্ঞানহীনতা, তারই শহীদ হলেন হিমেল।’
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক সুলতান-উল-ইসলাম বলেন, বিষয়টা এমন না যে বললাম আর হয়ে গেল। এটা সময় সাপেক্ষ ব্যাপার। হিমেল শুধু আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের নয়, সে পুরো দেশের। কারণ যে প্রকল্পের কাজ চলছে সেটা প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে অনুমোদিত। আর সেই প্রকল্পের কোনো একটি ভবনের নাম দেওয়ার জন্য অবশ্যই তাঁর অনুমতি লাগবে। তবে সেজন্য আমরা কাজ করে যাচ্ছি। শিক্ষার্থীরা উপাচার্যের কথায় আশ্বস্ত হতে পারতো। এটা নিয়ে তাড়াহুড়ো করলে তো হ য ব র ল হয়ে যাবে। আমরাও চাই ভবনটি হিমেলের নামেই হোক৷’
হিমেল আসলে ‘শহীদ’ কিনা এমন প্রশ্নের উত্তরে অধ্যাপক সুলতান-উল-ইসলাম বলেন, ‘এটা তো বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো সাইনবোর্ড নয়। যারা এই সাইনবোর্ডটি টানিয়েছেন তাঁদের কাছে এ প্রশ্ন করুন। সেটা তারাই বলতে পারবেন।’