বিবাহিত ও অছাত্রদের নিয়ে চলছে রাবি ছাত্রলীগ
২০১৬ সালে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় (রাবি) শাখা ছাত্রলীগের প্রাথমিক কমিটি ঘোষণার ছয় মাস পর পূর্ণাঙ্গ কমিটির অনুমোদন দেয় কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ। এক বছর মেয়াদি এই কমিটির মেয়াদ শেষ হলে মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটি নিয়ে চার বছর ধরে চলছে রাবি ছাত্রলীগ। ফলে কমিটির অনেকেরই বর্তমানে ছাত্রত্ব নেই, কেউ কেউ বিয়ে করেছেন এবং পড়াশোনা শেষ করে চাকরিও করছেন। সব মিলিয়ে ক্যাম্পাস ছেড়েছেন ২৫১ সদস্য বিশিষ্ট কমিটির দেড়শতাধিক নেতা।
দীর্ঘদিন সম্মেলন না হওয়ায় পদপ্রত্যাশী ছাত্রলীগের নেতাদের দলীয় বিভক্তি ও অন্তকোন্দল বেড়েই চলেছে। ভেঙে পড়ছে সাংগঠনিক কাঠামো। সাপ্তাহিক মিছিল-মিটিং ও জাতীয় কার্যক্রমের বাহিরে শিক্ষার্থীদের অধিকার আদায়ের আন্দোলনে এই ছাত্র সংগঠনের ভূমিকা নেই বললেই চলে। ফলে অনেক দিন ধরে সংগঠনের সঙ্গে থেকে নিজের রাজনৈতিক পরিচয় তৈরি করতে না পেরে হতাশা নিয়ে রাজনীতি ছাড়ছেন সক্রিয় নেতাকর্মীরা।
এদিকে, সম্মেলনের দাবিতে গতকাল রোববার ক্যাম্পাসে মিছিল করেছেন নতুন কমিটির পদ প্রত্যাশীরা। মিছিল শেষে মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটির সঙ্গে জাতীয় প্রোগ্রাম ছাড়া অন্য কার্যক্রমে অংশ না নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন তারা।
বাংলাদেশ ছাত্রলীগের গঠনতন্ত্রের ৫ নম্বর ধারার ‘গ’ উপ-ধারায় বলা আছে, ‘সরকারি চাকুরিতে নিয়োজিত কোনো ছাত্র ছাত্রলীগের কর্মকর্তা হতে পারবে না। চলতি কার্যকালের মধ্যে কারো ছাত্রজীবন ব্যত্যয় দেখা দিলে নির্বাহী সংসদ তার সদস্যপদ বাতিল বা মেয়াদ পর্যন্ত বহাল রাখতে পারবে।’
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, রাবি শাখা ছাত্রলীগের ২৫১ সদস্য বিশিষ্ট কমিটির দেড় শতাধিক নেতাকর্মী এখন ক্যাম্পাস রাজনীতির বাহিরে। যাদের মধ্যে সহসভাপতি, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক, একজন সাংগঠনিকসহ বিভিন্ন সম্পাদক ও উপসম্পাদক মিলে ২৫ জনেরও বেশি নেতা বর্তমানে বিবাহিত। এছাড়া চাকরিতে প্রবেশ করেছেন প্রায় ত্রিশ জন সিনিয়র নেতাকর্মী। এদের মধ্যে সম্প্রতি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য দেওয়া অবৈধ নিয়োগেও চাকরি পেয়েছেন ছাত্রলীগের বেশ কয়েকজন নেতা। শুধু তাই নয়, বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়াশোনা শেষ করে ক্যাম্পাস ত্যাগ করেছেন শতাধিক নেতাকর্মী।
জানা যায়, ২০১৬ সালের ৮ ডিসেম্বর বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের ২৫তম সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। পরে ১১ ডিসেম্বর গোলাম কিবরিয়াকে সভাপতি ও ফয়সাল আহমেদ রুনুকে সাধারণ সম্পাদক করে রাবি ছাত্রলীগের ১৩ সদস্যের প্রাথমিক কমিটি ঘোষণা করা হয়। প্রাথমিক কমিটির প্রায় ছয় মাস পর পূর্ণাঙ্গ কমিটির অনুমোদন দেয় কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ। ২০১৭ সালে এই কমিটির মেয়াদ শেষ হয়েছে।
মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটির উপ-ধর্মবিষয়ক সম্পাদক ও পদ প্রত্যাশী তৌহিদ দুর্জয় বলেন, ‘এক কমিটি দিয়ে পাঁচ বছর চলছে একটি গুরুত্বপূর্ণ শাখার কার্যক্রম। জাতীয় প্রোগ্রাম ছাড়া এই কমিটির সঙ্গে আমরা আর কোনো কাজ করব না। নতুন বছরের জানুয়ারি মাসেই আমরা নতুন সম্মেলন চাই।’
নতুন কমিটিতে পদ প্রত্যাশী ও বর্তমান কমিটির সহসভাপতি মেজবাহুল ইসলাম বলেন, ‘একটি স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় ছাত্রলীগের সম্মেলন ও নতুন কমিটি হওয়ার কথা। নেতৃত্ব বিকাশের ক্ষেত্রে ও সাংগঠনিক দুর্বলতা কাটিয়ে উঠার জন্য নতুন কমিটি হওয়া বেশ প্রয়োজন। কারণ দীর্ঘদিন অনেকে রাজনীতি করে যারা কোনো পরিচয় পায়নি তারা চরমভাবে হতাশ। ফলে তারা একে একে ক্যাম্পাস ছেড়ে চলে যাচ্ছেন। এই পরিস্থিতিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন কমিটি গঠনের প্রক্রিয়া শুরু হওয়া অতি জরুরি।’
সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ফয়সাল আহমেদ রুনু বলেন, ‘বর্তমানে কমিটির অনেকেই ক্যাম্পাসে রয়েছেন। কমিটি দেওয়ার সময় যারা তখন সিনিয়র ছিল এবং দীর্ঘদিন রাজনীতি করেছেন তাদের এই কমিটিতে মূল্যায়ন করা হয়েছে। কিন্তু তারা পড়াশোনা শেষ করে কিছুদিন পর চলে গেছেন।’
বিবাহিত, সরকারি চাকরিজীবী ও অছাত্রদের বিষয়ে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগকে জানানো হয়েছে কিনা জানতে চাইলে ফয়সাল আহমেদ রুনু বলেন, ‘এটা সেন্ট্রালে জানানোর বিষয় না। যাদের পড়াশোনা শেষ তারা চলে যাবে, এটাই স্বাভাবিক। হয়তো অনেকেই বিয়ে করেছেন। যেহেতু তারা অনেকদিন ক্যাম্পাসে রাজনীতি করেছেন তাই সেই জায়গা থেকে এখনও আমাদের সঙ্গে আছেন।’
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি গোলাম কিবরিয়া বলেন, ‘দীর্ঘদিন করোনায় বন্ধের পর ক্যাম্পাস খুলেছে। করোনার আগে আমরা হল সম্মেলন করতে চেয়েছিলাম। কিন্তু তখন সম্ভব হয়নি। দ্রুত সময়ের মধ্যে হল সম্মেলনের বিষয়ে আমরা কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ ও রাজশাহীর মেয়র এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটনের সঙ্গে কথা বলেছি। পরবর্তীতে তাদের সিদ্ধান্ত অনুসারে বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সম্মেলনের আয়োজন করব।’
রাবি শাখা ছাত্রলীগের নতুন সম্মেলনের বিষয়ে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয় শাখার দায়িত্বপ্রাপ্ত ও কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের মুক্তিযোদ্ধা ও গবেষণা বিষয়ক সম্পাদক মেহেদী হাসান তাপস বলেন, ‘করোনার কারণে আসলে সম্মেলন প্রক্রিয়া দীর্ঘ হয়ে গেছে। তবে জানুয়ারিতে সংগঠনের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী শেষ করে দায়িত্বপ্রাপ্তরা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে সশরীরে যাব। তারপর ক্যাম্পাসের পরিবেশ বিবেচনা করে দ্রুতই সম্মেলনের তারিখ নির্ধারণ করা হবে। তবে সেটি জানুয়ারির মধ্যেই হবে।’