রাবিতে খেলা নিয়ে সংঘর্ষে শিক্ষক লাঞ্ছিত, তদন্ত কমিটি গঠন
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে (রাবি) আন্তঃবিভাগ ফুটবল খেলা নিয়ে দুই বিভাগের মধ্যে সংঘর্ষ হয়েছে। এ সময় ভেটেরিনারি অ্যান্ড অ্যানিমেল সায়েন্স বিভাগের এক শিক্ষককে লাঞ্ছিতের অভিযোগ উঠেছে ব্যবসায় প্রশাসন ইনস্টিটিউট (আইবিএ) শাখা ছাত্রলীগের এক নেতার বিরুদ্ধে। আজ রোববার সকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ হবিবুর রহমান হল মাঠে দুই বিভাগের মধ্যকার খেলা শেষে এ ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় তদন্ত কমিটি গঠন করেছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।
এদিকে, দুপুরের দিকে শিক্ষককে লাঞ্ছিতের প্রতিবাদে বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃষি অনুষদ ভবনের প্রধান ফটকে তালা লাগিয়ে মানববন্ধন করেন ভেটেরিনারি অ্যান্ড অ্যানিমেল সায়েন্সেস বিভাগের শিক্ষার্থীরা। পরে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক আসাবুল হক ও ছাত্র উপদেষ্টা এম তারেক নূর ঘটনাস্থলে উপস্থিত হন এবং শিক্ষার্থীদের আশ্বস্ত করেন। পরে ভুক্তভোগী শিক্ষক, বিভাগের চেয়ারম্যান ও কয়েকজন ছাত্রকে নিয়ে আলোচনায় বসেন বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা যায়, আজ সকাল ৯টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তঃবিভাগ টুর্নামেন্টের ব্যবসায় প্রশাসন ইনস্টিটিউট (আইবিএ) ও ভেটেরিনারি অ্যান্ড অ্যানিমেল সায়েন্স বিভাগের মধ্যকার ম্যাচটি ড্র হয়। পরে টাইব্রেকারের সময় প্রথম দুটি করে শট নিয়ে উভয় পক্ষই গোল করেন। পরবর্তী শটে রেফারির বাঁশি বাজানোর আগেই শট নেন ভেটেরিনারি বিভাগের খেলোয়াড় রিয়াদ। সেই শট জালে ভীড়তে দেননি আইবিএয়ের গোলরক্ষক। তবে, বাঁশি বাজানোর আগেই কিক দেওয়ায় রেফারি ওই শটটি বাতিল ঘোষণা করেন। কিন্তু এ সিদ্ধান্ত না মেনে রেফারিকে অবরুদ্ধ করেন আইবিএয়ের খেলোয়াড়রা।
হট্টগোলের সময় আইবিএয়ের এক শিক্ষক এবং ভেটেরিনারি বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক ড. মোইজুর রহমান ঘটনাস্থলে উপস্থিত হন। সেখানে আইবিএয়ের এক খেলোয়াড় অধ্যাপক মোইজুর রহমানকে ধাক্কা দেন। এ নিয়ে উভয় দলের খেলোয়াড়দের মধ্যে হাতাহাতি শুরু হয়। পরে সেখানে ওই শিক্ষকের টি-শার্টের কলার ধরে টানা হেঁচড়া করেন আইবিএ শিক্ষার্থীরা। এ সময় আইবিএয়ের প্রভাষক আনাম শাহরিয়ার রাব্বীকে মারতে যান ভেটেরিনারি বিভাগের শিক্ষার্থীরা। তবে, তাঁর গায়ে হাত দেননি।
সংঘর্ষের একটি ভিডিও ফুটেজ এই প্রতিবেদকের কাছে সংরক্ষিত রয়েছে। ভিডিওতে দেখা যায়, অধ্যাপক ড. মোইজুর রহমানের জার্সির কলার ধরে টানা হেঁচড়া করছেন ব্যবসায় প্রশাসন ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থী ও আইবিএ শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি আবু সিনহা। তাকে পেছন থেকে টেনে শিক্ষককে রক্ষার চেষ্টা করছেন ভেটেরিনারি বিভাগের শিক্ষার্থী আবু নাইম তন্ময়। এসময় লাঠি হাতে তেড়ে আসতে দেখা যায় আইবিএ ছাত্রলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সৈকত রায়হানকে। আর পেছন থেকে ভেটেরিনারি বিভাগের শিক্ষার্থীদের কিলঘুষি মারতে থাকেন আইবিএ শিক্ষার্থীরা।
এ বিষয়ে ভেটেরিনারি অ্যান্ড অ্যানিমেল সায়েন্সেস বিভাগের অধ্যাপক মোইজুর রহমান বলেন, ‘ওই সময় আইবিএয়ের কয়েকজন শিক্ষার্থী আমার জার্সির কলার ধরে টানা হেঁচড়া করেন। এতে আমার জার্সিটি ছিঁড়ে যায়। পরে আমি বিভাগের সভাপতির মাধ্যমে উপাচার্য বরাবর একটি লিখিত অভিযোগ জমা দিয়েছি।’
শিক্ষক লাঞ্ছিতের ঘটনায় জড়িতদের শাস্তির দাবি জানিয়ে ভেটেরিনারি অ্যান্ড অ্যানিমেল সায়েন্স বিভাগের শিক্ষার্থী আবু নাঈম তন্ময় বলেন, ‘আমাদের স্যারকে যখন লাঞ্ছিত করা হয় তখন তিনি আইবিএয়ের কয়েকজন শিক্ষকের কাছে বিষয়টি জানালেও তারা বিষয়টিকে গুরুত্ব দেননি। পরে আইবিএয়ের শিক্ষার্থীরা আমাদের কয়েকজনকে বেধড়ক মারধর করে। এতে আমাদের বিভাগের এক প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থী গুরুতর আহত হন। জড়িতদের শাস্তির দাবি জানাচ্ছি।’
অভিযোগের বিষয়ে ছাত্রলীগ নেতা আবু সিনহা বলেন, ‘ওই শিক্ষকই প্রথমে আমাদের খেলোয়াড়দের মারধরের নির্দেশ দেন তাঁর বিভাগের শিক্ষার্থীদের। এতে দুই দলের মধ্যে সংঘর্ষ বেধে যায়। সেই সংঘর্ষের মধ্যে শিক্ষক ছিল কিনা না আমি বুঝতে পারিনি। তবে যখন তিনি পরিচয় দেন তখন আমরা সেই স্থান ত্যাগ করি।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক আসাবুল হক বলেন, ‘এ ঘটনায় ম্যানেজমেন্ট স্টাডিজ বিভাগের সহকারী অধ্যাপক জহুরুল আনিসকে আহ্বায়ক করে তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটির অন্য দুই সদস্যরা হলেন ফার্মেসি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক আল মামুন এবং আইন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মাহফুজুর রহমান। তদন্ত প্রতিবেদন অনুযায়ী আমরা পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহণ করব।’