রাবিতে হিমেলের মৃত্যুর প্রতিবাদী চিত্র শিল্পকর্মে
সবার হাতে হাতে রঙ-তুলি। চাকার নিচে পিষে ফেলা সেই ট্রাকের পাশে বসেই তাঁরা আঁকছেন বন্ধু হিমেলের মর্মান্তিক দুর্ঘটনার দৃশ্য। তুলিতে তুলে ধরছেন যন্ত্রচালিত বাহনের ক্ষুধার্ত মস্তিষ্কের ছবি, পড়ে থাকা মস্তকবিহীন বন্ধুর নিথর দেহের ছবি। রাবিতে নিহত হিমেলের বন্ধুরা সড়কে আল্পনায় লিখেছেন ‘সৃষ্টিকূলের ঘাতকেরা, তোরা সাবধান থাক’। এ ধরনের শিল্পের মধ্য দিয়েই শিল্পকলার এক শিল্পী বন্ধুকে বাঁচিয়ে রাখতে চান তাঁরা।
আজ বৃহস্পতিবার সকাল থেকেই চিত্রকল্প তৈরিতে ব্যস্ত ছিলেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) চারুকলার শিক্ষার্থীরা। আগামী তিনদিন ধরে এভাবেই তুলির আঁচড়ে শিল্প তৈরি করবেন তাঁরা। রঙ-তুলি থাকবে সবার জন্য উন্মুক্ত। যে কেউ চাইলে হিমেলের সঙ্গে কাটানো স্মৃতিকে তুলে ধরতে পারবেন সেখানে। এ চিত্রকর্মগুলো প্রদর্শিত হবে গোটা জাতির কাছে।
মাহমুদ হাবিব হিমেল বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের গ্রাফিক ডিজাইন, ক্রাফট ও শিল্পকলার ইতিহাস বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী। আঁকাআঁকিতে ছিলেন বেশ দক্ষ। নিজের তৈরি শিল্প বিক্রি করে চালাতেন পড়াশোনার খরচ। পাশাপাশি অসুস্থ মায়ের দেখভাল ও চিকিৎসার জন্য টাকা পাঠাতেন।
বন্ধুমহল, ছোট-বড় ভাইবোন ও ক্যাম্পাসে হিমেলের সঙ্গে মেলামেশা করা প্রত্যেকটি মানুষের কাছেই ছিল জনপ্রিয়তা। গত মঙ্গলবার রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ হবিবুর রহমান হলের সামনে ট্রাকের চাকায় পিষ্ট হয়ে নিহত হন মাহমুদ হাবিব হিমেল।
হিমেলের বন্ধু কাদেরুল ইসলাম কনিক পড়াশোনা করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের মৃৎশিল্প বিভাগে। তিনি বলেন, ‘আজকের চিত্রকর্মগুলো প্রতিবাদ স্বরূপ করা হয়েছে। আগামী তিন দিনব্যাপী এ শিল্পকর্ম অঙ্কনের কাজ চলবে। পরে আমরা হিমেলের স্মরণে একটি প্রদর্শনী করব।’
বন্ধুকে নিয়ে স্মৃতিচারণ করে কনক বলেন, ‘হিমেলের সবকিছুই ছিল তাঁর মাকে ঘিরে। তাঁর হাতের কাজ ছিল অনেক সূ² ও সুন্দর। বড় শিল্পী হওয়ার স্বপ্ন ছিল। কিন্তু সেটা আর হলো না।’
শিল্পকর্ম অঙ্কনের বিষয়ে চারুকলা অনুষদের শিক্ষার্থী আল আমিন রনক বলেন, ‘হিমেলের নির্মম মৃত্যুতে আমাদের হৃদয়ে যে রক্তক্ষরণ হয়েছে, সেটি এ শিল্পকর্মের মাধ্যমে প্রকাশ করছি। এ ছাড়া সড়ক দুর্ঘটনার বিষয়ে সচেতনার বার্তা ছড়িয়ে দিতে আমরা এ কাজ করছি।’