শাবিপ্রবির শিক্ষার্থীদের সমর্থনে ঢাবিতে প্রতীকী অনশনে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকেরা
শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শাবিপ্রবি) শিক্ষার্থীদের ওপর ছাত্রলীগ ও পুলিশের হামলার প্রতিবাদে এবং শিক্ষার্থীদের উত্থাপন করা দাবির প্রতি সমর্থন জানিয়ে প্রতীকী অনশনে বসেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকেরা। ‘বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক নেটওয়ার্ক’ ব্যানারে এ কর্মসূচি শুরু করেছেন তাঁরা।
আজ সোমবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অপরাজেয় বাংলার পাদদেশে দুপুর ১২টা থেকে এ কর্মসূচি শুরু হয়। বিকেল ৩টা পর্যন্ত তাঁদের এ অনশন চলবে বলে জানিয়েছেন শিক্ষকেরা।
এ সময় ‘শিক্ষার্থীদের মানবিক মর্যাদা নিশ্চিত কর’; ‘এখানে কেউ নেই ঐ নামে’; ‘অবিলম্বে শাবিপ্রবি উপাচার্যের অপসারণ কর’; ‘শাবিপ্রবি ভিসির অপসারণ চাই’; ‘তোমার যোগ্য প্রতিনিধি দেশে গড়েছে শ্মশান’; ‘শিক্ষার্থীদের তাজা প্রাণের বিনিময়ে উপাচার্যের গদি রক্ষা নয়’—লেখা প্ল্যাকার্ড দেখা যায় অনশনরত শিক্ষকদের হাতে।
প্রতীকী অনশনে অংশ নেওয়া শিক্ষকদের মধ্যে রয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ড রুশাদ ফরিদী, পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ড. মো. কামরুজ্জামান, অ্যাকাউন্টিং অ্যান্ড ইনফরমেশন সিস্টেমস বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মোশাহিদা সুলতানা ঋতু, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক তানজিম উদ্দিন খান, সমাজবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক সামিনা লুৎফা, গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক কাজলি শেহরীন ইসলাম, ইংরেজি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক তাসনীম সিরাজ মাহবুব, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক আনু মোহাম্মদ, সাইদ ফেরদৌস, মীর্জা তসলিমা, রেহনুমা আহমেদ প্রমুখ।
অনশনস্থলে অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে এমন ধরনের উপাচার্য নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে যাদের সঙ্গে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের সুসম্পর্ক নেই, যারা শিক্ষার্থী বান্ধব না এবং শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ তৈরিতে সচেতন না, এদের দ্বারাই আজকে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে এমন অচলাবস্থা তৈরি হয়েছে। এসব উপাচার্য বিশ্ববিদ্যালয়ে সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি, অনিয়ম, ক্ষমতাসীন ছাত্র সংগঠনের দুঃশাসনের পৃষ্ঠপোষকতা করছেন। যার ফলে আজকে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে একটা অচলাবস্থা তৈরি হচ্ছে।’
আনু মুহাম্মদ বলেন, ‘আজকে এরই ধারাবাহিকতায় শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের যৌক্তিক আন্দোলনে তাদের ওপর সরকারি গুন্ডা বাহিনীকে লেলিয়ে দিয়েছেন উপাচার্য ফরিদ উদ্দিন আহমেদ। শিক্ষার্থীরা শুধু হলের ডাইনিং ও অন্যান্য অব্যবস্থাপনার বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন। কিন্তু তাদের সেই দাবি না মেনে তাদেরকেই হামলা মামলা করা হয়েছে। আজকে উপাচার্যের বিরুদ্ধে যে আন্দোলন হচ্ছে এটার মূলকথা হচ্ছে এ ধরনের উপাচার্য দায়িত্বে থাকার যোগ্য নয়। তাই বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার সুষ্ঠু ও সুন্দর পরিবেশ বজায় রাখতে, সন্ত্রাস, দূর্নীতি ও দুঃশাসনমুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় গড়ে তুলতে শিক্ষার্থীদের দাবির সঙ্গে সংহতি জানাচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয় নেটওয়ার্ক।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক তানজিম উদ্দিন খান বলেন, ‘শিক্ষক হিসেবে আমাদের লজ্জার শেষ নেই। শিক্ষার্থীদের ন্যায্য আন্দোলনে শিক্ষকদের ভূমিকা দেখলাম। আমরা ৩৪ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের বক্তব্য দেখলাম। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে কি ধরনের মানুষ উপাচার্য হন এগুলো এখন স্পষ্ট হয়ে গেছে। শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের অধিকার আদায়ের জন্য কেউ নেই এখন। অনশনে এত সময় পার হওয়ার পরেও তাদের টনক নড়ছে না। এগুলোর বিরুদ্ধে কিছু বললেই আমরা উস্কানিদাতা হয়ে যাই। আমরা উস্কানিদাতা হতে চাই। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে যে কাঠামো থাকা দরকার তা নেই। যার কারণে শিক্ষক শিক্ষার্থীরা অপরাজনীতিতে লিপ্ত হন। যার ফল আজকের শাবিপ্রবির ঘটনা।’
তানজিম উদ্দিন খান বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয় মানেই হচ্ছে ন্যায্যতা। এজন্যই একাত্তর সালের আগে ও পরে অনেক আন্দোলন হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় মানেই হচ্ছে ন্যায্যতা শিখাবে। ন্যায্যতা চর্চা করবে। সেটা এখন আর নেই। বিশ্ববিদ্যালয়ে কত স্বপ্ন নিয়ে শিক্ষার্থীরা আসে। অথচ আমরা তাদের হত্যা করি। আমাদের ন্যায্যতার প্রশ্ন সামনে আনা জরুরি হয়ে পড়েছে। আমরা আশা করি, উপাচার্য শিক্ষার্থীদের ন্যায্য দাবি মেনে নিয়ে শুভবুদ্ধির পরিচয় দেবেন।’
কর্মসূচির বিষয়ে ড. রুশাদ ফরিদী বলেন, ‘আমরা শাবিপ্রবির আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সম্পূর্ণ একমত। কারণ একজন উপাচার্যের কাছে শিক্ষার্থীরা সন্তানের মত। আমরা মনে করি শিক্ষার্থীদের দাবি অন্যায় নয়। তর্কের খাতিরে যদি বলাও হয় শিক্ষার্থীদের দাবি অন্যায় তাহলেও কোনো পিতা পুলিশ ডেকে সন্তানদের পেটাতে পারেন না। আর যে উপাচার্যের মনোভাব এরকম তিনি উপাচার্যের পদে থাকার সব যোগ্যতা হারিয়েছেন। তাই শিক্ষার্থীদের দাবির প্রতি সংহতি জানিয়ে আমাদের আজকের এই কর্মসূচি।’