শিক্ষক রাখলেন ছাত্রীর সন্তানকে, পরীক্ষা দিলেন ছাত্রী
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের তৃতীয় বর্ষের এক শিক্ষার্থী শিশুসন্তানকে নিয়ে এসেছিলেন পরীক্ষা দেওয়ার জন্য। পরীক্ষা চলাকালীন ওই শিক্ষার্থীর সন্তানকে কোলে তুলে নেন বিভাগীয় শিক্ষক মুহাম্মদ কামরুল ইসলাম। ওই অবস্থাতেই পরীক্ষা হলের দায়িত্ব পালন করেন তিনি।
জানা যায়, গতকাল মঙ্গলবার ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষে ‘এডুকেশন সিস্টেম ইন ইসলাম’ কোর্সের মিড টার্ম পরীক্ষা ছিল।
শিক্ষক সহকারী অধ্যাপক মুহাম্মদ কামরুল ইসলাম সংস্কৃতিকর্মী ও আবৃত্তিশিল্পী। তিনি জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় আবৃত্তি সংসদের ব্যবস্থাপনা উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্বরত রয়েছেন।
শিক্ষার্থীকে সহায়তা করে এরই মধ্যে প্রশংসায় পঞ্চমুখ হয়েছেন মুহাম্মদ কামরুল ইসলাম। ফেসবুকে এরই মধ্যে ছাত্রী ফাতিমা আক্তারের সন্তানকে কোলে নিয়ে শিক্ষক কামরুলের হলে দায়িত্ব পালন করার ছবিটি রীতিমতো ভাইরাল হয়ে গেছে।
এ বিষয়ে সহকারী অধ্যাপক মুহাম্মদ কামরুল ইসলাম বলেন, ‘ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের তৃতীয় বর্ষের প্রথম সেমিস্টার পরীক্ষা মিডটার্ম পরীক্ষা ছিল। দেখলাম মেয়েটির বাচ্চা ছোট হওয়ায় এর আগের ক্লাসগুলো ও করতে পারেনি। পরীক্ষার হলে গিয়ে দেখি ওর বাচ্চাকে বেঞ্চের খাতার সামনে বসিয়ে লেখার চেষ্টা করছে। বাচ্চাটা তাকে লিখতে দিচ্ছে না, আঁকাআকির চেষ্টা করছে। পরীক্ষায় সে এক হাত দিয়ে লেখার চেষ্টা করছে আরেক হাত দিয়ে বাচ্চাকে ধরে রেখেছে। তখন আমি তাকে বললাম যে, তুমি যদি তোমার কোনো সিনিয়র বা জুনিয়র কাউকে একটু ম্যানেজ করতে, তাহলে পরীক্ষাটা সুন্দর করে দিতে পারতা। পরে দেখলাম সে ক্লাস না করায় তেমন কারও সঙ্গেই পরিচয় নেই, এমনকি পরিবারের কাছে রেখে আসার মতো অবস্থাও তার ছিল না। তাই সন্তানকে সঙ্গে করে নিয়ে এসেছে।’
কামরুল ইসলাম আরও বলেন, ‘আমি দেখলাম সে লিখতে পারছিল না। তাই পরে আমি শিশুটিকে কোলে নিলাম। প্রথমে আসতে চায়নি, পরে দেখলাম যে, তার সামনে একটু হাঁটাহাঁটি করার পর আমার সঙ্গে ছিল মোটামুটি ৪০-৪৫ মিনিটের মতো।’
বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে দাবি জানিয়ে শিক্ষক কামরুল বলেন, ‘আমাদের যেসব শিক্ষার্থী (মায়েরা) পরীক্ষা দিতে আসেন, সে সময়টাতে তাঁদের জন্য যদি বাচ্চাদের রাখার জন্য কোনো ব্যবস্থা করা যেত, তাহলে পরবর্তীকালে এ সমস্যাটা আর হতো না।’