স্বাক্ষর জাল করে ৪ স্কুল নিজ কেন্দ্রে নিলেন প্রধান শিক্ষক!
দিনাজপুরের বিরামপুর উপজেলার কাটলা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও এসএসসি পরীক্ষাকেন্দ্রের সচিব মো. নজরুল ইসলামের বিরুদ্ধে হাকিমপুর উপজেলার চারটি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের স্বাক্ষর জাল করে সুকৌশলে তার পরীক্ষাকেন্দ্রে অন্তর্ভুক্ত করার অভিযোগ উঠেছে।
আজ রোববার এই অভিযোগ এনে ওই চারজন প্রধান শিক্ষক নতুন অন্তর্ভুক্ত হওয়া পরীক্ষাকেন্দ্র বাতিল করে আগের পরীক্ষাকেন্দ্রে পরীক্ষায় অংশগ্রহণের অনুমতি চেয়ে শিক্ষামন্ত্রী, শিক্ষা সচিব, দিনাজপুর শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যানসহ সরকারের একাধিক দপ্তরে আবেদন করেছেন।
বিভিন্ন দপ্তরে পাঠানো প্রধান শিক্ষকদের লিখিত অভিযোগে জানা গেছে, হাকিমপুর উপজেলার পাউশগাড়া স্কুল অ্যান্ড কলেজ, নওপাড়া বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়, নয়ানগর উচ্চ বিদ্যালয় এবং ডাঙ্গাপাড়া বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা নিজ উপজেলা হাকিমপুরের বাংলাহিলি পাইলট স্কুল অ্যান্ড কলেজ কেন্দ্রে এসএসসি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে আসছে। কিন্তু গত ১৮ অক্টোবর হাকিমপুরের এসএসসি পরীক্ষাকেন্দ্র পরিবর্তন করে ওই চারটি বিদ্যালয়কে বিরামপুরের কাটলা উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। বিরামপুরের কাটলা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও কেন্দ্র সচিব মো. নজরুল ইসলাম সুকৌশলে নিজ স্বার্থসিদ্ধির জন্য আমাদের স্বাক্ষর জাল-জালিয়াতি করে কেন্দ্র পরিবর্তনের এই জঘন্যতম কাজ করেছেন। এ নিয়ে উপজেলার শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।
পাউশগাড়া স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ সেলিম রেজা ও নয়ানগর উচ্চ বিদ্যাললেযর প্রধান শিক্ষক আতিয়ার রহমান অভিযোগ করে বলেন, আমরা ওই চার বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক হাকিমপুরের কেন্দ্র পরিবর্তনের জন্য কোথাও কোনো আবেদন করিনি। আমাদের শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা নিজ উপজেলা ব্যতিরেকে অন্য উপজেলায় গিয়ে এসএসসি পরীক্ষা দিতে অনিচ্ছুক। কিন্তু কাটলা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও কেন্দ্র সচিব মো. নজরুল ইসলাম আমাদের স্বাক্ষর জাল করে ভুয়া তথ্য উপস্থাপন করে এই জালিয়াতি করেছেন। যা আমাদের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি করেছে। আমরা কাটলা কেন্দ্রের অধীন থাকতে চাই না। আমরা হাকিমপুর কেন্দ্রে থাকতে চাই।
নওপাড়া বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক জাহাঙ্গীর আলম ও ডাঙ্গাপাড়া বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা লায়লা আরজুমান বলেন, আমাদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে কাটলা উচ্চ বিদ্যালয় পরীক্ষাকেন্দ্র অনেক দূরে। কেন্দ্রটি প্রত্যন্ত গ্রাম অঞ্চলে অবস্থিত। আবার যোগাযোগ ব্যবস্থাও ভালো না। তাই শিক্ষার্থীরা যথা সময়ে পরীক্ষাকেন্দ্রে উপস্থিত হওয়ার সম্ভাবনা খুবই কম। শিক্ষার্থীরা হাকিমপুর কেন্দ্রে পরীক্ষা দিতে সাচ্ছন্দ্য ও নিরাপদ বোধ করে। তাই দূরত্বের বিষয় বিবেচনা করে শিক্ষার্থী এবং অভিভাবকদের মতামতের গুরুত্ব দিয়ে নিজ উপজেলা হাকিমপুর কেন্দ্রে পরীক্ষা দেওয়ার জন্য কর্তৃপক্ষের কাছে জোর দাবি জানাচ্ছি।
বাংলাহিলি পাইলট স্কুল অ্যান্ড কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ ও কেন্দ্র সচিব গোলাম মোস্তফা কামাল বলেন, উপজেলায় ১৮টি মাধ্যমিক বিদ্যালয় রয়েছে। এমনিতেই পরীক্ষার্থীর সংখ্যা কম। আমরা চাই চারটি বিদ্যালয়কে আমাদের কেন্দ্রে বহাল রাখা হোক।
হাকিমপুর উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা ও উপজেলা কেন্দ্রসচিব মো. বোরহান উদ্দীন বলেন, আমি শুনেছি আমাদের কেন্দ্র থেকে চারটি বিদ্যালয়কে গোপনে বিরামপুরের কাটলা কেন্দ্রে স্থানান্তর করা হয়েছে। কিন্তু কীভাবে করা হয়েছে, তা আমি জানি না। আমার কোনো মতামত নেওয়া হয়নি। এটা ঠিক হয়নি।
বিরামপুরের কাটলা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও এসএসসি পরীকক্ষাকেন্দ্রের সচিব মো. নজরুল ইসলাম বলেন, আমার কেন্দ্রের পাশে হওয়ায় দিনাজপুর শিক্ষাবোর্ড সুবিধা মনে করেছে বলেই হাকিমপুরের চারটি বিদ্যালয়কে আমার কেন্দ্রে অন্তর্ভুক্ত করেছে। কোনো বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের স্বাক্ষর জাল করেছি এই অভিযোগ মোটেও সত্য নয়। আমার কেন্দ্র থেকে তো দুটি বিদ্যালয় বিরামপুর কেন্দ্রে স্থান্তান্তর করেছে। এটা শিক্ষাবোর্ডের এখতিয়ার। তারা মনে করলে শিক্ষাবোর্ডে কথা বলে তাদের কেন্দ্রে চারটি বিদ্যালয়কে বহাল রাখতে পারে। আমার কোনো আপত্তি নেই।