এবার পাস কমিয়েছে সৃজনশীল গণিত
এ বছর দাখিল ও কারিগরি শিক্ষা বোর্ড ছাড়া আটটি সাধারণ বোর্ডে অনুষ্ঠিত এসএসসি পরীক্ষায় গড় পাসের হার ৮৬ দশমিক ৭২ ভাগ। গতবার এ হার ছিল ৯২ দশমিক ৬৭ ভাগ। কেবল পাসের হার নয়, এ বছর কমেছে জিপিএ ৫ পাওয়া শিক্ষার্থীর সংখ্যাও।
urgentPhoto এ বছর জিপিএ ৫ পেয়েছে এক লাখ ১১ হাজার ৯০১ জন শিক্ষার্থী। গত বছর এ সংখ্যা ছিল এক লাখ ৪২ হাজার ২৭৬ জন।
শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ এ ব্যাপারে বলেছেন, বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামীর ডাকা হরতাল-অবরোধের কারণে এ বছর এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষার পাসের হার ও জিপিএ ৫ পাওয়া শিক্ষার্থীর সংখ্যা কমে গেছে।
তবে পাঁচটি শিক্ষা বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রকরা বলছেন, প্রথমবারের মতো গণিতে সৃজনশীল পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়েছে। এ কারণে পাসের হার কমেছে।
সিলেট বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক মো. আবদুল মান্নান খান বলেন, ‘গত বছরের চেয়ে এবার শতকরা হারটা (পার্সেন্টেজটা) একটু নিচে নেমে (ডাউন হয়ে) গেছে। সেটা শুধু আমাদের এখানে না, সারা বাংলাদেশেই আপনারা দেখবেন এবং এই ক্ষেত্রে যেটা প্রভাব ফেলেছে (অ্যাফেক্ট করেছে) সৃজনশীল গণিতের মতো নতুন পদ্ধতি। পদ্ধতি খুবই ভালো কিন্তু প্রক্রিয়া প্রয়োগ করতে গিয়ে হয়তো আমরা সমভাবে সব জায়গায় প্রশিক্ষণ দিতে পারি নাই বা ছাত্ররাও ওইভাবে প্রশিক্ষণ লাভ করতে পারে নাই। এখানে আমরা একটু পিছিয়ে আছি।’
চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক মাহাবুব হাসান সাংবাদিকদের বলেন, ‘সৃজনশীল পরীক্ষা ও রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে পাসের হার কমেছে। এ ছাড়া গণিতে বেশির ভাগ শিক্ষার্থী ফেল করায় জিপিএ কমেছে বলে মন্তব্য করেন তিনি।’
একই কথা বলেন যশোর বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক মাধব চন্দ্র রুদ্র। তিনি বলেন, ‘গণিতে সৃজনশীল ও নতুন কিছু পদ্ধতি প্রয়োগ হওয়ার কারণেই গতবারের চেয়ে এবার ফলাফল কিছুটা খারাপ হয়েছে বলে প্রাথমিকভাবে মনে করা হচ্ছে। তিনি আরো বলেন পরীক্ষা চলাকালে হরতাল, অবরোধের মতো কর্মসূচি, শিক্ষকদের অবহেলাও এর কারণ।’
কুমিল্লা বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক কায়সার আহমেদ পাসের হার কমে যাওয়ার দুটি কারণ উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, ‘একটি কারণ প্রথমবারের মতো গণিতে সৃজনশীল পদ্ধতির প্রয়োগ এবং অন্যটি রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা।’
বরিশাল বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক মুহাম্মদ শাহ আলমগীর বলেন, ‘রাজনৈতিক অস্থিরতায় পরীক্ষার্থীদের মনে বিরূপ প্রভাব পড়েছে। তা ছাড়া এবার গণিতে প্রথমবারের মতো সৃজনশীল পদ্ধতিতে পরীক্ষা হওয়ায় ফল কিছুটা খারাপ হয়েছে।’
সাধারণ বোর্ডের প্রতিটিতে কমেছে পাসের হার
ঢাকা বোর্ডে এ বছর পাসের হার ৮৮ দশমিক ৬৫ শতাংশ। গত বছর এ হার ছিল ৯৩ দশমিক ৯৪ শতাংশ।
চট্টগ্রামে এ বছর পাসের হার ৮২ দশমিক ৭৭ শতাংশ। গত বছর এ হার ছিল ৯১ দশমিক ৪০।
কুমিল্লা বোর্ডে এবার পাসের হার ৮৪ দশমিক ৩৭ শতাংশ, গতবার এ হার ছিল ৮৯ দশমিক ১২ শতাংশ।
সিলেট বোর্ডে এ বছর পাসের হার ৮১ দশমিক ৮২। গতবার এ হার ছিল ৮৯ দশমিক ২৩ শতাংশ।
বরিশাল বোর্ডে এবার পাসের হার ৮৪ দশমিক ৩৭ শতাংশ, গতবার যা ছিল ৯০ দশমিক ৬৬ শতাংশ।
রাজশাহী বোর্ডে পাসের হার ৯৪ দশমিক ৯৭ শতাংশ, গতবার তা ছিল ৯৬ দশমিক ৩৪ শতাংশ।
দিনাজপুরে এ বছর পাসের হার ছিল ৮৫ দশমিক ৫, গতবার তা ছিল ৯৩ দশমিক ২৬।
যশোর শিক্ষা বোর্ডে এ বছর পাসের হার ছিল ৮৪ দশমিক ২ শতাংশ। গত বছর এ হার ছিল ৯২ দশমিক ১৯ শতাংশ।
(প্রতিবেদনটি তৈরি করতে সহায়তা করেছেন মঈনুল হক বুলবুল, আরিচ আহমেদ শাহ্, মো. জালাল উদ্দিন, আখতার ফারুক শাহীন ও সাইফুল ইসলাম সজল)