‘বিনা পায়ে’ ইফতি সাফল্যের চূড়ায়
জন্ম থেকে শারীরিক প্রতিবন্ধী ইমতিয়াজ কবির ইফতি। দুটি পা থাকার পরও সে হাঁটতে পারে না। কিন্তু পড়াশোনার প্রতি তার ভীষণ আগ্রহ। তাই মা-বাবা কোলে করেই তাকে স্কুলে আনা-নেওয়া করছেন। সেই ইফতি এবারের এসএসসি পরীক্ষায় চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ডের সেরা প্রতিষ্ঠান কলেজিয়েট স্কুল থেকে বিজ্ঞান বিভাগে সব বিষয়ে জিপিএ ৫ পেয়েছে।
আজ শনিবার ফলাফল ঘোষণার খবর পেয়ে ইফতি মায়ের কোলে চড়ে কলেজিয়েট স্কুলে এসেছিল। সে জানায়, ভবিষ্যতে কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ার হতে পারলে তার স্বপ্নের পুরোপুরি বাস্তবায়ন হবে।
চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ডের মধ্যে টানা চারবার প্রথম কলেজিয়েট স্কুল থেকে এবার ৪০৩ জন শিক্ষার্থীর মধ্যে সবাই পাস করেছে। এর মধ্যে ৩৭৭ জন শিক্ষার্থী পেয়েছে জিপিএ ৫। স্কুলের একমাত্র প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থী ইমতিয়াজ কবির ইফতিও পেয়েছে জিপিএ ৫।
শিক্ষকরা জানান, প্রতিবন্ধী হলেও ইফতি মেধার জোরে স্কুলের পঞ্চম শ্রেণিতে ভর্তি হয়েছিল। অন্য আরো ১০ জনের মতো সে স্কুলের সব কাজে এগিয়ে ছিল। স্কুলশিক্ষক মা ও একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করা বাবার কোলে চড়ে স্কুলে আসত সে। মা স্কুলে দিয়ে গেলে বাবা কোলে করে নিয়ে যেতেন বাসায়।
জম্মের পর থেকে ইফতির ডান পা বাঁকা। হাতটাও চিকন। নিজের পায়ে ভর দিলে হাড় ভেঙে যায়। এভাবে হাড় ভাঙতে ভাঙতে এখন সব হাড় অলস হয়ে পড়েছে। তার মা-বাবা এ পর্যন্ত ১২ বার বিদেশ নিয়ে চিকিৎসা করিয়েছেন। তবু সুস্থ হয়নি ইফতি।
ইমতিয়াজ কবির ইফতি এনটিভি অনলাইনকে বলে, ‘আগামীতে কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ার হতে চাই। মনের জোরে এতদূর এসেছি। জন্ম থেকে আমি শারীরিক প্রতিবন্ধী। মা-বাবাই সব করেছে। তাদের ভূমিকায় এতদূর এসেছি। অবহেলা করেননি শিক্ষক ও সহপাঠীরা। শুধু বন্ধুদের সাথে খেলতে পারিনি। দূর থেকে দেখেছি তাদের দৌড়াদৌড়ি। হাঁটতে চেষ্টা করেছি। কিন্তু হাঁটতে গেলে হাড় ভেঙে যায়। ছোটবেলা থেকে দেশ-বিদেশে চিকিৎসকদের শরণাপন্ন হয়েছি।চিকিৎসকরা সাহস দেয়। তবে সে সাহসে নিজের মতো করে হাঁটতে পারি না। মা-বাবার কোলে করে পথ চলতে হয়।’
তবে একমাত্র ছেলে যে প্রতিবন্ধী এমনটি কোনো মনে হয়নি স্কুলশিক্ষক মা ইয়াছমিন নাহারের। কোলেপিঠে করে স্কুলে আনা-নেওয়া ছাড়াও সামাজিক নানা অনুষ্ঠানে অংশ নিয়েছেন প্রতিবন্ধী সন্তানকে নিয়ে। কে কী বলছেন তা তিনি মাথায় নেন না। বললেন, ছেলেকে কোনোদিন বোঝা মনে করেননি। সন্তানের আজকের অর্জনে তাঁর উচ্ছ্বাস বেড়েছে বহুগুণ।
ইয়াছমিন নাহার বলেন, ‘আমরা যা চেয়েছি এসএসসির এ ফলাফল আমাদের সব দিয়েছে। আমার মনে হয় আমার ছেলে পুরোপুরি ভালো হয়ে যাবে। ভিসার জন্য আবেদন করেছি। ভিসা পেলে যাব ভারতের ভেলোরে।’
স্কুলের শিক্ষকরা বলছেন, চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ডের মধ্যে স্কুল প্রথম হয়েও তারা যে আনন্দ পাননি, ইফতি জিপিএ ৫ পাওয়ায় তাঁরা অনেক আনন্দ পেয়েছেন।
কলেজিয়েট স্কুলের প্রধান শিক্ষক মো. গিয়াস উদ্দিন এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘অদম্য এ ছাত্রকে নিয়ে আমরা গর্বিত। অভিভাবকদের কষ্ট, ধৈর্যকে আমরা স্যালুট জানাই। ইফতি এ স্কুলে প্রতিবন্ধীর কোটায় ভর্তি হতে পারত। কিন্তু সে সুযোগ গ্রহণ করেনি। সে প্রতিটি পরীক্ষায় ভালো করত। মেধার জোরে জিপিএ ৫ পেয়ে প্রমাণ করেছে সে প্রকৃত মেধাবী ছাত্র। তার জিপিএ ৫-এ আমরা বোর্ডের প্রথম হওয়ার চেয়েও অনেক বেশি আনন্দিত।’