রুয়েটে ছাত্রদের গায়ে হাত, মেয়েদের টানাহেঁচড়া!
রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (রুয়েট) ক্রেডিট বাতিলের দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের শারীরিকভাবে হেনস্তা করার অভিযোগ উঠেছে শিক্ষকদের বিরুদ্ধে।
৩৩ ক্রেডিট বাতিলের দাবিতে রুয়েটের ২০১৪-১৫ ও ২০১৫-১৬ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থীরা তৃতীয় দিনের মতো আজ সোমবারও ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন করে আন্দোলন করেছেন।
শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, আজ আন্দোলন চলাকালে শিক্ষকরা বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মরত আনসার সদস্যদের নিয়ে শিক্ষার্থীদের গায়ে হাত তোলেন। তবে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বলছে, শিক্ষার্থীদের এ অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা।
রুয়েটের শেখ হাসিনা হলের আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা বলেন, সকাল ৮টার দিকে শিক্ষকরা হলের সামনে এসে ক্লাসে যাওয়ার জন্য মাইকে ঘোষণা দেন। কিন্তু তাঁরা ক্লাসে যেতে রাজি না হলে হুমকি দেওয়া হয়। এ সময় উপাচার্য হুমকি দিয়ে বলেন, ‘তোমাদের সামনে দুইটা অপশন। হয়তো তোমরা ক্লাসে যাবে, নয়তো তোমাদের ছুটি দিয়ে দেওয়া হবে।’
শিক্ষার্থীরা বলেন, তাঁদের হল থেকে বের হতে না দেওয়ায় তাঁদের ব্যাচমেট ও বন্ধুরা মিছিল নিয়ে হলের দিকে আসেন। তখন ছাত্রীরা হল থেকে বের হয়ে মিছিলে যোগ দেন।
মিছিল নিয়ে যখন তাঁরা সেলিম হলের মোড়ে যান, তখন বিপরীত দিক থেকে শিক্ষকরা সেখানে যান। তাঁরা শিক্ষার্থীদের চিহ্নিত করার জন্য ছবি তোলার পাশাপাশি ভিডিও করতে থাকেন। এ সময় তাঁদের বহিষ্কার করার হুমকি দেওয়া হয়। শিক্ষকরা বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মরত আনসার সসদ্যদের নিয়ে এসে শিক্ষার্থীদের শারীরিকভাবে হেনস্তা করেন। ছাত্রদের গায়ে হাত তোলেন। আর ছাত্রীদের টেনেহিঁচড়ে হলে নিয়ে যান। তাঁদের কাছ থেকে সাদা কাগজেও সই নেন। তাঁরা যেন বের হতে না পারেন, সেজন্য গেটে তালা মেরে দেন। এখন তাঁদের হলের ছাদে পর্যন্ত যেতে দেওয়া হচ্ছে না।
দাবি না মানা পর্যন্ত আন্দোলন অব্যাহত থাকবে বলেও ঘোষণা দিয়েছেন আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা। এ সময় শিক্ষার্থীদের হেনস্তাকারীদের বিচার দাবি করা হয়।
আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে এক শিক্ষাবর্ষে দুই সেমিস্টার মিলিয়ে ৪০ ক্রেডিট থাকে। এর মধ্যে ৩৩ ক্রেডিট না পেলে একজন শিক্ষার্থীকে অকৃতকার্য দেখানো হয়। তাঁরা এ জন্য ৩৩ ক্রেডিট বাতিল চান। বাতিল করে আগের ক্যারি অন সিস্টেম ছিল সেটাতে ফেরত যেতে চান। আগের সিস্টেমটা হচ্ছে কারো কোনো ব্যাক ফ্লপ (কোনো বিষয়ে অকৃতকার্য) থাকলে পরের বছর পরীক্ষা দেওয়ার সুযোগ পেতেন শিক্ষার্থীরা। পরের বছর পরীক্ষা দিয়ে সেটা কাভার করা যেত। বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে এই পদ্ধতিটাই প্রচলিত আছে।
এ বিষয়ে কথা বলতে রুয়েটের উপাচার্য অধ্যাপক রফিকুল আলম বেগকে একাধিকবার ফোন করলে তিনি তা কেটে দেন।
যোগাযোগ করা হলে রুয়েটের নিরাপত্তা কর্মকর্তা জালালউদ্দিন বলেন, ‘শিক্ষার্থীরা তাদের দাবিতে আন্দোলন করছে। তাদের গায়ে হাত তোলার অভিযোগ মিথ্যা। কোনো শিক্ষক যদি শিক্ষার্থীর কাধে হাত দিয়ে বলে ক্লাসে যাও, আর সেটাকে যদি মার বলা হয় সেটা তো দুঃখজনক।’
জালালউদ্দিন আরো বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের ব্যাপারে কী সিদ্ধান্ত হবে সেটা এখনো পরিষ্কার না। এ নিয়ে প্রশাসনে এখনো আলোচনা হচ্ছে। আলোচনায় সিদ্ধান্ত এলে পরে সেটা জানানো হবে।’