ঢাবির কার্জন হল-মোকাররম ভবনে ক্যান্টিন স্থাপনের দাবি শিক্ষার্থীদের
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) কার্জন হল ও মোকাররম ভবন এলাকার একাডেমিক ভবনগুলোতে প্রায় নয় হাজার শিক্ষার্থীর শ্রেণি কার্যক্রম চললেও এই এলাকায় পর্যাপ্ত ও স্বাস্থসম্মত ক্যান্টিন বা ক্যাফেটেরিয়া নেই। এ নিয়ে শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন সময় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে দাবি জানালেও ইতিবাচক সাড়া মেলেনি। সম্প্রতি বিজ্ঞানের শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসে ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এখানকার খাদ্য ব্যবস্থাপনা সংকট ও ভোগান্তি নিরসনে ক্যাফেটেরিয়া স্থাপনের বিষয়টি নতুন করে সামনে তুলে এনেছেন।
জানা গেছে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্জন হল ও মোকাররম ভবন এলাকায় পাঁচটি অনুষদের মোট ৩৪টি বিভাগ ও দুটি ইনস্টিটিউটের একাডেমিক কার্যক্রম হয়। এখানে প্রতিনিয়ত প্রায় নয় হাজারের মতো শিক্ষার্থী ক্লাস করতে আসেন। এর বাইরে মোকাররম ভবনের পাশেই অবস্থিত সায়েন্স লাইব্রেরি। এখানেও প্রতিদিন শতশত শিক্ষার্থী লেখাপড়া করতে আসেন। প্রতিনিয়ত এত শিক্ষার্থীর আনাগোনার পরও এই এলাকায় উপযুক্ত ও মানসম্মত কোনো ক্যাফেটেরিয়া বা ক্যান্টিন স্থাপন করা হয়নি। ক্যাম্পাসে নানা অবকাঠামো ও ভবন তৈরি হলেও এখানে ক্যাফেটেরিয়া-ক্যান্টিনের দাবি সবসময় অবহেলিত হয়ে আসছে বলে অভিযোগ শিক্ষার্থীদের।
সরেজমিনে দেখা গেছে, মোকাররম ভবন এলাকার সায়েন্স লাইব্রেরির পাশে চায়ের চারটি ও খাবারের ছোট্ট দুটি দোকান রয়েছে। যেগুলোতে খাবার নিম্নমানের। অন্যদিকে, কার্জন হলের পেছনের দিকে বিজ্ঞান কারখানার পাশে জহিরের ক্যান্টিন থাকা সত্ত্বেও সেখানে মানসম্মত ও পর্যাপ্ত পরিমাণে খাবার থাকে না এবং সেখানে বসারও কোনো পরিবেশ নেই বলে শিক্ষার্থীরা অভিযোগ করেন।
ভূতত্ত্ব বিভাগের ২০১৯-২০ সেশনের শিক্ষার্থী আবু বাকের মজুমদার বলেন, ‘সায়েন্সের শিক্ষার্থীদের জন্য ভিসি স্যারের দশ টাকার চা-চপ, সমুচা, সিঙ্গারা যেন সোনার হরিণের মতো। চল্লিশ টাকার ভাড়া গুনে দশ টাকার চা, চপ, সিঙারা খেতে টিএসসিতে যাওয়ার বিষয়টা ভাবতেও প্যাথেটিক লাগে। কিন্তু, এই সুযোগ টিএসসি বা ডাকসু ক্যাফেটেরিয়া এলাকার লোকজন খুব সহজে নিতে পারেন। আর চল্লিশ টাকা ভাড়া দিয়ে টিএসসি গেলেও খাবার পাই না। কেননা আমার ল্যাবই শেষ হয় সাড়ে চারটার সময়। আমার কাছে এটা জিওগ্রাফিকাল বৈষম্যই মনে হচ্ছে। পাশাপাশি এখানে ইন্টার ডিসিপ্লিনারি এপ্রোচটা পুরোপুরি মিসিং।’
প্রাণিবিজ্ঞান বিভাগের ২০২১-২২ সেশনের শিক্ষার্থী কারিশমা আক্তার বলেন, ‘কার্জন হলে ক্যাফেটেরিয়া অবশ্যই দরকার। বেশিরভাগ সময়ই আমরা দুপুরে খাবার পাই না। দুপুরের পর আমাদের ল্যাব থাকে, আবার জহিরের ক্যান্টিনে খাবার থাকে না। আমাদের চারটা পর্যন্ত ল্যাব থাকে, এতক্ষণ না খেয়ে থাকলে শরীর খারাপ হয়।’
২০২০-২১ সেশনের শিক্ষার্থী আব্দুল্লাহ সালেহীন অয়ন বলেন, ‘কার্জন হল-মোকাররম ভবনের শিক্ষার্থীদের প্রায় প্রতিদিনই সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত ক্লাস থাকে। আমাদের এখানে খাবার খাওয়ার জন্য শুধু ম্যাথ ক্যান্টিন, সায়েন্স লাইব্রেরির পেছনের খাবারের দোকান, জহিরের ক্যান্টিন এবং আইএনএফএস এর খাবারের দোকান বাদে আর কোথাও খাবারের ব্যবস্থা নেই। অনেক সময় দাঁড়িয়ে খেতে হয়। এগুলোতে বৃষ্টিবাদলের দিনে দাঁড়ানোর মতো পরিবেশও থাকে না।
পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের ২০২০-২১ সেশনের শিক্ষার্থী আবু সুফিয়ান আবিদ বলেন, যেখানে বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লাসরুটিনই এমনভাবে সাজানো যে, শিক্ষার্থীরা বাধ্য তাদের দুপুরের খাবারটা বাসার বাইরে কোথাও থেকে ব্যবস্থা করতে। খাবারের জন্য বরাদ্দকৃত সময় মাত্র ৩০ মিনিট দেওয়া থাকায় ক্যাম্পাসের বাইরে কোথাও থেকে খেয়ে এসে ক্লাসে আসা অসম্ভব।
ঢাবির বিজ্ঞান অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. আব্দুস সামাদ বলেন, ‘আমাদের এখানে একটি আধুনিক ক্যান্টিনের ডিজাইন অলরেডি সম্পন্ন হয়ে গেছে। এটার ভেতরে ৭০ থেকে ৮০ জন ও বাইরে ছাতাগুলোর নিচে আরও ৪০ থেকে ৫০ জন খেতে পারবে। সাইকেল ও বাইক স্ট্যান্ডও নির্মাণ করা হবে। সব পাস হয়ে গেছে। এখন বাজেটটা হয়ে গেলেই এগুলোর কাজ শুরু হবে।’
এ বিষয়ে কথা বলতে ঢাবির উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামানকে মুঠোফোনে কল দিয়েও তাকে পাওয়া যায়নি।