ড. ইউনূসের পক্ষে খোলা চিঠি আইএলও ও দেশীয় আইন লঙ্ঘন : ঢাবি শিক্ষক সমিতি
শান্তিতে নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসের পক্ষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে শতাধিক বিশ্বনেতার খোলা চিঠি দেওয়াকে বাংলাদেশের স্বাধীন বিচার ব্যবস্থার ওপর অযাচিত হস্তক্ষেপ বলে মন্তব্য করেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি। সংগঠনটি খোলা চিঠিতে উল্লেখিত বিবৃতিকে আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা (আইএলও) এবং বাংলাদেশের আইনে শ্রমিকদের অধিকার সংক্রান্ত বিধানের সম্পূর্ণ পরিপন্থী বলেও দাবি করেছে। আজ বৃহস্পতিবার (৩১ আগস্ট) সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. মো. নিজামুল হক ভূঁইয়া ও সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. জিনাত হুদা সাক্ষরিত এক বিবৃতিতে এই মন্তব্য করা হয়।
বিবৃতিতে বলা হয়, গত ২৮শে আগস্ট বেশ কয়েকজন নোবেল বিজয়ী, রাজনীতিবিদ, ব্যবসায়ী ও সুশীল সমাজের সম্মানিত সদস্য বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে একটি খোলা চিঠি দিয়েছেন। চিঠিতে তারা বাংলাদেশের শ্রম আইনে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের বিরুদ্ধে চলমান মামলা স্থগিতের জন্য বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীকে আহ্বান জানিয়েছেন। একটি স্বাধীন সার্বভৌম দেশের বিচার ব্যবস্থার ওপর এমন অযাচিত হস্তক্ষেপের বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করছে।
নেতৃদ্বয় বলেন, বাংলাদেশের সংবিধানের ৯৪(৪) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী বাংলাদেশের বিচার বিভাগ সম্পূর্ণরূপে স্বাধীনভাবে বিচারকার্য পরিচালনা করে থাকে। কাজেই এ ধরনের চিঠি প্রদানের মাধ্যমে তা অনৈতিক, বেআইনি ও অসাংবিধানিকভাবে বাংলাদেশের স্বাধীন বিচার ব্যবস্থার ওপর হস্তক্ষেপ বলে আমরা মনে করি। আরও উদ্বেগের সঙ্গে লক্ষ্যণীয় যে, চিঠিতে সাক্ষরকারী ব্যক্তিবর্গ ড. ইউনূসের স্বার্থ রক্ষায় আগ্রহী হলেও শ্রমিকদের মানবাধিকার ও আইনি সুরক্ষার বিষয়ে সম্পূর্ণরূপে নিশ্চুপ থেকেছেন। এ ধরনের বিবৃতি আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা (আইএলও) এবং বাংলাদেশের আইনে শ্রমিকদের অধিকার সংক্রান্ত বিধানাবলির সম্পূর্ণ পরিপন্থী।
ড. ইউনূসের বিরুদ্ধে অভিযোগের বিষয়ে তারা বলেন, শ্রম আইন ২০০৬ এর ধারা ২৩৪ অনুযায়ী, গ্রামীন টেলিকমের বিরুদ্ধে শ্রমিক কর্মচারি কল্যাণ তহবিল গঠন করা এবং ধারা ৪(৭) ৪(৮) অনুযায়ী শ্রমিকদের চাকুরিতে স্থায়ী না করার অভিযোগ করেছে ড. মুহাম্মাদ ইউনূসের প্রতিষ্ঠানের কর্মচারীগণই। অধিকন্তু, অন্য একটি মামলায় বংলাদেশের সর্বোচ্চ আদালত কর্তৃক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের বিরুদ্ধে কর ফাঁকি দেয়ার অভিযোগ চূড়ান্তভাবে প্রমাণিত হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রীকে দেওয়া খোলা চিঠি প্রদানকারীদের সমালোচনা করে ও নিজেদের অবস্থান পরিষ্কার করে বিবৃতিতে বলা হয়, আমাদের জানা মতে, খোলা চিঠিতে যে সব সম্মানিত ব্যক্তিদের নাম রয়েছে, তাদের দেশেও শ্রমিকদের অধিকার ও রাষ্ট্রীয় বিধিবিধানকে সর্বোচ্চ সম্মান ও গুরত্বের সঙ্গে দেখা হয়। তা ছাড়া, একই চিঠিতে বাংলাদেশের গণতন্ত্র এবং নির্বাচন সংক্রান্ত বিষয়ে যে ধরনের মন্তব্য করা হয়েছে, স্বাধীন ও সার্বভৌম একটি রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে সরাসরি হস্তক্ষেপের শামিল। মহান মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে অর্জিত স্বাধীন দেশের নাগরিক হিসেবে বাংলাদেশের জনগণ এ ধরনের অবমাননাকর, অযাচিত ও বেআইনি হহস্তক্ষেপ কোনভাবেই মেনে নেবে না। এ ধরনের বিবৃতির পেছনে গোপন কোনো রাজনৈতিক উদ্দেশ্য নিহিত রয়েছে বলে প্রতীয়মান হয়। আমরা সংশ্লিষ্ট সবাইকে বাংলাদেশের বিচার ব্যবস্থা এবং শ্রমিকদের অধিকারের বিষয়ে সম্মান প্রদর্শনের জন্য আহ্বান জানাচ্ছি।