রাবির অধ্যাপক এনামুলকে পাঠদানসহ প্রশাসনিক দায়িত্ব থেকে দুই বছরের অব্যাহতি
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) মনোবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ও জিয়া পরিষদের সভাপতি এনামুল হককে দুই বছরের জন্য শ্রেণিকক্ষে পাঠদান, পরীক্ষা সংক্রান্ত বিষয় ও প্রশাসনিক সকল দায়িত্ব থেকে তাকে এ অব্যাহতি দেওয়া হয়৷ বিশ্ববিদ্যালয়ের একাধিক সিন্ডিকেট সদস্য এনটিভি অনলাইনকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তার বিরুদ্ধে দুই নারী সহকর্মীকে যৌন হয়রানির অভিযোগ আছে। যদিও অব্যাহতির বিষয়টি ‘অফিসিয়ালি’ জানেন না বলে জানিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের যৌন নিপীড়ন বিরোধী সেলের আহ্বায়ক অধ্যাপক তানজিমা জোহরা হাবিব।
গতকাল রোববার (২২ অক্টোবর) রাতে অনুষ্ঠিত বিশ্ববিদ্যালয় ৫২৫তম সিন্ডিকেট সভায় তার বিরুদ্ধে এই সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন বিশ্ববিদ্যালয় উপাচার্য অধ্যাপক গোলাম সাব্বির সাত্তার।
গত ১২ জুন রাবির জিয়া পরিষদের নতুন কমিটিতে সভাপতির দায়িত্ব পেয়েছেন অধ্যাপক এনামুল হক। এর আগে তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের জাতীয়তাবাদী শিক্ষক ফোরামের আহ্বায়ক হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন৷
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের যৌন নিপীড়ন বিরোধী সেলের আহ্বায়ক অধ্যাপক তানজিমা জোহরা হাবিব এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘সহকর্মীকে যৌন হয়রানির অভিযোগে অধ্যাপক এনামুল হকের বিরুদ্ধে একটি তদন্ত কমিটি গঠিত হয়েছিল৷ তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে কয়েকটি সুপারিশসহ প্রতিবেদন জমা দেওয়া হয়৷ সেই সুপারিশ অনুযায়ী গতকাল বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট সভায় ওই অধ্যাপকের বিরুদ্ধে শাস্তির সিদ্ধান্ত গ্রহণ করার বিষয়টি আমিও শুনেছি৷ তবে, এখনো অফিশিয়ালি কোনো চিঠি পাইনি৷’
গত ২১ মে বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোবিজ্ঞান বিভাগের দুই নারী সহকর্মীর সঙ্গে অশালীন অঙ্গভঙ্গি প্রদর্শন ও যৌন হয়রানিমূলক আচরণের অভিযোগ ওঠে অধ্যাপক এনামুল হকের বিরুদ্ধে। এ ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য বরাবর নয়জন শিক্ষকের পক্ষে একটি লিখিত অভিযোগ দেন বিভাগটির সভাপতি অধ্যাপক মাহবুবা কানিজ কেয়া। অভিযোগের প্রেক্ষিতে তদন্ত কমিটি গঠন করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। ঘটনা তদন্ত করে কিছু সুপারিশসহ প্রতিবেদন জমা দেওয়া হয় কমিটি।
জিয়া পরিষদের জ্যেষ্ঠ যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক কুদরত-ই জাহান বলেন, ‘রাজনৈতিকভাবে হেয় পতিপন্ন করার জন্য অধ্যাপক এনামুল হকের বিরুদ্ধে এ ধরনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। কয়েকদিন আগে বিজ্ঞান অনুষদের একটি বিভাগে উনার চেয়ে আরও গুরুতর অভিযোগ আসে৷ বিশ্ববিদ্যালয়ে এ ধরনের ঘটনা প্রায়ই ঘটে। কিন্তু, অনেক সময় এসব বিষয়ে কোনো তদন্ত কমিটিই গঠিত হয় না। সেখানে তার বিরুদ্ধে এতো দ্রুত সিদ্ধান্ত নেওয়াটা উদ্দেশপ্রণোদিত।’
এ বিষয়ে জানতে চাইলে অধ্যাপক এনামুল হক বলেন, ‘এ ধরনের সিদ্ধান্ত হয়ে থাকলে, এটা আমার সঙ্গে অন্যায় হয়েছে৷ শিক্ষার্থীদের একাডেমিক বিষয় নিয়ে বাকবিতণ্ডাকে রঙ লাগিয়ে আমার বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির অভিযোগ তুলেছে বিভাগের সভাপতি ও আরেক নারী সহকর্মী। এমনকি, তদন্ত কমিটি বিভাগের চার শিক্ষকের কোনো সাক্ষাৎকার নেয়নি।’ তিনি বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ইচ্ছাকৃতভাবে আমার বিরুদ্ধে সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এ বিষয়ে আমি কোনো চিঠি পাইনি। চিঠি হাতে পেলে আমি আইনের আশ্রয় নেব।’