‘ঢাকা গেইট’র উদ্বোধন আজ বিকেলে
সংস্কারের পর আজ বুধবার উদ্বোধন করা হবে ‘ঢাকা গেইট’। পুরনো আদলে নতুন করে সংস্কার করা হয়েছে ফটকটি। বর্তমানে ঢাকা গেইট নামে পরিচিত হলেও পূর্বে এটি পরিচিত ছিল ‘মীর জুমলা গেট’ নামে। কারণ ঢাকার সুবেদার মীর জুমলা ঢাকাকে শত্রুদের হাত থেকে রক্ষা করার জন্যই খুব প্রশস্তভাবে তৈরি করেছিলেন গেইটটি।
আজ বুধবার (২৪ জানুয়ারি) বিকেল ৪টায় উদ্বোধন করা হবে ফটকটি। উদ্বোধনের পরে জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হবে বলে জানিয়েছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকবেন ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপস, ইতিহাসবিদ মুনতাসীর মামুন ও ফটকের নতুন নকশাকার অধ্যাপক আবু সাঈদ।
ঢাকা গেইটের নান্দনিকতা ফেরাতে ২০২২ সালে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের সংস্কারের উদ্যোগ নেয়। গত বছরের মে মাসে সংস্কার কাজ শুরু হয়, যার কাজ সম্প্রতি শেষ হয়েছে। প্রায় ৮২ লাখ টাকা খরচ করে এ গেইট সংস্কার করেছে ঠিকাদার কোম্পানি আহনাফ ট্রেডিংস।
ঐতিহাসিক সূত্রে জানা গেছে, মোঘল আমলে বুড়িগঙ্গা নদী হয়ে ঢাকায় প্রবেশ করতে ব্যবহার করা হতো এই তোরণ। সেই সময় এর নাম ছিল ‘মীর জুমলার গেট’। পরে কখনো ‘ময়মনসিংহ গেট’ কখনো ‘ঢাকা গেইট’এবং অনেক পরে নামকরণ করা হয় ‘রমনা গেট’।
মুঘল আমলের সুবেদার মীর জুমলাই যে এই গেটটি নির্মাণ করেছিলেন তা নিয়েও অনেক দ্বিমতও রয়েছে। বিভিন্ন ইতিহাসবিদ বর্তমান গেটটি পরীক্ষা করে জানিয়েছেন এটি মুঘল আমলের তৈরি হওয়া কোনো স্থাপনা নয়। ১৮২০ থেকে ১৮২৫ সালের মধ্যেই অর্থাৎ ইংরেজদের শাসনামলে মূল শহরের সঙ্গে রেসকোর্স ময়দানকে যুক্ত করার জন্যে এই গেটটি নির্মাণ করা হয়। ঐতিহাসিক এই গেটটি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকার দোয়েল চত্ত্বরের পাশেই অবস্থিত। তিনটি অংশে বিভক্ত ঐতিহাসিক এই গেটটি।
পশ্চিমাংশ পড়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার সায়েন্স ভবনের পাশ, পূর্বের অংশ পড়েছে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের তিন নেতার সমাধির প্রবেশপথের সামনে এবং মাঝের অংশ পড়েছে দোয়েল চত্বর থেকে টিএসসিগামী সড়ক দ্বীপে। বর্তমানে ফটকটির উপর দিয়ে চলাচল করে মেট্রোরেল। কিছুদিন আগেও এর অবস্থা দেখে কেউ বলতে পারতো না যে এটি একটি ঐতিহাসিক স্থাপনা।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, পুরনো আদলে সংস্কার করা হয়েছে ফটকটি। এর আশেপাশে দর্শনার্থীদের জন্য বসার জায়গা করা হয়েছে। মীর জুমলার আসাম অভিযানের ‘বিবি মরিয়ম’ কামানটি ওসমানী উদ্যান থেকে এনে ঢাকা গেইটের পাশে স্থাপন করা হয়েছে।
প্রত্নতত্ত্ব বিশেষজ্ঞ ও ইউনিভার্সিটি অফ এশিয়া প্যাসিফিকের শিক্ষক স্থপতি ড. আবু সাঈদের নেতৃত্বে বিশেষজ্ঞ দলের করা নকশার আদলেই এই স্থাপনার সংস্কার কাজ করা হয়েছে।
এ বিষয়ে অধ্যাপক আবু সাঈদ বলেন, “যেটা আগে ছিল, ওটাকেই আমরা রিস্টোরেশন করেছি। কিছু জিনিস ভেঙে গিয়েছিল, সেগুলো নতুন করে প্রতিস্থাপন করা হয়েছে। ফটকের উপর কলসের মতো যে জিনিসগুলো, একটা কর্ণারে বুরুজ ভাঙা ছিল, সেগুলো আমরা সংস্কার করেছি। তার মানে আদি যে ডিজাইনটা ছিল, সেটাকেই আবার নতুনভাবে করা হয়েছে। তবে সেখানে নতুন করে বসার স্থান এবং মীর জুমলার ‘বিবি মরিয়ম’ কামানটা সংযোজন করা হয়েছে।”