রাবিতে ‘শতবর্ষে আবুল মনসুর আহমদের সাংবাদিকতার প্রাসঙ্গিকতা’ শীর্ষক আলোচনা সভা
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে শতবর্ষে আবুল মনসুর আহমদের সাংবাদিকতার প্রাসঙ্গিকতা শীর্ষক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। আজ বুধবার (২৪ জানুয়ারি) সকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ সুখরঞ্জন সমাদ্দার ছাত্র-শিক্ষক সাংস্কৃতিক কেন্দ্রে সভাটি অনুষ্ঠিত হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ এবং আবুল মনসুর আহমদ স্মৃতি পরিষদ যৌথভাবে এই সভার আয়োজন করে৷
অনুষ্ঠানে অতিথি ছিলেন অর্থনীতিবিদ ও প্রাবন্ধিক অধ্যাপক ড. সনৎ কুমার সাহা এবং দ্য ডেইলি স্টার সম্পাদক ও প্রকাশক মাহফুজ আনাম৷ আবুল মনসুর আহমদকে নিয়ে প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সাংবাদিক ও গবেষক ড. কাজল রশীদ শাহীন৷
এছাড়া বর্তমানের সঙ্গে তার সাংবাদিকতার প্রাসঙ্গিকতা নিয়ে আলোচনা করেন দৈনিক সমকাল-এর প্ল্যানিং এডিটর ফারুক ওয়াসিফ, গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক তানভীর আহমেদ এবং আবুল মনসুর আহমদ স্মৃতি পরিষদের আহ্বায়ক ইমরান মাহফুজ।
বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ও প্রাবন্ধিক অধ্যাপক সনৎ কুমার সাহা বলেন, আবুল মনসুর আহমদের ব্যাপারে আমার কৌতূহল আছে। তার লেখাপড়ার মাধ্যমে আমি সাংবাদিকতার অনেক বিষয় সম্পর্কে জানতে পেরেছি। আবুল মনসুর আহমদ তার লেখায় নিজের সত্ত্বাকে বজায় রেখেছেন। আবুল মনসুর আহমদকে পড়ার মাধ্যমে আমরা বিস্তর বিষয় সম্পর্কে জানতে পারি। আমরা চাই সাংবাদিকরা যেন নীতিনৈতিকতার মাধ্যমে তাদের কাজ করে যান।
অনুষ্ঠানে দ্য ডেইলি স্টার সম্পাদক ও প্রকাশক মাহফুজ আনাম বলেন, সাংবাদিকতা হচ্ছে মত প্রকাশের স্বাধীনতার একটি দৈনন্দিন উপকরণ। এর মাধ্যমে দৈনিক চিন্তা ও মত প্রকাশের স্বাধীনতা উপভোগ করা যায়। অন্য কোনো পেশায় সেই সুযোগ কম৷ তবে এটির নাম করে দায়িত্বহীন মতামত, অসত্য তুলে ধরা এবং অন্যকে হেয় করে কথা বলাও এক ধরনের স্বাধীনতা, সেটি বিকৃত স্বাধীনতা।
ডেইলি স্টার সম্পাদক আরও বলেন, মত প্রকাশের স্বাধীনতা সেই সমাজেই প্রতিষ্ঠিত হয়, যেখানে একটা নৈতিক পরিবেশে মত প্রকাশ করা যায়। যেখানে কেউ মিথ্যা কথা বলবে না, অসত্য তথ্যকে খুব সুন্দরভাবে তুলে ধরবে না, কাউকে হেয় পতিপন্ন করে কথা বলবে না। অর্থাৎ মতটা যেন খুব সুচিন্তিত, গবেষণাধর্মী ও তথ্যভিত্তিক হয়৷ তাহলেই মত প্রকাশটা সমাজকে উন্নত স্তরে এগিয়ে নিয়ে যায়। আমি প্রতিবেদন, মন্তব্য বা যা খুশি লিখব কিন্তু সেটা যেন দায়িত্বশীল মতামত, গবেষণা ও তথ্যভিত্তিক হয়।
অনুষ্ঠানে আবুল মনসুর আহমদের জীবনী নিয়ে ডেইলি স্টার সম্পাদক আরও বলেন, আবুল মনসুর আহমদ বাঙালি মুসলমানদের জন্য সবসময় চিন্তা করতেন। তিনি আদর্শিক জীবনযাপন করে গেছেন। শৈশবকাল থেকে আত্মসম্মানবোধের অধিকারী ছিলেন। আবুল মনসুর আহমদ ছিলেন একাধারে সাহিত্যিক ও রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব। ব্রিটিশ আমলে তিনি শেরে বাংলা এ কে ফজলুল হক এবং হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর সঙ্গে রাজনীতি করেছেন। বাংলা ভাষার অধিকার আদায়ে তার অবদান অনস্বীকার্য। ‘আমার দেখা রাজনীতির পঞ্চাশ বছর’ বইয়ে তিনি রাজনীতির নানা বিষয় তুলে ধরেছেন।
অনুষ্ঠানে আবুল মনসুর আহমদকে নিয়ে প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সাংবাদিক ও গবেষক ড. কাজল রশীদ শাহিন। তিনি বলেন, বাংলাদেশের নবজাগরণের দার্শনিক ভিত্তি প্রতিষ্ঠায় উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করেন আবুল মনসুর আহমদ। সাংবাদিক-সম্পাদক হিসেবে ও বহুমাত্রিক লেখালেখির মধ্য দিয়ে এবং পরবর্তী সময়ে সক্রিয়ভাবে রাজনীতিতে অংশগ্রহণ করে বৈশ্বিক পরিমণ্ডলে রেখে গেছেন সক্রিয় ও দিকনির্দেশক ভূমিকা। সাংবাদিকদের মৌলিক বিষয় হচ্ছে প্রশ্ন করার ক্ষমতা। আমরা তার শৈশবে দেখতে পাই সমাজ সংস্কারের নানাবিধ প্রশ্ন করার মাধ্যমে তিনি ধীরে ধীরে খ্যাতিমান একজন সংবাদিকে পরিণত হয়েছিলেন।
আলোচক হিসেবে দৈনিক সমকাল পত্রিকার প্লানিং এডিটর ফারুক ওয়াসিফ বলেন, আবুল মনসুর আহমদের উত্থানের মাধ্যমে মফস্বলের উত্থান হয়েছে। তার সময়ে সমাজে নানান বৈষম্য ছিল। তিনি সবসময় বৈষম্যের বিরুদ্ধে কাজ করে গেছেন। তিনি সমতায় বিশ্বাসী ছিলেন। সে সময় মুসলমানরা নানাদিক থেকে পিছিয়ে ছিল বলে তাদের অধিকার আদায়ে কাজ করে গেছেন। তিনি ধর্মের ভিত্তিতে না বরং সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের জন্য কাজ করেছেন।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক মুসতাক আহমেদ। একই বিভাগের অধ্যাপক মোজাম্মেল হোসেন বকুলের সঞ্চালনায় বিভিন্ন বিভাগের দুই শতাধিক শিক্ষক, শিক্ষার্থী উপস্থিত ছিলেন৷