যৌন নিপীড়নের প্রতিবাদে উত্তাল চবি ক্যাম্পাস
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) রসায়ন বিভাগের শিক্ষার্থীকে এক শিক্ষকের যৌন হয়রানি ও ধর্ষণচেষ্টার লিখিত অভিযোগের ঘটনায় অভিযুক্ত শিক্ষককে বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক ও প্রশাসনিক কার্যক্রম থেকে অব্যাহতি দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। এর আগে আজ বৃহস্পতিবার (১ ফেব্রুয়ারি) সকাল থেকে ঘটনার সুষ্ঠু বিচার চেয়ে মানববন্ধন করেছে রসায়ন বিভাগের শিক্ষার্থীরা।
শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের সঙ্গে একাত্মতা পোষণ করেছে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের একাংশ।
আজ সকালে ঘটনার সুষ্ঠু বিচার চেয়ে শহীদ মিনারের সামনে মানববন্ধন করে রসায়ন বিভাগের শিক্ষার্থীরা। দুপুরে আড়াইটা থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনের সামনে অবস্থান নেয় তারা। মানববন্ধনে অংশ নেওয়া রসায়ন বিভাগের শিক্ষার্থী সালমা বেগম বলেন, সহপাঠীকে যৌন হয়রানির প্রতিবাদে আমরা আজ আন্দোলনে নেমেছি। বিভাগের শিক্ষকরাও এতে সংহতি জানিয়েছেন। আমরা এখন শান্তিপূর্ণ অবস্থানে আছি। যদি আমরা সুষ্ঠু বিচার না পাই তবে কঠোর আন্দোলনে যাব।
রসায়ন বিভাগের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে একাত্মতা পোষণ করে দুপুর ২টায় মানবন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশ করে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের একাংশ।
শাখা ছাত্রলীগের সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মো. ইলিয়াস বলেন, একজন ছাত্রীকে শিক্ষকের ধর্ষণচেষ্টার যে অভিযোগ, আমরা চাই বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে দ্রুত এই বিষয়ে ব্যবস্থা নিক। এই বিষয়ে সময়ক্ষেপণ বা কোনো টালবাহানা চলবে না।
এ দিকে আজ সকাল ১১টায় রসায়ন বিভাগের একাডেমিক কমিটির সভা অনুষ্ঠিত হয়। এতে অভিযুক্ত শিক্ষক অধ্যাপক মাহাবুবুল মতিনকে বিশ্ববিদ্যালয়ের সব একাডেমিক ও প্রশাসনিক কাজ থেকে বিরত রাখার সুপারিশ করা হয়। পরে এই বিষয়ে আদেশ জারি করে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।
তবে অভিযোগ অস্বীকার করেছেন অভিযুক্ত ওই শিক্ষক।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার কে এম নুর আহমদ স্বাক্ষরিত আদেশে বলা হয়, ‘আপনার বিরুদ্ধে রসায়ন বিভাগের শিক্ষার্থীদের আনীত অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে ১ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪ তারিখ অনুষ্ঠিত রসায়ন বিভাগের একাডেমিক কমিটির সুপারিশের আলোকে আপনাকে পুনরাদেশ না দেওয়া পর্যন্ত রসায়ন বিভাগসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের সব একাডেমিক ও প্রশাসনিক কার্যক্রম থেকে আদেশক্রমে বিরত রাখা হলো।’
চবির ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার কে এম নুর আহমদ বলেন, বিভাগের একাডেমিক কমিটির সুপারিশে বিশ্ববিদ্যালয়ের সব একাডেমিক ও প্রশাসনিক কার্যক্রম থেকে তাঁকে আপাত বিরত রাখা হয়েছে। অভিযোগ কমিটির রিপোর্টের ভিত্তিতে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
এই বিষয়ে রসায়ন বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক ড. দেবাশীষ পালিত বলেন, ‘আমরা কেউ এই ব্যাপারটাকে সমর্থন করি না। আমাদের একজন কলিগের ব্যাপারে এই রকম একটা অভিযোগ এসেছে—এর জন্য আমরা লজ্জিত। এটা একটা তাৎক্ষণিক সিদ্ধান্ত। ভবিষ্যতে যাতে এই ঘটনার পুনরাবৃত্তি না হয় সে বিষয়ে আমরা কাজ করব। আমরা এই বিষয়ে একটা স্থায়ী সিদ্ধান্ত নিব।’
চবির যৌন নির্যাতন সেলের সদস্য সচিব অধ্যাপক ড. আব্দুল্লাহ ফারুক বলেন, ‘এই বিষয়ে কাজ শুরু হয়েছে। আমরা দ্রুত সময়ের মধ্যে রিপোর্ট দেওয়ার চেষ্টা করব।’
গতকাল বুধবার চবির যৌন নির্যাতন সেলের মাধ্যমে উপাচার্য বরাবর লিখিত অভিযোগ দেন রসায়ন বিভাগের ২০১৭-১৮ সেশনের ওই ছাত্রী।
অভিযোগপত্রে ওই ছাত্রী থিসিস চলাকালীন সুপারভাইজার কর্তৃক যৌন হয়রানি ও যৌন নিপীড়নের শিকার হওয়ার কথা উল্লেখ করেন এবং ঘটনার ন্যায়বিচার চান।