নৌবাহিনী কলেজ ঢাকা আজ ছিল খেলাধুলার আনন্দ-উচ্ছ্বাসে মুখর
সকাল থেকেই উৎসবের আমেজ ছিল নৌবাহিনী কলেজ ঢাকায়। বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতার এ দিনে মূল অনুষ্ঠান উদ্বোধনের পর নান্দনিক কুজকাওয়াজে অংশ নেন শিক্ষার্থীরা। পরে বিভিন্ন ইভেন্টের বিজয়ীদের উচ্ছ্বাস, আর দর্শকের সারিতে অপরাপর শিক্ষার্থী-অভিভাবক ও শিক্ষকদের করতালিমুখর ছিল ক্যাম্পাস।
২০টিরও বেশি ইভেন্টে শিক্ষার্থীরা জিতে নেন প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় স্থান। ‘যেমন খুশি তেমন সাজো’ ছিল উল্লেখযোগ্য। এ ছাড়া আমন্ত্রিত নারী অতিথিদের জন্য ‘পিলো পাসিং’ বা বালিশ খেলাও উপভোগ্য করে তোলে অন্যদের।
বিকেল ৫টায় বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতার সমাপনী অনুষ্ঠানে বিজয়ীদের হাতে তুলে দেওয়া হয় পুরস্কার। ঢাকা নৌ অঞ্চলের কমান্ডার রিয়ার এডমিরাল ও অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি মাসুদ ইকবাল কলেজটির অধ্যক্ষ ক্যাপ্টেন সালাহউদ্দিনের সভাপতিত্বে পুরস্কার বিতরণীতে অংশ নেন।
পরে প্রধান অতিথি শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে বলেন, মানুষের জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সময় ছাত্রজীবন। একজন মানুষ জীবনে কতটা সফল এবং সুখী হবে তা নির্ভর করে ছাত্র জীবনের ওপর। কাজেই এ সময়টিকে সর্বোচ্চ সতর্কতা ও যত্নের সাথে ব্যবহার করা দরকার। শুধু লেখাপড়ার মধ্যেই জীবন সীমাবদ্ধ থাকে না। সুস্থ ও কর্মক্ষম মানুষ হিসেবে বড় হবার জন্য প্রয়োজন শারীরিক ও মানসিক যোগ্যতা অর্জন, কষ্ট সহিষ্ণুতা ও মনোবল। খাদ্য শরীরকে পরিপুষ্ট করে আর নিয়মিত শরীরচর্চা, খেলাধুলা শরীরকে করে বলিষ্ঠ, মনকে করে উদ্যমী ও কষ্টসহিষ্ণু। শারীরিক ও মানসিক ভাবে সুস্থ ও কর্মক্ষম একজন মানুষ তার জ্ঞান ও বুদ্ধিবৃত্তিকে উপযুক্তভাবে কাজে লাগাতে সক্ষম হয়। এ কথাটি আমাদের মনে রাখতে হবে।
মাসুদ ইকবাল বলেন, ‘নৌবাহিনী কলেজ, ঢাকা একটি নিয়মনিষ্ঠ, শৃঙ্খলাবদ্ধ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। এ প্রতিষ্ঠানের উদ্দেশ আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে যোগ্য, বিকশিত এবং প্রতিশ্রুতিশীল নাগরিক হিসেবে গড়ে তোলা। নৌবাহিনী কলেজ, ঢাকার সে সক্ষমতা রয়েছে। স্বল্প পরিসরে হলেও আমাদের রয়েছে একটি পূর্ণাঙ্গ প্রতিষ্ঠানের যাবতীয় সুযোগ সুবিধা। রয়েছেন যোগ্যতা সম্পন্ন শিক্ষক শিক্ষিকা। এ প্রতিষ্ঠানে নিয়মিত সহশিক্ষামূলক কার্যক্রমে অংশ গ্রহণের সুযোগ রয়েছে। তোমাদের জন্য তৈরি হয়েছে খেলাধুলার আধুনিক সরঞ্জাম সমৃদ্ধ একটি স্পোর্টস কমপ্লেক্স। আমি মনে করি, ঢাকা শহরে খুব কম শিক্ষা প্রতিষ্ঠানেই এ সকল সুযোগ সুবিধা রয়েছে। আমার প্রত্যাশা থাকবে, শরীরচর্চা এবং খেলাধুলায় তোমাদের অংশগ্রহণ কলেজের গণ্ডি ছাড়িয়ে সারাদেশে এবং আন্তর্জাতিক পর্যায়ে ছড়িয়ে পড়বে।
প্রধান অতিথি আরও বলেন, মানুষ হিসেবে জন্ম নেওয়ার আনন্দ যেমন অপরিসীম, তেমনি এর দায়িত্বও অনেক। সারাজীবন ধরেই নানা দায়িত্ব কর্তব্যের ভেতর দিয়ে প্রতিটি মানুষকে জীবন অতিবাহিত করতে হয়। জীবনের দায়িত্বগুলো যাতে আমরা সহজভাবে পালন করতে পারি এবং এগুলো যাতে গুরুভার না হয়ে ওঠে সে জন্য আমাদেরকে অত্যন্ত সচেতন হতে হবে। আর এ সচেতনতা অর্জনের সময় এখনই। সময় নদীর মতো বহমান, তোমার জন্য অপেক্ষা করবে না। সময়ের সঙ্গে সমগতিতে তোমাকে প্রবাহিত হতে হবে। যদি আজকের কাজটি কালকের জন্য ফেলে রাখো, তুমি তোমার জীবনে পিছিয়ে যাবে, তোমাকে গ্রাস করবে হতাশা। আর হতাশা তোমার সম্ভাবনাগুলোকে নষ্ট করে দেবে। তাই, এখন থেকেই তোমাদেরকে ভবিষ্যৎ জীবনের দায়িত্ব গ্রহণের মানসিক প্রস্তুতি নিতে হবে। তোমাদের যার যা সম্ভাবনা আছে তার বিকাশ ঘটাতে গভীর মনোযোগের সঙ্গে কাজ করতে হবে।
অধ্যক্ষ ক্যাপ্টেন সালাহউদ্দিন বলেন, ভালো মানুষ হতে হলে পড়ালেখার পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের নানামুখী প্রতিভার বিকাশ ঘটাতে হবে। আমরা সেই দিকটা লক্ষ্য রেখে চলেছি। খেলাধুলা তার একটি অংশ। এবারের ক্রীড়া প্রতিযোগিতা অত্যন্ত উৎসাহ-উদ্দীপনার সঙ্গে উদযাপিত হয়েছে। কলেজের বিশাল মাঠ সাজানো হয়েছিল সুন্দরভাবে। খেলাধুলার পাশাপাশি বিভিন্ন বিনোদনমূলক অনুষ্ঠান দর্শকদের আনন্দ দিয়েছে। ছাত্রছাত্রীরা যে শৃঙ্খলার পরিচয় দিয়েছে, তা আজকের দিনে বিরল। তিনি আরও বলেন, প্রধান অতিথি তার ভাষণে যা বলেছেন তা ছাত্রছাত্রীদের মনে প্রেরণার উৎস হয়ে থাকবে।