বসন্ত উৎসবে মাতল ঢাবির টিএসসি
ঋতুরাজ বসন্ত উদযাপনে পঞ্চমবারের মতো বর্ণাঢ্য আয়োজন করেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) সাংস্কৃতিক সংসদ। গতকাল রোবাবর (১০ মার্চ) বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্র (টিএসসি) প্রাঙ্গণে এই বসন্ত উৎসবের আয়োজন করা হয়। নানা আয়োজনে বরণ করা হয় বসন্তকে।
সকাল ১০টায় গ্রামীণ মেলা উদ্বোধনের মাধ্যমে শুরু হয় দিনব্যাপী এ আয়োজন। আয়োজকদের মতে, এক টুকরো গ্রামবাংলাকে ঢাকা শহরের বুকে নিয়ে আসাই ছিল এই মেলার মূল লক্ষ্য।
উৎসবের আয়োজনের মধ্যে ছিল বানর নাচ, সাপ খেলা, পুতুল নাচ, বায়োস্কোপ, মোরগ লড়াই, পুঁথিপাঠ, নাগরদোলা, কীর্তন, টিয়া পাখির সাহায্যে ভাগ্যগণনাসহ ঐতিহ্যবাহী গ্রামীণ ও লৌকিক সংস্কৃতির নানা আয়োজন, যা দেখে মেলায় আসা হাজারো দর্শনার্থী তাদের শৈশবের দিনগুলোতে ফিরে যান। গ্রামীণ ঐতিহ্যকে পরবর্তী প্রজন্মের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিতে অনেকেই পরিবারের ছোট সদস্যদের নিয়ে আসেন মেলায়।
মেলায় আসা ফারুক হোসেন এনটিভি অনলাইনকে বলেন, গ্রামীণ অনেক ঐতিহ্যই বর্তমানে হারিয়ে যাওয়ার পথে। সে সব ঐতিহ্যের সঙ্গে আমাদের নতুন প্রজন্ম পরিচিত হতে পারছে না, যা সত্যিই দুঃখজনক। গ্রামীণ সে সব ঐতিহ্যের অনেক কিছুই এই মেলায় নিয়ে এসেছে আয়োজকরা। ফলে শিশু থেকে প্রাপ্তবয়স্ক সবাই মেলা উপভোগ করছে।
এ ছাড়া এ মেলায় ছিল বিভিন্ন ধরনের সাজসজ্জার অলঙ্কার, হাতের নকশা করা জামা-কাপড়, মাটির তৈরি সামগ্রীসহ বিভিন্ন ধরনের স্টল।
দুপুর ৩টায় আলোচনা ও গুণীজন সম্মাননা পর্বে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সমাজকল্যাণ মন্ত্রী ডা. দীপু মনি। এ আয়োজনের উদ্বোধক ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. সীতেশ চন্দ্র বাছার। মুখ্য আলোচক ছিলেন সিরাজগঞ্জ-১ আসনের সংসদ সদস্য প্রকৌশলী তানভীর শাকিল জয়। এ ছাড়া গেস্ট অব অনার হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. সৌমিত্র শেখর।
সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব হিসেবে গুণীজন সম্মাননা গ্রহণ করেন সঙ্গীতশিল্পী ও স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের শব্দসৈনিক রফিকুল আলম, একুশে পদকপ্রাপ্ত নৃত্যশিল্পী শামীম আরা নিপা, সঙ্গীতশিল্পী আবিদা সুলতানা এবং অভিনয়শিল্পী ডা. এজাজুল ইসলাম। এ ছাড়া বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন টিএসসি উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. সিকদার মনোয়ার মুর্শেদ এবং অভিনয়শিল্পী মনোজ প্রামাণিক। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সাংস্কৃতিক সংসদের মডারেটর সহযোগী অধ্যাপক সাবরিনা সুলতানা চৌধুরী।
এ সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. সীতেশ চন্দ্র বাছার বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সবসময় শিক্ষার্থীদের সংস্কৃতিমনা করে গড়ে তুলতে চায় । এ ধরনের আয়োজনের জন্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সাংস্কৃতিক সংসদকে সাধুবাদ জানাই।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে সমাজকল্যাণ মন্ত্রী ডা. দীপু মনি বলেন, আমরা সাফল্য তখনই বেশি পেয়েছি যখন রাজনীতি এবং সংস্কৃতি কাঁধে কাঁধ রেখে চলেছে। আমরা বাঙালিরা আমাদের ইতিহাস, সংস্কৃতি, ভাষা, শক্তি সবকিছু নিয়ে এগিয়ে যাব। বিশ্ববিদ্যালয় কেবল জ্ঞান অর্জন নয়, জ্ঞান সৃষ্টির জায়গা।
জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. সৌমিত্র শেখর বলেন, সংস্কৃতির সঙ্গে লেখাপড়ার একটি সুন্দর সংযোগ আছে। সংস্কৃতি ও শিক্ষার মেলবন্ধন রক্ষা করতে হবে যাতে সবাই সুসংগঠিত একটি প্রজন্ম পেতে পারি। বসন্তের মাধ্যমে প্রাণের সঞ্চার ঘটে, বসন্ত প্রাণে নতুন উদ্যম জাগ্রত করে।
আলোচনা সভা শেষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সাংস্কৃতিক সংসদের শিল্পীদের মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক পরিবেশনা অনুষ্ঠিত হয়। এরপর জনপ্রিয় ব্যান্ডদল ‘এভয়েডরাফা’ ও ‘কৃষ্ণপক্ষ’র সঙ্গীত পরিবেশনার মধ্য দিয়ে দিনব্যাপী এ আয়োজনের সমাপ্তি ঘটে।