বুয়েটে ছাত্ররাজনীতি প্রতিরোধে শিক্ষার্থীদের ৫ দফা
বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বুয়েট) ছাত্রলীগের শীর্ষস্থানীয় নেতাদের রাজনৈতিক বহর নিয়ে ক্যাম্পাসে প্রবেশের প্রতিবাদে মানববন্ধন করেছেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা। আজ শুক্রবার (২৯ মার্চ) দুপুর ২টা থেকে বুয়েটের শহীদ মিনারে মানববন্ধন ও সংবাদ সম্মেলন করেন আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা।
জানা যায়, গতকাল বৃহস্পতিবার দিনগত রাত ১টার দিকে ছাত্রলীগের শীর্ষ স্থানীয় কয়েকজন নেতা তাঁদের রাজনৈতিক বহর নিয়ে ক্যাম্পাসের মূল গেট দিয়ে প্রবেশ করেন। জানতে পেরে শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসে পুনরায় রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড শুরু হওয়া ও নিরাপত্তাহীনতার আশঙ্কায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে প্রশ্নবিদ্ধ করে আন্দোলন শুরু করে।
শিক্ষার্থীরা জানায়, রাত সাড়ে ১০ টার পরে যেখানে নিরাপত্তাজনিত কারণে শিক্ষার্থীদের ক্যাম্পাসে ঢোকার অনুমতি নেই, সেখানে রাত ১টার দিকে একটি রাজনৈতিক দলের শীর্ষ স্থানীয় কয়েকজন নেতা তাদের রাজনৈতিক বহর নিয়ে ক্যাম্পাসের মূল গেট দিয়ে প্রবেশ করে কেমনে। ঘটনার তীব্রতা বাড়তে থাকে রাত বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে, একের পর এক বহিরাগত রাজনৈতিক নেতাকর্মীর মোটরসাইকেল, প্রাইভেট কার ক্যাম্পাসের মেইন গেইটের সামনে আসতে থাকে। বিপুল বহিরাগত ক্যাম্পাসে অনায়াসে প্রবেশ করতে থাকে, এবং এক পর্যায়ে সেখানে উপস্থিত সাধারণ শিক্ষার্থীরা দেখতে পায়, মিছিলের মতো করে বিশাল একটি জনবহর হাতে ফুলের তোড়া নিয়ে রাত ২টার পর প্রবেশ করতে থাকে।
লিখিত বক্তব্যে শিক্ষার্থীরা জানায়, এতে সক্রিয়ভাবে যুক্ত ছিল বিশ্ববিদ্যালয়ের ২১ ব্যাচের পুরকৌশল বিভাগের শিক্ষার্থী ইমতিয়াজ রাব্বী। যে রাজনৈতিক সংগঠনের কেন্দ্রীয় কমিটির একজন সদস্য। শিক্ষার্থীদের প্রতিবাদের মুখে ক্যাম্পাসের অরাজনৈতিক পরিবেশ অক্ষুণ্ণ রাখতে তাঁর পদ থেকে অব্যাহতি নিবেন বলে জানান, কিন্তু তার পরও প্রকাশ্যে তার রাজনীতি ধরে রেখেছেন। ২৮ মার্চ মধ্যরাতে বহিরাগতদের সঙ্গে যোগাযোগ, তাদের ক্যাম্পাসে প্রবেশ করানো, গার্ডদের সঙ্গে কথা বলা, রাজনৈতিক নেতাকর্মীদের সঙ্গে সাক্ষাৎ, তাদের গাড়ি বের করানো কিংবা প্রবেশ করানো এসবে তাঁকে সক্রিয় ভূমিকায় দেখা যায়।
শিক্ষার্থীরা আরও জানায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের নীতিমালা অনুযায়ী সাংগঠনিক রাজনীতি নিষিদ্ধ এমন একটি ক্যাম্পাসে রাতের আঁধারে ঘটে যাওয়া এত বড় একটি রাজনৈতিক সমাগম এবং বহিরাগতদের আগমন ক্যাম্পাসের মর্যাদার প্রতি অপমানজনক। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন এবং ছাত্রকল্যাণ দপ্তর এই ন্যক্কারজনক ঘটনা ক্যাম্পাসে ঘটে যাওয়ার দায় এড়াতে পারে না। ঘটনা ঘটে যাওয়ার দেড় দিন পার হয়ে গেলেও ছাত্রকল্যাণ দপ্তরের (ডিএসডব্লিউ) পরিচালক মিজানুর রহমান থেকে উক্ত ঘটনার সাথে সম্পর্কিত কোনো প্রকার সদুত্তর এবং জবাবদিহিতা এখন পর্যন্ত সাধারণ শিক্ষার্থীদের কাছে আসেনি।
শিক্ষার্থীদের পাঁচ দফা
১. বিশ্ববিদ্যালয়ের সুস্পষ্ট বিধিমালা লঙ্ঘনের দায়ে ইমতিয়াজ রাব্বিকে বুয়েট থেকে স্থায়ী বহিষ্কার এবং হল বাতিল।
২. ওই ঘটনায় ইমতিয়াজ রাব্বির সঙ্গে বুয়েটের বাকি যেসব শিক্ষার্থী জড়িত ছিল তাদের বিভিন্ন মেয়াদে হল এবং টার্ম বহিষ্কার।
৩. প্রথম দুটি দাবি আগামীকাল সকাল ৯টার মধ্যে বাস্তবায়ন করা না হলে ডিএসডাব্লিউর পরিচালকের পদত্যাগ।
৪. বহিরাগত রাজনৈতিক ব্যক্তি যারা ক্যাম্পাসে প্রবেশ করল তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে কি না, তারা কেন কীভাবে প্রবেশ করার অনুমতি পেল এই ব্যাপারে সুস্পষ্ট সদুত্তর এবং বুয়েট প্রশাসন থেকে জবাবদিহিতা।
৫. আন্দোলনরত বুয়েটের সাধারণ শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে কোনো রকম হয়রানিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া যাবে না—এই মর্মে লিখিত প্রতিশ্রুতি দিতে হবে।