শিক্ষার্থীদের দাবি পূরণে যা যা দরকার করা হয়েছে : বুয়েট উপাচার্য
বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) উপাচার্য অধ্যাপক ড. সত্যপ্রসাদ মজুমদার বলেছেন, ‘শিক্ষার্থীদের দাবিগুলোর সঙ্গে আমরাও সহমত। কিন্তু এগুলো পূরণে যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণের জন্য সময় প্রয়োজন। দাবি পূরণ করার জন্য যা যা করার, করা হয়েছে। তদন্ত প্রতিবেদন এলে আমরা নিয়ম অনুযায়ী ব্যবস্থা নেব। নিয়মের বাইরে আমি কিছু করতে পারব না।’
আজ শনিবার (৩০ মার্চ) বেলা সোয়া একটার দিকে নিজ কার্যালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে বুয়েট উপাচার্য এ কথা বলেন।
এর আধঘণ্টা আগে বুয়েট শিক্ষার্থীরা তাঁদের আজকের বিক্ষোভ কর্মসূচি শেষ করেন। বিক্ষোভ শেষ করার আগে শিক্ষার্থীরা আগামীকাল রোববারও টার্ম ফাইনাল পরীক্ষাসহ সব একাডেমিক কার্যক্রম বর্জন করার ঘোষণা দেন।
ক্যাম্পাসে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের প্রবেশ ও রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড চালানোর প্রতিবাদসহ ৬ দফা দাবিতে আজ দ্বিতীয় দিনের মতো বিক্ষোভ করেন বুয়েট শিক্ষার্থীরা। সকাল সাতটা থেকে শুরু করে বিক্ষোভ চলে দুপুর সাড়ে ১২টা পর্যন্ত।
গত বৃহস্পতিবার (২৮ মার্চ) দিনগত রাত ১টার দিকে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি, দপ্তর সম্পাদকসহ শীর্ষস্থানীয় কয়েকজন নেতা তাদের রাজনৈতিক কর্মীবহর নিয়ে মূল গেট দিয়ে বুয়েট ক্যাম্পাসে প্রবেশ করেন। এ ঘটনায় গতকাল শুক্রবার থেকে বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করছে বুয়েটের শিক্ষার্থীরা। আজ দ্বিতীয় দিনের মতো আন্দোলন শেষ করে আবার আগামীকাল থেকে তৃতীয় দিনের আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন তারা। দাবি আদায়ে আজ ও আগামীকালের (৩০ ও ৩১ মার্চ) পরীক্ষাসহ সব একাডেমিক কার্যক্রম বর্জনের ঘোষণা দেন শিক্ষার্থীরা।
লিখিত বক্তব্যে বুয়েটের শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে আরও জানানো হয়, গতকাল আমাদের আন্দোলনের পর তথাকথিত রাজনৈতিক সংগঠনের কিছু ব্যক্তিকে ফেসবুকে পোস্ট করে আমাদের আন্দোলনের উদ্দেশ্য নিয়ে অপপ্রচার চালাতে দেখি। আমরা তাদের এমন বক্তব্যের ধিক্কার জানাই। আমরা সব সময়ই বুয়েটের সংবিধানে থাকা ‘বুয়েটে সকল রকম ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ’এই আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল, সংঘবদ্ধ এবং যেকোনো মূল্যে বুয়েটকে ছাত্ররাজনীতির হাত থেকে মুক্ত রাখতে বদ্ধ পরিকর। আমরা আবারও সুস্পষ্ট করে বলতে চাই, আমাদের এসব দাবি কেবল কোনো বিশেষ ছাত্র রাজনৈতিক সংগঠনের বিরুদ্ধে নয়, বরং আমরা বুয়েটের সাধারণ শিক্ষার্থীরা বুয়েটের সংবিধান অনুযায়ী সব রকম ছাত্ররাজনীতির বিরুদ্ধে অবস্থান করছি।
শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ শেষ হওয়ার পর সাংবাদিকদের উপাচার্য বলেন, ‘ইমতিয়াজকে হল থেকে বহিষ্কার আমরা করতে পারি। কিন্তু টার্ম বহিষ্কার শৃঙ্খলা কমিটির বৈঠক ডেকে নিয়মতান্ত্রিক উপায়ে করতে হবে। শৃঙ্খলা কমিটির সভার জন্য তদন্ত প্রতিবেদন লাগবে। তদন্ত প্রতিবেদন ছাড়া শৃঙ্খলা কমিটি কোনো ব্যবস্থা নিতে পারবে না। এভাবে শাস্তি দেওয়া হলে আদালতে গিয়েও টিকবে না। ফলে তদন্ত লাগবে এবং তদন্তে অভিযুক্তকেও আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ দিতে হবে। আমাদের আইন ও নিয়ম অনুযায়ী চলতে হবে। আমরা তদন্ত কমিটি গঠন করেছি। আজকে তদন্ত কমিটি কাজ শুরু করেছে। ছয় সদস্যবিশিষ্ট এই কমিটিকে আগামী ৮ এপ্রিল পর্যন্ত সময় দেওয়া হয়েছে। প্রতিবেদন পাওয়ার পর এর সদস্যদের মতামতও আমরা শুনব।’
শিক্ষার্থীদের দাবিগুলোর সঙ্গে সহমত পোষণ করে বুয়েট উপাচার্য বলেন, ‘কিন্তু সকাল ৯টা, বেলা ২টা—এভাবে ব্যবস্থা নেওয়া সম্ভব নয়। দাবি পূরণ করার জন্য যা যা করার, করা হয়েছে। তদন্ত প্রতিবেদন এলে আমরা নিয়ম অনুযায়ী ব্যবস্থা নেব। নিয়মের বাইরে আমি কিছু করতে পারব না। নিয়মবহির্ভূতভাবে একজনকে বহিষ্কার করলে সেটা আদালতে টিকবে না। নিয়মের মধ্যে সবকিছু করার জন্য সময়ের প্রয়োজন। যেহেতু রোজার মাস, সময় একটু বেশি দেওয়া উচিত ছিল।’
শিক্ষার্থীদের পরীক্ষা বর্জনের বিষয়ে উপাচার্য বলেন, ‘আমরা পরীক্ষা স্থগিত করিনি। তাঁরা (শিক্ষার্থী) বর্জন করেছেন। তাঁরা পরীক্ষা স্থগিতের আবেদনও করেননি। তাঁরা আবেদন করলে আমরা বিবেচনা করতাম। তাঁরা এখানে ভুল করেছেন। পরীক্ষা হয়েছে। কিন্তু তাঁরা পরীক্ষায় অনুপস্থিত ছিলেন। নিয়ম অনুযায়ী ঘণ্টা বাজবে, ছাত্ররা আসুক না আসুক—এমন ঘটনা বুয়েটে আগেও ঘটেছে। পরে তাঁরা পরীক্ষার জন্য আবেদন করলে একাডেমিক কাউন্সিল বিবেচনা করতে পারে।’
ডিএসডব্লিউর পদত্যাগের দাবির বিষয়ে উপাচার্য বলেন, ‘ডিএসডব্লিউর পদত্যাগের বিষয়ে এখন আমরা চিন্তা করছি না। কারণ, এটা নরমাল একটা প্রসিডিউর। নিয়ম অনুযায়ী যখন হওয়ার হবে। ডিএসডব্লিউ বলেছেন, তাঁর পক্ষ থেকে কোনো গাফিলতি ছিল না। শিক্ষার্থীরা দাবি করতেই পারেন। কিন্তু দাবির মুখে আমরা ব্যবস্থা নিতে পারি না। সময় হলে আমরা নতুন ডিএসডব্লিউ নিয়োগ দেব। তার জন্য সময় প্রয়োজন। যদি কোনো নিরাপত্তারক্ষী বহিরাগত ব্যক্তিদের ঢুকতে দিয়ে থাকেন, তাঁর বিরুদ্ধে আমরা ব্যবস্থা নেব।’