সড়কে সড়কে কোটাবিরোধীদের অবস্থান, স্থবির ঢাকা
সরকারি চাকরিতে কোটা বহালে হাইকোর্টের যে রায়ের পরিপ্রেক্ষিতে আন্দোলনে নামেন শিক্ষার্থীরা, সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ আজ সেই রায়ের ওপর এক মাসের স্থিতাবস্থা জারি করেছেন। এ রায় আন্দোলকারীদের পক্ষে এলেও তারা রাজপথ না ছাড়ার ঘোষণা দিয়েছেন। আজ বুধবার (১০ জুলাই) কোটাবিরোধীরা রাজধানীর শাহবাগ, বাংলামোটর, কারওয়ান বাজার, ফার্মগেট ও সায়েন্সল্যাবের সড়ক অবরোধ করে রেখেছেন। ফলে, সড়কে যান চলাচল স্থবির হয়ে পড়েছে। এতে ভোগান্তিতে পড়েছেন সাধারণ মানুষ।
অনেকের ধারণা ছিল, বিশেষ করে আপিল বিভাগ থেকে আন্দোলনকারীদের দাবির পক্ষে কোনো আদেশ এলে পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক হতে পারে। কিন্তু, তেমনটা হয়নি। আন্দোলনকারীরা রায়ের পরও রাজপথ রয়েছেন। আপিল বিভাগের স্থিতাবস্থায় খুশি নন আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা। তাদের বক্তব্য, সরকারের নির্বাহী বিভাগ থেকে কোটা সংস্কার নিয়ে ঘোষণা না আসা পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাবেন তারা।
আপিল বিভাগের রায় আসার পর দুপুর ১২টার দিকে শাহবাগে তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় কোটা সংস্কার আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক হাসনাত আব্দুল্লাহ মাইকে ঘোষণা করেন, ‘হাইকোর্ট থেকে আজকে যে রায়ই আসুক না কেন, আমাদের দাবি নির্বাহী বিভাগের কাছে। রায়ে আমাদের আন্দোলন প্রভাবিত হবে না। তারা যতক্ষণ পর্যন্ত একটা কমিশন গঠন করে আমাদের সব সরকারি চাকরিতে পাঁচ শতাংশ কোটা নিশ্চিত না করছে, ততক্ষণ পর্যন্ত রাজপথ ছাড়ছি না। আমরা স্থায়ী সমাধান চাই।’
আরেক সমন্বয়ক সারজিস আলম সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমরা বারবার বলছি, এটা আমাদের নির্বাহী বিভাগের কাছে দাবি। কিন্তু, হাইকোর্ট যেগুলো করছে পেছানো, স্থগিত করা, এক মাস দুই মাস এক সপ্তাহ, এইগুলো প্রহসন।’
রায় নিয়ে আন্দোলনের পরবর্তী পদক্ষেপের বিষয় জানতে চাইলে সারজিস আলম বলেন, ‘আমরা সবাই মিলে বসব, সারা বাংলাদেশের শিক্ষার্থীদের মতামতের ভিত্তিতে পরবর্তী পদক্ষেপ নেব।’
বেলা বাড়ার সঙ্গে শাহবাগে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা জড়ো হতে থাকেন। সময় যখন দুপুরে গড়াল, তখন রাজধানীর বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের হাজার হাজার শিক্ষার্থী মিছিল নিয়ে জড়ো হচ্ছেন নির্ধারিত স্পটে। সড়কে যান চলাচল বন্ধ রেখে বসে বসে স্লোগান আর গান-কবিতায় মাতিয়ে রাখছেন আন্দোলনকারীরা। আন্দোলন যত জোরদার হচ্ছে রাজধানীর মানুষের ভোগান্তি তত বাড়ছে৷ বিশেষ করে, নারী-শিশু ও বয়স্ক মানুষ পড়েছেন বেশি দুর্ভোগে৷
রাজধানীর ফার্মগেট থেকে শাহবাগের দিকে কোনো যানবাহন যেতে পারছে না। কারওয়ান বাজারের চারপাশের সড়কগুলোও আন্দোলনকারীরা ব্যারিকেড দিয়ে বন্ধ করে সামনে বসে আছেন। একই অবস্থা বাংলামোটরেও। অন্যদিকে, সায়েন্সল্যাব মোড়ে ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থীরা ব্যারিকেড দিয়ে সড়ক আটকে দিয়েছেন। ফলে, সেখান থেকেও কোনো যানবাহন নড়াচড়া করতে পারছে না।
এই যখন অবস্থা, তখন কারওয়ান বাজারে অবরোধ করে বসা থাকা শিক্ষার্থীরা মাইকে ঘোষণা দিচ্ছেন, ‘আপনারা যারা সার্ক ফোয়ারা চত্বরে বসে আছেন, তারা রেল লাইনে যান। রেল আটকে দেন। আপনাদের সহযোদ্ধাদের সঙ্গে সড়ক-রেল সব বন্ধ করে দেন।’
এদিকে বকশিবাজার মোড় ও চানখারপুল মোড়ে অবস্থান নিয়ে শিক্ষার্থীরা আন্দোলন করায় এর প্রভাব পড়েছে পুরান ঢাকার অলিগলিতে। অন্যদিকে পল্টন মোড়-জিপিওতে সড়কে বসে আন্দোলন করায় গুলিস্তান ও আশপাশের এলাকা, মতিঝিলে ছড়িয়ে পড়েছে যানজট। আগারগাঁও, মহাখালী, বনানী এলাকায় শিক্ষার্থীরা সড়কে বসে পড়ায় ভোগান্তি দেখা দিয়েছে বিমানবন্দরের দিকে যাওয়া যাত্রীদেরও।