নতুন কর্মসূচি দিয়ে শাহবাগ ছাড়লেন কোটাবিরোধীরা
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারে চলা কোটা সংস্কারের দাবির আন্দোলনে পুলিশি হামলার প্রতিবাদে শাহবাগ মোড়ে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ সমাবেশ করেছেন শিক্ষার্থীরা। পরে তারা নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করে আজকের মতো শাহবাগ মোড় ত্যাগ করেন। আজ শুক্রবার (১২ জুলাই) বিকেল ৫টার দিকে শাহবাগে এসে অবস্থান নেন শিক্ষার্থীরা। প্রায় এক ঘণ্টা তারা রাজধানীর এই গুরুত্বপূর্ণ মোড়টি অবরোধ করে রাখেন। এতে ওই এলাকায় যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।
সন্ধ্যার দিকে আন্দোলনকারীরা তাদের নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করেন। আন্দোলনের অন্যতম সম্বনয়ক আবু বাকের মজুমদার বলেন, আমি এখন আমাদের পরবর্তী কর্মসূচি উপস্থাপন করব, আগামীকাল আমাদের সকল বিশ্ববিদ্যালয় ও জেলায় জেলায় অনলাইন-অফলাইন প্রতিনিধি বৈঠক হবে এবং বিকেল ৬টায় আমরা আমাদের পরবর্তী কঠোর কর্মসূচি নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্রন্থগারের সামনে একটি প্রেস ব্রিফিং করব। আমরা এখন মিছিল নিয়ে ক্যাম্পাসে প্রবেশ করব।
কর্মসূচি ঘোষণার আগে আবু বাকের মজুমদার বলেন, শিক্ষার্থদের ওপর পুলিশের হামলার নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি। আমি জানিয়ে দিতে চাই, বাধা দিয়ে বাধবে লড়াই। সেই লড়াইয়ে জিততে হবে। আমি বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের একজন সমন্বয়ক হিসেবে সারা দেশের সকল সংগঠক ও প্রতিনিধিদের অভয় দিতে চাই, কেউ যদি আমাদের ওপর হামলা করে, হুমকি-ধামকি দেয়; আমরা সকলে মিলে তাদের বিরুদ্ধে সর্বাত্মক প্রতিরোধ গড়ে তুলব।
আবু বাকের মজুমদার বলেন, খুবই দুঃখের বিষয় বন্ধুগণ, গতকাল কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে এক সংবাদিককে লাঠিচার্জ করে মাথা ফাঠিয়ে দিয়েছে। গত কয়েকদিন আমরা শান্তিপূর্ণভাবে আন্দোলন করেছি। কিন্তু, গতকাল নানান মহল থেকে হুমকি-ধামকি আসছিল। তার পরিপ্রেক্ষিতে ঢাবির ক্যাম্পাসে অছাত্র এসে ভরে গিয়েছিল। তারপর কোন কুচক্রি মহল আমাদের আন্দোলনকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে আমাদের সাংবাদিক বন্ধুর ওপর হামলা করেছে। আমরা চাই, তাদেরকে বিচারের আওতায় আনা হোক। সেই হামলার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি।
আবু বাকের মজুমদার বলেন, আমি সরকারকে আহ্বান করছি, আমাদের যে সহজ-সরল এক দফা দাবি, সকল গ্রেডে বৈষম্য নিরসনে সংবদে আইন পাশ করার মাধ্যমে কোটাকে নুন্যতম পর্যায়ে নিয়ে আসুক।
এর আগে আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থী হাসনাত আব্দুল্লাহ বলেন, যারা কখনোই চাকরি করবে না, তারা প্রশ্ন তুলছে আমাদের আন্দোলন নিয়ে। যতগুলো প্রতিষ্ঠানে রক্ত ঝরছে তার তীব্র নিন্দা আমরা জানাই। যেখানেই হামলা হবে আমরা দাঁতভাঙা জবাব দেব। আমাদের হারানোর কিছু নেই। আমাদের একমাত্র চাওয়া একটি মেধা।
এর আগে দুপুরে পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগার থেকে শুরু হয়ে মিছিলটি ক্যাম্পাসের নানা অংশে প্রদক্ষিণ করে। পরে তারা শাহবাগে সমাবেশের জন্য জড়ো হয়।
‘আমার ভাই আহত কেন, প্রশাসন জবাব চাই’, ‘আমার বোন আহত কেন, প্রশাসন জবাব চাই’, ‘লাঠিশোঁটা টিয়ার গ্যাস, রুখে দেওয়া যাবে না, ‘কোটা না মেধা? মেধা মেধা’, ‘হাইকোর্টের রায় মানি না মানবো না’, ‘কোটা বাতিল করো বাতিল করো’, ‘ছাত্রসমাজ গড়বে দেশ, হামলা করে বন্ধ করা যাবে না’, ‘মামলা দিয়ে আন্দোলন বন্ধ করা যাবে না’, ‘মেধাভিত্তিক বাংলাদেশ করতে হবে করতে হবে’, ‘মুক্তিযুদ্ধের বাংলায় বৈষম্যের ঠাঁই নাই’ ইত্যাদি নানা স্লোগান দেন শিক্ষার্থীরা।
২০১৮ সালের অক্টোবরে কোটাবিরোধী আন্দোলন চরম আকার ধারণ করলে সরকার পরিপত্র জারি করে সরকারি চাকরিতে কোটাব্যবস্থা পুরোপুরি বাতিল করে দেয়। ওই পরিপত্র চ্যালেঞ্জ করে ২০২১ সালে রিট করেন মুক্তিযোদ্ধার সন্তান ও প্রজন্ম কমান্ড কাউন্সিলের সভাপতি অহিদুল ইসলামসহ সাত শিক্ষার্থী। এর পরিপ্রেক্ষিতে গত ৫ জুন পরিপত্রটি বাতিল করে দেন হাইকোর্টের একটি বেঞ্চ।
এই রায়ের পর ফুঁসে উঠেন শিক্ষার্থীরা। তারা কোটা বাতিলের দাবিতে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করেন। গত ১ জুলাই থেকে ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন করে জোরাল আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন শিক্ষার্থীরা।