আনন্দ মোহন কলেজে অচলাবস্থা তৈরির অপচেষ্টার অভিযোগ
ময়মনসিংহ সরকারি আনন্দ মোহন কলেজে শিক্ষার্থী-শিক্ষকের মধ্যে সম্পর্ক নষ্ট, বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি ও শিক্ষার পরিবেশ বিনষ্ট করার চক্রান্ত করছে পতিত স্বৈরাচারের দোসর গুটিকতক ছাত্র ও উচ্চাভিলাষী শিক্ষক চক্র। চক্রটি কাচারি বালুঘাটে বসে বসে এই চক্রান্ত করছেন বলে অভিযোযোগ। তাদের মধ্যে অন্য জেলার সরকারি কলেজের দুই শিক্ষকও জড়িত বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
জানা গেছে, সরকারি আনন্দমোহন কলেজের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মো. ইয়াছির আরাফাত, অর্থনীতি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মো সাখাওয়াত মুনীম এই চক্রের মূল কুশীলব। এই দুই শিক্ষক ও ছাত্রলীগের গুটিকতক কর্মীর যোগসাজসে কলেজ ক্যাম্পাসে ছাত্র-শিক্ষক সম্পর্ক বিনষ্ট এবং কলেজের একাডেমিক ও প্রশাসনিক কাজে অচলবস্থা সৃষ্টির পায়তারা চলছে।
অনুসন্ধানে জানা যায়, অধ্যাপক সাখাওয়াত মুনীম প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সাবেক সিনিয়র সচিব ও বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যান পলাতক সাজ্জাদুল হাসানের পিএস আরিফুল ইসলাম এরিনের ভগ্নিপতি। এরিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ছাত্রলীগনেতা। আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় থাকাকালীন তিনি ওবায়দুল হাসান, সাজ্জাদুল হাসান ও শ্যালক এলিনের প্রভাব খাটিয়ে কলেজ প্রশাসনে ছাত্রলীগের পেশিশক্তির ব্যবহার ও নানা রকম অনৈতিক প্রভাব বিস্তার করে কলেজ প্রশাসনকে তটস্থ করে রাখতেন। বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে গত ৫ আগস্ট সরকার পতনের পরও নিজের আধিপত্য, কর্তৃত্ব ও প্রভাব বিস্তারের অপচেষ্টা অব্যাহত রেখেন। এজন্য তাঁদের প্রধান টার্গেট কলেজের বর্তমান অধ্যক্ষ অধ্যাপক মো. আমান উল্লাহকে অপসারণ এবং কলেজের পরিস্থিতি অস্থিতিশীর করা।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে ৫ আগস্ট স্বৈর সরকার পতনের আগে পরে ৩৫ হাজার শিক্ষার্থীকে পাঠদানে দুই শতাধিক শিক্ষকের অক্লান্ত চেষ্টায় কলেজের একাডেমিক কার্যক্রম, পরীক্ষা ও কার্যক্রম নবীনবরণ স্বাভাবিক গতিতেই চলমান আছে। একদিনের জন্যও তা ব্যহত হয়নি। কিন্তু সাখাওয়াত মুনীম গং কলেজ ক্যাম্পাসে বিশৃঙ্খলা তৈরি করে পরিস্থিতি অস্থিশীল করে পতিত সরকারের এজেন্ডা বাস্তবায়নের অপচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। এই দুই শিক্ষক ও ছাত্রলীগের গুটিকতক কর্মী মিলে অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে সরকারি দপ্তরে গুজবী অভিযোগও করেছেন।
গত ৫ আগস্টের আগে সাখাওয়াত মুনীম সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ফ্যাসিস্টদের প্রতি ভক্তিমূলক স্ট্যাটাস দিতেন এবং শেষ করতেন ‘জয়বাংলা’ বলে। কলেজ ক্যাম্পাসে শেখ মজিবুর রহমানের ম্যুরালের সামনে (যা এখন নেই) দাঁড়িয়ে সপরিবারে একাধিক ছবি তুলেও তা পোস্ট করেছেন। এই দুই শিক্ষক ক্লাসেও অনিয়মিত এবং কর্মঘণ্টা কলেজ ক্যাম্পাসকে অস্থিতিশীল করার কাজে ব্যয় করেন বলেও অভিযোগ উঠেছে।
অন্যদিকে কলেজটির ৩৫ হাজার ছাত্র-ছাত্রীর মধ্যে প্রায় দুই সহস্রাধিক ছাত্র-ছাত্রীই ওই দুই শিক্ষক ও গুটিকতক ছাত্রলীগকর্মীর গুজবী অভিযোগ এবং নেতিবাচক কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে বিভাগীয় কমিশনার বরাবর আবেদন করেছেন।
এ বিষয়ে সাখাওয়াত মুনীম বলেন, বর্তমান অধ্যক্ষ বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনবিরোধী। আমরা তাঁকে সরাতে চাই। আর ‘জয়বাংলা’ হচ্ছে ‘সার্বজনীন’ একটি স্লোগান। আমি সরকারি চাকুরে হিসেবে সেই স্লোগান দিয়েছি। এতে দোষের কিছু নেই। জানতে চাইলে তিনি সরকারি চাকরিজীবী উল্লেখ করে তাঁর রাজনৈতিক পরিচয় এড়িয়ে যান।
অধ্যক্ষ অধ্যাপক মো. আমান উল্লাহ সম্পর্কে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক গকুল সূত্রধর বলেন, কে ছাত্র আন্দোলনবিরোধী আর কে নব্য আন্দোলনের পক্ষে তাদের আমরা চিনি। ক্যাম্পাসে শিক্ষক-শিক্ষার্থী নিজেদের মধ্যে বিভেদ সৃষ্ট অপ্রীতিকর পরিবেশ তৈরির চেষ্টা জাতীয় স্বার্থের পরিপন্থি। তাঁরা আমাদের শিক্ষক। আমরা আশা করি তাঁরা ঐক্যবদ্ধ থেকে বিধি মোতাবেক সমস্যা সমাধান করে কলেজের একাডেমিক ও প্রশাসনিক কার্যক্রম পরিচালনা করবেন। তা না হলে ঘাপটি মেরে থাকা ফ্যাসিস্টরা এর সুযোগ নেবে।
এ বিষয়ে অধ্যক্ষ অধ্যাপক মো. আমান উল্লাহ বলেন, আমি অধ্যক্ষ হওয়ার পর থেকেই কলেজের একাডেমিক কার্যক্রম, পরীক্ষা ও সহপাঠ্যক্রমিক কার্যক্রম ধারাবাহিকভাবে স্বাভাবিক গতিতেই অব্যাহত রেখেছি। এক দিনের জন্যও তা ব্যহত হতে দেইনি। যাঁরা এসব করছেন, তা অনাকাঙ্ক্ষিত। তাঁদের নানাভাবে সতর্ক করা হচ্ছে।
অধ্যক্ষ অধ্যাপক মো. আমান উল্লাহ কলেজের পরিবেশ স্বাভাবিক রাখতে সবার সহযোগিতাও কামনা করেন।
এ বিষয়ে নাম প্রকাশ না করার শর্তে ময়মনসিংহ বিভাগীয় কমিশনার অফিসের এক কর্মকর্তা বলেন, ছাত্র-শিক্ষকের পাল্টাপাল্টি অভিযোগ চলছে। বিষয়টি আমাদের নজরে এসেছে, আমরা দেখছি।