আয় কমেছে জাহাঙ্গীরের, বেড়েছে আজমত উল্লার, জাপা প্রার্থীর আছে দেড়শ ভরি স্বর্ণ
গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনের তারিখ আগামী ২৫ মে। ইতোমধ্যে মনোনয়নপত্রের সঙ্গে হলফনামা ও আয়-ব্যয়ের হিসাব জমা দিয়েছেন প্রার্থীরা। সেই হলফনামা বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে সাবেক মেয়র ও এই নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী জাহাঙ্গীর আলমের আয় কমেছে। অন্যদিকে আয় বেড়েছে আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী অ্যাডভোকেট আজমত উল্লা খানের। আর জাতীয় পার্টি থেকে মনোনীত প্রার্থী এম এম নিয়াজ উদ্দিনের আছে দেড়শ ভরি স্বর্ণ।
জাহাঙ্গীর আলমের হলফনামায় দেখা যায়, সাবেক এই মেয়রের বার্ষিক আয় সাড়ে ৯ লাখ টাকা। অথচ, পাঁচ বছর আগে ২০১৮ সালে তার বার্ষিক আয় ছিল দুই কোটি ১৬ লাখ ৩৮ হাজার টাকা। সে হিসেবে তার আয় কমেছে কয়েক গুন।
বার্ষিক আয়ের ক্ষেত্রে জাহাঙ্গীর আলমের চেয়ে আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী অ্যাডভোকেট আজমত উল্লা খান এগিয়ে আছেন। তার বার্ষিক আয় ৩১ লাখ ৬৫ হাজার ৫০৫ টাকা। আর জাতীয় পার্টির প্রার্থী এম এম নিয়াজ উদ্দিন হলফনামায় তার আয় দেখিয়েছেন বার্ষিক চার লাখ টাকা।
মো. জাহাঙ্গীর আলমের হলফনামা
স্বতন্ত্র প্রার্থী জাহাঙ্গীর আলমের হলফনামায় দেখা গেছে, পাঁচ বছর আগে কৃষিখাত থেকে তার বার্ষিক আয় ছিল দেড় লাখ টাকা। এবার কৃষিখাতে আয় দেখিয়েছেন দুই লাখ ২০ হাজার টাকা। বাড়ি ও দোকান ভাড়া আগে ছিল চার লাখ ৩০ হাজার টাকা, এবারও একই অঙ্ক দেখিয়েছেন। ব্যবসা থেকে আগে আয় দেখান ৯৪ লাখ ২০ হাজার টাকা, এবার আয় দেখিয়েছেন মাত্র তিন লাখ টাকা।
পাঁচ বছর আগে তার স্থাবর সম্পদের মধ্যে কৃষিজমি ছিল এক হাজার ৪১৫ দশমিক ১৫ শতাংশ। এবার তার কোনো কৃষিজমি নেই। আগে অকৃষি জমি ছিল ৩৩ দশমিক ৭১২৫ শতাংশ। এবার অবশ্য তার অকৃষি জমি বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৮১৫ দশমিক ২১ শতাংশ। আবাসিক সম্পদ আগে ছিল সাত দশমিক ৪৩৭ শতাংশ। এবার বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪১ দশমিক ১৫ শতাংশ। অস্থাবর সম্পদের মধ্যে তার হাতে রয়েছে নগদ ৪০ লাখ টাকা। পাঁচ বছর আগে ছিল সাত কোটি ৪৮ লাখ ৯৬ হাজার টাকা। ব্যাংকে তার জমা ৫০ হাজার টাকা। আগে ছিল এক লাখ ৫৫ হাজার ৯৭১ টাকা।
এবার জাহাঙ্গীর তালিকাভুক্ত ও নন-তালিকাভুক্ত শেয়ারের মূল্য দেখিয়েছেন অনারেবল টেক্সটাইলে ৪৭ লাখ ৫০ হাজার এবং জেড আলম অ্যাপারেলসে ২০ লাখ টাকা। সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ দেখিয়েছেন ১০ লাখ টাকা। আগেরবার তিনি ব্যবসায় বিনিয়োগ দেখিয়েছিলেন ৭৫ লাখ ২৩ হাজার ৭৮৭ টাকা, সঞ্চয়পত্রে ১০ লাখ টাকা।
এ ছাড়া জাহাঙ্গীর আলমের দুটি গাড়ি,৩৫ ভরি সোনা, একটি বন্দুক ও একটি পিস্তল, ইলেকট্রনিক সামগ্রী এবং আসবাবপত্র আগের মতো রয়েছে। পাঁচ বছর আগে তার বিরুদ্ধে কোনো ফৌজদারি মামলা ছিল না। তবে, মেয়র পদ থেকে বরখাস্ত হওয়ার পর তার বিরুদ্ধে আটটি ফৌজদারি মামলা হয়েছে। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনেও মামলা হয়েছে।
অ্যাডভোকেট মো. আজমত উল্লা খান
মো. আজমত উল্লা খানের বার্ষিক আয় ৩১ লাখ ৬৫ হাজার ৫০৫ টাকা। এর মধ্যে আইন পেশা থেকে তার বার্ষিক আয় ছয় লাখ টাকা। এর বাইরে শেয়ার, সঞ্চয়পত্র ও ব্যাংক সুদ থেকে তার বার্ষিক আয় ৬২ হাজার ৫০৫ টাকা। কৃষি ও তৈরি পোশাকসহ তিনটি প্রতিষ্ঠান থেকে তিনি বার্ষিক ২৪ লাখ তিন হাজার টাকা সম্মানি ভাতা পান।
এ ছাড়া তার লেখা দুটি বই বিক্রি থেকে বার্ষিক আয় এক লাখ টাকা। ২০২১ সালে ‘রাজনীতির মহাকবি, স্বাধীন বাংলাদেশের স্বপ্নদ্রষ্টা, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান’ এবং ২০২২ সালে ‘বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্ব গুণ, আদর্শ ব্যক্তি ও জাতি গঠনে অনুসরণীয় দৃষ্টান্ত’ নামে তার লেখা দুটি বই প্রকাশ হয়।
অস্থাবর সম্পদের মধ্যে আজমত উল্লা খানের হাতে নগদ রয়েছে চার লাখ ৩১ হাজার ৭৩৬ টাকা। স্ত্রীর কাছে দুই লাখ ৩৪ হাজার ৫০৬ টাকা। স্ত্রীর নামে একটি প্রাডো গাড়ি রয়েছে। নিজের সোনা ২০ তোলা এবং স্ত্রীর সোনা ৩০ তোলা। স্থাবর সম্পদের মধ্যে আজমতের কোনো কৃষিজমি নেই। অকৃষি জমি নিজের নামে ১৪০ দশমিক ৬৩৭৯ শতাংশ এবং স্ত্রীর নামে ২৩৭ দশমিক ৮ শতাংশ রয়েছে। সাত শতাংশ জমির ওপর তার নির্মাণাধীন বাড়ি।
আগে আজমত উল্লা খানের বিরুদ্ধে একটি হত্যা মামলাসহ তিনটি ফৌজদারি মামলা ছিল। এর মধ্যে টঙ্গী থানার হত্যা মামলার চার্জশিট থেকে তাকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। বাকি দুটি মামলা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে প্রত্যাহার করা হয়েছে।
এম এম নিয়াজ উদ্দিন
জাতীয় পার্টি মনোনীত মেয়র প্রার্থী সাবেক সচিব এম এম নিয়াজ উদ্দিনের বার্ষিক আয় চার লাখ টাকা। তার অস্থাবর সম্পদের মধ্যে রয়েছে নগদ ১২ লাখ ১৯ হাজার ৯৩৪ টাকা ও ব্যাংকে দুই লাখ টাকা। স্থায়ী আমানত রয়েছে ৫৫ লাখ টাকা, স্ত্রীর নামে ব্যাংকে ৭৫ লাখ টাকা। নিজের ৫০ ভরি সোনা ও স্ত্রীর ১০০ ভরি সোনা। স্থাবর সম্পদের মধ্যে রয়েছে তিন দশমিক ৬৬ একর কৃষিজমি ও সাত বিঘা অকৃষি জমি। তার দায়ের মধ্যে সাবরিনা রিয়েল এস্টেট লিমিটেডের নামে এনআরবিসি ব্যাংকে ৬৫ লাখ ৮৬ হাজার টাকা এবং ফারইস্ট ট্রান্সফর্ম ওয়াশিং প্ল্যান্ট লিমিটেডের বিপরীতে ফারইস্ট ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেডে ঋণ রয়েছে দুই কোটি ৯০ লাখ টাকা।