দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণা বুধবার
আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণা করতে যাচ্ছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। আগামীকাল বুধবার চূড়ান্ত রোডম্যাপ ঘোষণা করা হবে বলে জানিয়েছেন ইসির যুগ্মসচিব ও জনসংযোগ শাখার পরিচালক এস এম আসাদুজ্জামান।
আজ মঙ্গলবার বিকেলে এস এম আসাদুজ্জামান বলেন, ‘আগামীকাল বেলা ১১টায় দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণা করা হবে। নির্বাচন ভবনের অডিটরিয়ামে এ অনুষ্ঠানটি হবে।’
ইসি সূত্রে জানা যায়, দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে করা রোডম্যাপে নির্বাচনে ইভিএমের ব্যবহার, সিসি ক্যামেরা স্থাপনের বিষয় বিবেচনায় রেখে সীমানা নির্ধারণ, ফলাফল সংগ্রহে প্রযুক্তির ব্যবহার, প্রশিক্ষণ ও দক্ষ জনবল তৈরি, আইন সংস্কার, নতুন দল নিবন্ধন, চূড়ান্ত ভোটার তালিকা প্রণয়নসহ সংশ্লিষ্ট সব কাজের প্রস্তুতিমূলক সময়সূচি থাকবে। সেই সঙ্গে সংসদ নির্বাচনের ক্ষণ গণনা শুরুর পর তফসিল ঘোষণা ও তফসিল ঘোষণা পরবর্তী কাজগুলোর তালিকাও তুলে ধরা হবে।
কাজী হাবিবুল আউয়ালের নেতৃত্বাধীন পাঁচ সদস্যের ইসি ফেব্রুয়ারিতে দায়িত্ব নেওয়ার দুই সপ্তাহের মাথায় দল, গণমাধ্যম, পর্যবেক্ষক সংস্থা, নির্বাচন পরিচালনা বিশেষজ্ঞ, ইভিএম কারিগরি বিশেষজ্ঞ, শিক্ষাবিদসহ নানা অংশীজনের সঙ্গে সংলাপ শুরু করেন। সবার মতামত নিয়ে আইন সংস্কার, ইভিএমে ভোটগ্রহণের মতো গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিয়েছে ইসি। হালনাগাদ ভোটার তালিকায় তথ্য সংগ্রহের কাজ শুরু হয়েছে। নতুন দলের নিবন্ধনের আবেদনও নিচ্ছে। জনশুমারির প্রাথমিক প্রতিবেদন প্রকাশের পর চূড়ান্ত প্রতিবেদনের অপেক্ষাও চলছে।
ইতোমধ্যে সিইসি জানিয়েছেন, এবার সংসদ নির্বাচনে সর্বোচ্চ ১৫০ আসনে ইভিএম আর ১৫০ আসনে ব্যালটের মাধ্যমে ভোটগ্রহণের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। অন্য একজন নির্বাচন কমিশনার জানিয়েছেন, সম্ভব হলে সবকেন্দ্রে সিসি ক্যামেরা স্থাপনের ইচ্ছে রয়েছে ইসির। বাজেটে সঙ্কট হলে অন্তত ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্রগুলোয় সিসি ক্যামেরা রাখার ইচ্ছে রয়েছে।
২০০৭ সালে নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠন হলে সাবেক সিইসি এটিএম শামসুল হুদার নেতৃত্বে ভোটের সময়সূচি নিয়ে আলোচনার মধ্যে ছবিসহ ভোটার তালিকা প্রণয়ন, সংলাপ, সীমানা পুননির্ধারণ, আইন সংস্কার, দল নিবন্ধনসহ ভোটের ক্ষণ গননা শুরু, তফসিল ঘোষণা, ফল গেজেটে প্রকাশ পর্যন্ত নানা কর্মকৌশল তুলে ধরে ‘রোডম্যাপ’ তুলে ধরা হয়। ওই কমিশন স্থানীয় নির্বাচনে ইভিএমে ভোটের প্রচলনও শুরু করেছিল। বিদায়ের আগে ওই কমিশন পঞ্চবার্ষিক কর্মকৌশলও প্রণয়ন করেছিল।
এটিএম শামসুল হুদা কমিশনের পদাঙ্ক অনুসরণ করেই নানা মহলের আগ্রহের মধ্যে কাজী রকিবউদ্দীন আহমদ, কে এম নূরুল হুদা কমিশনও এক ধরনের কর্মপরিকল্পনা ধরে এগিয়ে নিয়ে যায় ইসি সচিবালয়। সবশেষ কমিশন একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ইভিএম চালু করে যায়, ছয়টি আসনে ভোটও হয়। এবার কাজী হাবিবুল আউয়াল কমিশনও ‘দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানের কর্মপরিকল্পনা’ প্রকাশ করতে যাচ্ছে।
২০১৯ সালের ৩০ জানুয়ারি একাদশ সংসদের প্রথম অধিবেশন শুরু হয়। সেক্ষেত্রে ২০২৩ সালের নভেম্বর থেকে পরের বছর জানুয়ারির মধ্যে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। ২০২৪ সালের ২৯ জানুয়ারির মধ্যে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন শেষ করার সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা রয়েছে।
যা থাকছে ইসির কর্মপরিকল্পনায়
আইন সংস্কার, নির্বাচন প্রক্রিয়া সময়োপযোগী করতে সবার পরামর্শ, সংসদীয় আসনের সীমানা পুননির্ধারণ; নির্ভুল ভোটার তালিকা প্রণয়ন ও সরবরাহ, বিধি মেনে ভোটকেন্দ্র স্থাপন, নতুন দল নিবন্ধন ও নিবন্ধিতদের নিরীক্ষা, সুষ্ঠু নির্বাচনে সংশ্লিষ্টদের সক্ষমতা বৃদ্ধি, ভোটে প্রযুক্তির ব্যবহার, দক্ষ নির্বাচনী প্যানেল তৈরি ও প্রশিক্ষণ, ভোটার শিক্ষণ, সচেতনতা, পর্যবেক্ষণ সংস্থা নিবন্ধন ও নবায়ন এবং গণমাধ্যমকে আইনি কাঠামোয় সম্পৃক্তকরণ।