প্রতীক পেয়েই গাজীপুরে ভোটের মাঠে প্রার্থীরা
আগামী ২৫ মে অনুষ্ঠিত হবে গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচন। প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের মধ্যে আজ মঙ্গলবার (৯ মে) প্রতীক বরাদ্দ দিয়েছে নির্বাচন কমিশন।
রিটানিং কর্মকর্তার কার্যালয় থেকে প্রতীক পাওয়ার পর পরই প্রার্থীরা নিজ নিজ এলাকায় ভোটারদের কাছে গিয়ে ভোট প্রার্থনা করছেন।
গাজীপুর সিটি নির্বাচনে আওয়ামী লীগ, জাতীয় পার্টি, গণফ্রন্ট ও ইসলামী আন্দোলন এবং স্বতন্ত্রসহ মোট আট জন মেয়র পদে লড়ছেন। তবে নির্বাচনের মূল লড়াই সাবেক মেয়র জাহাঙ্গীর আলমের মা জায়েদা খাতুন ও আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী আজমত উল্লা খানের মধ্যে হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
আজ সকালে সিটি নির্বাচনে অংশ নেওয়া মেয়র, কাউন্সিলর ও সংরক্ষিত আসনের কাউন্সিলর পদপ্রার্থীরা অনুসারীদের নিয়ে রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয়ে উপস্থিত হন। প্রতীক পাওয়ার পর পরই প্রার্থীরা নিজ নিজ এলাকায় ফিরে ভোটারদের কাছে ভোট প্রার্থনা শুরু করেছেন। দিচ্ছেন নানা প্রতিশ্রুতিও।
আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী আজমত উল্লা প্রতীক বরাদ্দের পর পরই গাজীপুর সদর এলাকায় গণসংযোগ করেন। অপরদিকে স্বতন্ত্র প্রার্থী জায়েদা খাতুন প্রতীক বরাদ্দের পর পরই স্বজনদের কবর জিয়ারত করে গণসংযোগে নামেন। ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের প্রার্থী গাজী আতাউর রহমান প্রতীক বরাদ্দের পর বাসন ও কোনাবাড়ী থানা এলাকায় গণসংযোগ করেন।
আজ সকাল ১০টার পরই আজমত উল্লা খান প্রতীক বরাদ্দ নেন। বেলা ১১টার দিকের বঙ্গতাজ অডিটরিয়ামে আসেন স্বতন্ত্র প্রার্থী সাবেক মেয়র জাহাঙ্গীর আলমের মা জায়েদা খাতুন। তিনি ছেলে (সাবেক মেয়র) জাহাঙ্গীর আলমকে সঙ্গে নিয়ে রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছ থেকে প্রতীক বরাদ্দ নেন।
গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে মোট আট প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। সবাই আজ প্রতীক বরাদ্দ নিয়েছেন।
আওয়ামী লীগের আজমত উল্লা খান নৌকা, জাতীয় পার্টির প্রার্থী এম এম নিয়াজ উদ্দিন লাঙ্গল, গণফ্রন্টের আতিকুল ইসলাম মাছ, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের গাজী আতাউর রহমান হাতপাখা, স্বতন্ত্র প্রার্থী জায়েদা খাতুন টেবিলঘড়ি, শাহীনুর ইসলাম রনি হাতি, রাজু আহম্মেদ গোলাপফুল ও হারুন অর রশিদ ঘোড়া প্রতীক নিয়ে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।
প্রতীক বরাদ্দ পেয়ে আওয়ামী লীগের প্রার্থী আজমত উল্লা খান বলেন, সমস্যাগুলো চিহ্নিত করে বৃহৎ পরিকল্পনা মোতাবেক নাগরিক সুবিধা সংবলিত একটি আধুনিক ও সমৃদ্ধ সিটি করপোরেশন গড়ে তুলতে নৌকা প্রতীকে ভোট চাই। প্রতীক পাওয়ার পরই আমাদের নির্বাচনী প্রচারণা শুরু হয়ে গেছে। আমরা ইতোমধ্যে ভোটার ও দলীয় নেতাকর্মীদের নিয়ে ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে কমিটি গঠন করে ফেলেছি।
প্রতীক বরাদ্দ নিয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী জায়েদা খাতুন সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমি লড়াই করছি জনগণের জন্য। আমার সঙ্গে সিটি করপোরেশনের জনগণ রয়েছেন। আমি আমার এবং ভোটের নিরাপত্তা চাই, সুষ্ঠু ভোট চাই। আমি নির্বাচন কমিশনারের কাছে একটা সুষ্ঠু ভোট চাই।’
জায়েদা খাতুন আরও বলেন, এই শহরের বড় সমস্যা হলো রাস্তাঘাট ও ড্রেনেজ ব্যবস্থা। আমি বিজয়ী হলে আগে এই রাস্তা ও ড্রেনেজ ব্যবস্থার উন্নয়ন করব। গাজীপুর সিটির উন্নয়নে সিটি করপোরেশনের ভোটারদের কাছে আমি ঘড়ি মার্কায় ভোট চাই।’
এ সময় জায়েদা খাতুনের ছেলে সাবেক মেয়র জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘আমি গাজীপুর সিটি করপোরেশনকে গ্রাম থেকে শহরে রূপান্তর করতে চেয়েছিলাম। সেই কাজে হাতও দিয়েছিলাম। আমার মায়ের নির্দেশেই এই ৮০০ কিলোমিটার রাস্তা করেছিলাম। এখন মা যখন দেখেছেন কাজগুলো থেমে গেছে—তখন মা আমাকে হুকুম করে বলেছেন, বাবা আমি কাজগুলো করতে চাই। এ জন্য মায়ের কথায় এই শহরকে সুন্দর রাখতে পাশে দাঁড়িয়েছি।’
ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের প্রার্থী গাজী আতাউর রহমান প্রতীক বরাদ্দের পর পরই গণসংযোগে নামেন। এ সময় তিনি বলেন, ‘ইতোমধ্যে আমাদের নির্বাচনি গণসংযোগ শুরু করেছি। ভোটারদের কাছ থেকে ব্যাপক সমর্থন পাচ্ছি। তারা আমাকে ভোট দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন। আমি সদর, বাসন, কোনাবাড়ী থানা ও সালনা এলাকায় গণসংযোগ করেছি। আরও কয়েকটি থানা এলাকায় গণসংযোগ করব।’
গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা ফরিদুল ইসলাম জানান, প্রতীক বরাদ্দের পর থেকেই প্রার্থীরা আরচণবিধি মেনেই প্রচার-প্রচারণাসহ নির্বাচনি কাজ শুরু করতে পারবেন। প্রার্থীদের আচরণবিধি প্রতিপালনে ২০ জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মাঠে থাকবেন।
গাজীপুর সিটিতে মোট ভোটার সংখ্যা ১১ লাখ ৭৯ হাজার ৪৭৬। এর মধ্যে ১৮ জন তৃতীয় লিঙ্গের।
৫৭টি ওয়ার্ডে মধ্যে একটি ওয়ার্ডে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় কাউন্সিলর নির্বাচিত হওয়ায় বাকি ৫৬টি ওয়ার্ডে সাধারণ কাউন্সিলর পদে ২৩৯ জন, সংরক্ষিত ১৯টি নারী কাউন্সিলর পদে ৭৮ জন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এখানে মোট ভোটকেন্দ্র ৪৮০টি।
আগামী ২৫ মে গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। ইভিএমে ভোটগ্রহণ করা হবে।