বিদ্রোহী প্রার্থী নিয়ে বেকায়দায় আ. লীগ, সুবিধাজনক অবস্থানে রনি
গাজীপুর সিটি করপোরেশন (গাসিক) নির্বাচনে হেভিওয়েট দুই বিদ্রোহী প্রার্থী নিয়ে বেকায়দায় রয়েছে আওয়ামী লীগ। শেষ পর্যন্ত আলোচিত দুই বিদ্রোহী প্রার্থী মাঠে থাকলে নৌকার ভরাডুবির আশঙ্কা করছেন নির্বাচনী বিশ্লেষকরা। সেক্ষেত্রে কারও মতে নৌকা প্রতীকের প্রার্থীর অবস্থান দ্বিতীয়, কারো মতে তৃতীয়, আবার কারো মতে চতুর্থ অবস্থানে চলে যেতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। নির্বাচনী এসব হিসাব-নিকাশ এখন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতেও ঘুরপাক খাচ্ছে।
আওয়ামী লীগের সাবেক বন ও পরিবেশ বিষয়ক উপকমিটির সদস্য গাসিক গাছা অঞ্চলের সভাপতি, ৩৫ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর আব্দুল্লাহ আল মামুন মণ্ডল মেয়র পদে আটঘাট বেঁধেই প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নেমেছেন। তিনি মনোনয়নপত্র দাখিলের পর দিনই বহুল আলোচিত সাময়িক বরখাস্ত মেয়র মো. জাহাঙ্গীর আলমও মেয়র পদে মনোনয়নপত্র দাখিল করেন। এর আগে তার মনোনয়নপত্র দাখিল নিয়ে অনেকেই সংশয় প্রকাশ করেছিলেন। কিন্তু, নির্বাচনে অংশ নেওয়ার ব্যাপারে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সরগরম ছিলেন জাহাঙ্গীর আলম। অবশেষে সকল জল্পনা-কল্পনার অবসান ঘটিয়ে এবং হাঁক-ডাকের মধ্য দিয়েই তার মনোনয়নপত্র দাখিল হলে নগরজুড়ে তোলপাড় শুরু হয়। মুহূর্তেই দৃশ্যপট পাল্টে যায়। নতুন করে নির্বাচনী হিসাব-নিকাশ শুরু হয়।
এদিকে, নির্বাচনে বিদ্রোহী প্রার্থী হয়েই গণমাধ্যমে নিজের জীবনের নিরাপত্তা নিয়েও শঙ্কা প্রকাশ করেন জাহাঙ্গীর আলম। তবে, যেকোনো পরিস্থিতিতে নিজে অথবা নিজের মায়ের পক্ষ হয়ে শেষ পর্যন্ত নির্বাচনের মাঠে থাকার দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করেন তিনি। জোরপূর্বক অথবা কোনো আইনি মারপ্যাঁচে তাকে নির্বাচন থেকে বিরত রাখা হলে বিকল্পপ্রার্থী হিসেবে নিজের মাকেও নির্বাচনে অংশ নেওয়ার জন্য প্রস্তুত রেখেছেন। সেজন্য মায়ের নামেও মনোনয়নপত্র দাখিল করে অস্তিত্বের মরণপণ লড়াইয়ে নেমেছেন।
অপরদিকে, আওয়ামী লীগের আরেক বিদ্রোহী প্রার্থী আব্দুল্লাহ আল মামুন মণ্ডলও নির্বাচনী মাঠের সুফল নিয়েই ঘরে ফেরার ঘোষণা দিয়েছেন। এ অবস্থায় চরম বেকায়দায় পড়েছে আওয়ামী লীগ। এতে সুবিধাজনক অবস্থান তৈরি হয়েছে স্বতন্ত্র মেয়রপ্রার্থী সরকার শাহনূর ইসলাম রনির। অনেকের দাবি—তিনি বিএনপি ঘরানার। এজন্য সুবিধা পাবেন বলে মনে করেন তারা।
টঙ্গীর প্রভাবশালী সরকার পরিবারের সন্তান হিসেবে নির্বাচনী মাঠে রনির বেশ গ্রহণযোগ্যতাও রয়েছে। বিগত ২০০৬ সালের টঙ্গী পৌর নির্বাচনে কারারুদ্ধ বাবা নূরুল ইসলাম সরকারের পক্ষ হয়ে আজমত উল্লাহ খানকে মোকাবিলা করে নির্বাচনী মাঠে সাড়া জাগিয়েছিলেন রনি। তার বাবা সেই নির্বাচনে অল্পের জন্য হেরে গেলেও স্থানীয় এরশাদ নগরের ভোট কেন্দ্রগুলো দখলের অভিযোগ ছিল আজমত উল্লা খানের বিরুদ্ধে।
তবে এবার রনি নিজেই সরাসরি আজমত উল্লা খানের সঙ্গে লড়ছেন। এ নির্বাচনী মাঠে সর্বশেষ আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী কোনো প্রার্থী না থাকলে রনিই হবেন আজমত উল্লা খানের মূল প্রতিদ্বন্দ্বী এমনটিই মনে করছেন নগরবাসী। এ কারণে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহীপ্রার্থী জাহাঙ্গীর আলমের পাশাপাশি রনি সরকারও ভোটের মাঠে বেশ আলোচনায় রয়েছেন।
এদিকে, মেয়র জাহাঙ্গীর বিরোধী আন্দোলনে অগ্রণী ভূমিকা পালনকারী আওয়ামী লীগনেতা আব্দুল্লাহ আল মামুন মণ্ডলও তারুণ্যের শক্তি নিয়ে এবার নির্বাচনী লড়াইয়ে নেমেছেন। জাহাঙ্গীরের পতনে যারা ভূমিকা রেখেছিলেন মামুন মণ্ডল ছিলেন তাদের অন্যতম। তবে, শেষ পর্যন্ত আজমত উল্লা খানকে সমর্থন দিয়ে মামুন মণ্ডল নির্বাচন থেকে সরে যেতে পারেন বলেও গুঞ্জন রয়েছে। যদিও মামুন মণ্ডল বরাবরই এমন গুঞ্জনের কথা অস্বীকার করে আসছেন।
অপরদিকে, জাহাঙ্গীর আলমও এবার খালি মাঠে ছেড়ে দিতে চাচ্ছেন না তার ঘোরতর এ দুই প্রতিদ্বন্দ্বীকে। তিনি জীবনের বিনিময়ে হলেও গাজীপুর নগরীকে রক্ষা করতে চান বলে গণমাধ্যমে ঘোষণা দিয়েছেন। তার শেষ পর্যন্ত নির্বাচনী মাঠে থাকার মরণপণ ঘোষণায় নগরবাসীর মধ্যে ব্যাপক সাড়া ফেলেছে। তার সমর্থকদের মধ্যেও প্রাণ চাঞ্চল্য বিরাজ করছে।
তবে, নির্বাচনী মাঠে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী কোনো প্রার্থী শেষ পর্যন্ত টিকতে পারবেন কিনা, তা নিয়েও অনেকে সংশয় প্রকাশ করছেন। এ অবস্থায় বর্তমান পরিস্থিতি যাই হোক, আগামী ৮ মে মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের শেষ দিন থেকে মূল নির্বাচনী খেলা শুরু হবে বলে মনে করছেন অনেকে। শেষে আওয়ামী লীগের কোনো বিদ্রোহী প্রার্থী না থাকলে বিএনপি ঘরানার স্বতন্ত্রপ্রার্থী সরকার শাহ নূর ইসলাম রনি অথবা জাতীয় পার্টি মনোনীত প্রার্থী এম এম নিয়াজ উদ্দিন নৌকা প্রতীকের প্রার্থী অ্যাডভোকেট আজমত উল্লা খানের মূল প্রতিদ্বন্দ্বী হতে পারেন বলেও মনে করা হচ্ছে।
তবে, দলের কোনো বিদ্রোহী প্রার্থী অথবা অন্য কোনো স্বতন্ত্রপ্রার্থীকে এবার কোনো গুরুত্বই দিচ্ছেন না আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী আজমত উল্লা খানের কর্মী-সমর্থকরা। যোগ্যতার দিক থেকে কোনো প্রার্থীকেই আজমত উল্লা খানের প্রতিদ্বন্দ্বী মনে করেন না দাবি করে মহানগর আওয়ামী লীগের সাবেক সহসভাপতি ও নৌকা প্রতীকের নির্বাচন পরিচালনা কমিটির সদস্য মো. ওসমান আলী বলেন, ‘এবার নৌকার বিজয় সুনিশ্চিত। কোনো বিদ্রোহী প্রার্থী নৌকার ভোটে কোনো ধরনের প্রভাব ফেলবে না। কারণ, এবারের সিটি নির্বাচনে যোগ্যতা, জনপ্রিয়তা ও জনমত জরিপে আজমত উল্লা খান অপ্রতিদ্বন্দ্বী, অদ্বিতীয় ও অপ্রতিরোদ্ধ।’
গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ দিন ছিল ২৭ এপ্রিল। সিডিউিল অনুযায়ী আগামীকাল ৩০ এপ্রিল প্রার্থীদের মনোনয়নপত্র বাছাই হবে। প্রার্থীতা প্রত্যাহারের শেষ তারিখ ৮ মে। নির্বাচনের প্রতীক বরাদ্দ দেওয়া হবে ৯ মে এবং ভোট গ্রহণ হবে ২৫ মে। সব ভোটকেন্দ্রে সকাল ৮টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত বিরতিহীনভাবে ইভিএমের মাধ্যমে ভোট গ্রহণ করা হবে।
গাজীপুর জেলা নির্বাচন অফিসের সর্বশেষ তথ্যানুযায়ী, গাজীপুর সিটি করপোরেশনের ৫৭টি ওয়ার্ডে মোট ভোটার সংখ্যা ১১ লাখ ৭৯ হাজার ৩৮১। এর মধ্যে পুরুষ ৫ লাখ ৯২ হাজার ৭২১ জন, নারী ৫ লাখ ৮৬ হাজার ৬৪২ জনএবং তৃতীয় লিঙ্গের ভোটার ১৮ জন।