ভোটকেন্দ্র থেকে আনন্দ-বেদনার অশ্রু নিয়ে ফিরলেন ইসি মাহবুব
নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদার ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) পঞ্চম ধাপের কয়েকটি ভোটকেন্দ্র পরিদর্শন শেষে জানান, ‘আমি ভোটকেন্দ্র থেকে ফিরে আসতে আসতে ভাবছিলাম, আল্লাহতায়ালা চোখে আনন্দের অশ্রু দেন, আবার বেদনার অশ্রুও দেন। আমি যখন ফিরছিলাম, তখন আমি আনন্দের অশ্রু এবং বেদনার অশ্রু নিয়ে ফিরেছি।’
আজ বুধবার সাভার ও আশুলিয়ার কয়েকটি কেন্দ্র পরিদর্শন শেষে নির্বাচন কমিশনের নিজ কার্যালয়ে সাংবাদিকদের কাছে এ অনুভূতি ব্যক্ত করেন। এ সময় তিনি আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন।
নির্বাচন কমিশনার বলেন, ‘আজ বেলা ১১টার দিকে নির্বাচন ভবন থেকে আমি রওনা হই সাভারের পথে। সাভারে গিয়ে দুটো কেন্দ্রের কয়েকটি বুথ পরিদর্শন করি। সেখানে প্রতিটি বুথের সামনে দীর্ঘ লাইন দেখে আমি অত্যন্ত উৎসাহিত হই। মনে হয়, সত্যিকার অর্থেই এসব নির্বাচনগুলোতে আমরা যথাযথভাবে দায়িত্ব পালন করতে পারছি। এই দুটো কেন্দ্র হল, মাদরাসা ইসলামিয়া আরাবিয়া ও বালিয়াপুর উচ্চ বিদ্যালয়।
ইসি মাহবুব বলেন, ‘‘ওখানে লাইনে দাঁড়িয়ে থাকা একজন নারীকে আমি জিজ্ঞেস করলাম, আপনি কখন এসেছেন? উনি বললেন, ‘আটটা থেকে দাঁড়িয়ে আছি।’ তখন বাজে বেলা ১২টা। এই চারঘণ্টায় উনি ভোট দিতে পারেননি। তবে, উনি হয়তো আর ১০ থেকে ১৫ মিনিটের মধ্যে ভোট দিতে পারবেন বলে আমার মনে হল।’’
মাহবুব তালুকদার বলতে থাকেন, ‘এ অবস্থায় ভাবলাম, যেসব জায়গা সম্পর্কে আমি আগে থেকে বলেছি পর্যবেক্ষণে যাব; এর বাইরে কোথাও যাব। তখন আমি গেলাম আশুলিয়া স্কুল অব কলেজের ভোটকেন্দ্রে। সেখানে একেবারেই ভিন্ন চিত্র। কোথাও কোনো লোকজন নাই। কোনো লাইন নাই। তখন দুপুর সাড়ে ১২টা বাজে। কোনো জায়গায় কেউ নেই, তাহলে ব্যাপারটি কী?’
‘‘এরপর আমি একটি বুথের সামনে যখন গেলাম, তখন এক মহিলা দৌঁড়ে এলেন আমার কাছে। এসে বললেন, ‘আমি একজন প্রার্থীর এজেন্ট। কিন্তু, এরা আমাকে ঢুকতে দিচ্ছে না।’ আমি বললাম, কেন? মহিলা বললেন, ‘এখানে একটি নির্দিষ্ট দল ছাড়া আর কাউকে ঢুকতে দেওয়া হচ্ছে না। এখানে অন্য যারা ঢুকতে চেয়েছিলেন, তাদের কাউকে ঢুকতে দেওয়া হয় নাই।’ আগের কেন্দ্রের চেয়ে একেবারেই বিপরীত চিত্র।’’
‘আমার কাছে বিভিন্নজন ফোন করে এই চিত্রের কথাই বলেন। সাধারণত, আমি যেসব ফোন রিসিভ করি, তাতে দেখা যায়; তাদের যেসব অভিযোগ থাকে সেগুলোই আমার কাছে আসে। কোথাও ভালো ভোট হচ্ছে, এই কথা বলে আমার কাছে কেউ ফোন করে না।’
‘‘এই চিত্র দেখে আমি রীতিমতো হতাশ। কারণ, কোথাও কোনো ভোটার নাই। তারপরে আমি ভেতরে গেলাম। ভেতরে গিয়ে দেখলাম, একজন প্রিসাইডিং অফিসার সম্পর্কে ওখানকার যারা সাংবাদিক ছিলেন, তারা আমাকে বললেন, ‘এইখানে উনার (প্রিসাইডিং অফিসার) সামনে বসে সিল মারা হয়েছে। তখন আমি তাকে জিজ্ঞেস করলাম, আপনার সামনে বসে সিল মারা হয়েছে? উনি বললেন, ‘আমি একটু বাথরুমে গিয়েছিলাম।’ কিন্তু, সাংবাদিক বা অন্যান্য যারা সাক্ষী তারা বললেন, উনি বসে ছিলেন এবং উনার সামনেই সিল মারা হয়েছে।’’
‘এটার ব্যাপারে আমি তখন রিটার্নিং অফিসারকে বললাম, আপনার যা যা করণীয়, তা তা করেন। রিটার্নিং অফিসার ওখানকার সার্বিক ক্ষমতাধর ব্যক্তি। তো, উনি এটার ব্যবস্থা নিয়েছেন বা নিচ্ছেন; এমন একটি অবস্থা’, যোগ করেন মাহবুব তালুকদার।
আগামী মাসের ১৪ ফেব্রুয়ারি বর্তমান কমিশনের মেয়াদ শেষ হচ্ছে। আপনারা পাঁচ বছর এই দায়িত্বে আছেন, আপনার অনুভূতি কী? আপনারা কী সফল হয়েছেন না কি পারেননি, এমন প্রশ্নে মাহবুব তালুকদার বলেন, ‘এইটা নিয়ে ব্যক্তিগত অনুভূতি ওইভাবে প্রকাশ করা যাবে না। এটা আমার মনে হয় একটি সম্মিলিত অনুভূতির ব্যাপার। নির্বাচন কমিশন আত্মমূল্যায়ন করে তারপরে যদি অনুভূতি ব্যক্ত করেন, তাহলে সেটা যথাযথ হবে। ব্যক্তিগতভাবে তো আমি এসব কথা বললামই। এটা তো নির্বাচন কমিশনের কথা নয়, আমার ব্যক্তিগত অনুভূতির কথা। ধন্যবাদ সবাইকে।’