মধ্যরাতে শেষ নাসিকের প্রচারণা, ভোট রোববার
মধ্যরাতেই শেষ হয়েছে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন (নাসিক) নির্বাচনের সকল প্রচার-প্রচারণা। এ নির্বাচনে কে হচ্ছেন নতুন মেয়র, সেই হিসাব-নিকাশ চলবে আজ শনিবার দিনভর। আগামীকাল রোববার সকাল ৮টা থেকে থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত চলবে ভোটগ্রহণ। ইতোমধ্যে এ ভোট জমিয়ে তুলেছেন আওয়ামী লীগ মনোনীত মেয়র পদপ্রার্থী ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভী ও স্বতন্ত্র মেয়র পদপ্রার্থী অ্যাডভোকেট তৈমূর আলম খন্দকার।
দুই প্রার্থী ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভী ও অ্যাডভোকেট তৈমূর আলম খন্দকার ভোটারদের মন জয় করতে দিয়েছেন নানা প্রতিশ্রুতি। জানিয়েছেন তিনিই উপযুক্ত। বলেছেন তাঁকে ভোট দেওয়ার কথা। এদিকে এ ভোটকে কেন্দ্র করে নির্বাচন কমিশন কঠোর অবস্থানের কথা জানিয়েছে। একইসঙ্গে তৎপর আইনশৃঙ্খলা বাহিনীও।
এটা বলার অপেক্ষা রাখে না যে, ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভী ও অ্যাডভোকেট তৈমূর আলম খন্দকারের মধ্যেই প্রতিযোগিতা হবে। ভোটের প্রচার-প্রচারণায়ও এগিয়ে রয়েছেন তারাই। এখন ভোটাররা চুলচেরা বিশ্লেষণ করছেন, কে হচ্ছেন নগরের নতুন অভিভাবক। বিশ্লেষণ চলছে, নির্বাচনে মেয়র পদে জয়-পরাজয়ে নিয়ামক কী হবে? প্রার্থীর যোগ্যতা-অযোগ্যতা, দলীয় প্রতীক, নারী না কি নতুন ভোটার— কারা নির্ধারণ করবেন নতুন মেয়র। নগরজুড়ে আজ এমনই আলোচনা সবার মধ্যে।
বিগত দুটি সিটি নির্বাচনে ভোটারদের মধ্যে এত উৎসাহ- উদ্দীপনা দেখা যায়নি। যেন উৎসবের নগরীতে পরিণত হয়েছে নারায়ণগঞ্জ। মেয়র পদপ্রার্থীসহ নগরের প্রতিটি ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে চলেছে কাউন্সিলর পদপ্রার্থীর সমর্থকদের প্রচার-প্রচারণা। মেয়র পদে সাতজন প্রার্থী থাকলেও সবার দৃষ্টি আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী সেলিনা হায়াৎ আইভী ও স্বতন্ত্র প্রার্থী তৈমূর আলম খন্দকারের দিকে। তবে, এ ভোটকে কেন্দ্র করে সাধারণ মানুষের মধ্যে শঙ্কাও কম নয়।
এদিকে নাসিক নির্বাচনকে ঘিরে পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। শুক্রবার সন্ধ্যায় নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা মাহফুজা আক্তার বলেন, ‘নাসিক নির্বাচনে ১৯২টি ভোটকেন্দ্রে ও কেন্দ্রের বাইরে নিরাপত্তা নিশ্চিতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পাঁচহাজারের বেশি সদস্য নিয়োজিত থাকবে। প্রতি কেন্দ্রে থাকবেন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ২৬ জন সদস্য। এ ভোটে কোনো ধরনের অনিয়ম সহ্য করা হবে না। ভোটাররা যেন শান্তিপূর্ণভাবে ভোট দিতে পারেন, সেজন্য যা যা করার নির্বাচন কমিশন ব্যবস্থা নিয়েছে।’
নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের এ ভোটে আইভী ও তৈমূরের মধ্যে ভোটযুদ্ধ হলেও এবারের নির্বাচেন ঘুরে ফিরে বারবার আসছে শামীম ওসমানের নাম। গত ১০ জানুয়ারি শামীম ওসমান দীর্ঘ নিরবতা ভেঙে নৌকার পক্ষে কাজ করার ঘোষণা দেন। তারপরও তাঁকে নিয়ে খোদ আওয়ামী লীগের মধ্যে চলছে আলোচনা। শামীম ওসমান বার বার বলছেন, নৌকার বিরুদ্ধে যাওয়ার উপায় নেই। নারায়ণগঞ্জ বঙ্গবন্ধু ও শেখ হাসিনা তথা নৌকার ঘাঁটি। এখানে নৌকা অবশ্যই জয়লাভ করবে।
আওয়ামী লীগ মনোনীত মেয়রপ্রার্থী সেলিনা হায়াৎ আইভী বলেছেন, ‘ভোটকেন্দ্রে সহিংসতা না হলে আমার বিজয় সুনিশ্চিত। নির্বাচনে আমি জিতবই।’নগরের দেওভোগে নিজ বাসভবনে গতকাল শুক্রবার সকালে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের উত্তরে আইভী এ কথা বলেন।
নির্বাচনে সম্ভাব্য সহিংসতা নিয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে আইভী বলেন, ‘আমার নির্বাচনি অবস্থা যেখানে জমজমাট, সেখানে সহিংসতা সৃষ্টি করা হতে পারে। নির্বাচন কমিশনকে আমি আগেই জানিয়েছি, যাতে ভোটকেন্দ্রে ভোটার যেতে পারেন। নারী ভোটার এবং তরুণ ভোটারেরা যেন যেতে পারেন। কারণ, এ ভোটগুলো আমার। কোনো ধরনের সহিংসতা যেন না হয়।’
আইভী বলেন, ‘আমার তরফ থেকে কিছু হবে না। আমার কোনো বাহিনী নেই। সহিংসতা হলে আমারই ক্ষতি। প্রতিপক্ষ চাইছে সহিংসতা হোক।’আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়ে আইভী বলেন, ‘আমার বিজয় সুনিশ্চিত জেনে কেউ যদি ভোটকেন্দ্রে সহিংসতা করে, সেটি মোটেও ঠিক হবে না। এ ক্ষেত্রে আমি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাছে অনুরোধ করব, তারা যেন বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে দেখে।’
অপরদিকে স্বতন্ত্র মেয়র প্রার্থী তৈমূর আলম খন্দকার বলেছেন, ‘একাধিকবার অভিযোগ করেও প্রতিকার পাইনি। তারপরও আমি নির্বাচন কমিশনের ওপর আস্থা রাখতে চাই। নির্বাচন কমিশনকে আমরা অত্যন্ত আস্থার সঙ্গে অনেকগুলো অভিযোগ করেছিলাম। সেই সব অভিযোগের প্রতিকার তো হয়নি, বরং একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। তারপরও আমি নির্বাচন কমিশনের ওপর আস্থা রাখতে চাই।’
তৈমূর আলম অভিযোগ করে বলেন, ‘আমার নেতাকর্মীদের বাড়ি বাড়ি পুলিশ অভিযান চালাচ্ছে। টেলিফোনে হুমকি দিচ্ছে, গ্রেপ্তার করছে। নির্বাচনে প্রভাব বিস্তারের জন্য বহিরাগতদের এনে সার্কিট হাউসসহ বিভিন্ন জায়গায় রাখা হচ্ছে। এ বিষয়ে নির্বাচন কমিশনকে ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান জানাই।’
এছাড়াও তিনি নির্বাচন পর্যবেক্ষণের জন্য আন্তর্জাতিক মিডিয়া ও মানবাধিকার সংস্থার পাশাপাশি সার্বিক বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করেন।
এদিকে নির্বাচনি প্রচারণাকালে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলাসহ সরকার বৃহস্পতিবার থেকে ১১ দফা নির্দেশনামা জারি করলেও এসব নির্দেশনা কোনো প্রার্থীই মানছে না। এ ব্যাপারে সিভিল সার্জন ডা. ইমতিয়াজ বলেন, শুক্রবার মধ্যরাত থেকে নারায়ণগঞ্জে স্বাস্থ্যবিধি কার্যকর হবে।
গত কয়েকদিনে নাসিকের ২৭টি ওয়ার্ড ঘুরে ও নানা শ্রেণি-পেশার মানুষের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, এবারের নির্বাচনে মেয়র পদে জয়-পরাজয়ে আরও কিছু ফ্যাক্টর কাজ করবে। দলীয় প্রতীক বা নিজস্ব ভোটারদের সঙ্গে ব্যক্তি ইমেজ তো থাকবেই। প্রধান দুই মেয়র পদপ্রার্থীর মধ্যে যিনি এসব ভোট নিজের বাক্সে নিতে পারবেন, তিনিই হাসবেন বিজয়ের হাসি। আর ভোটারদের প্রত্যাশা-ভয়হীন পরিবেশে নিজেদের পছন্দের প্রার্থীকে বেছে নিতে চান তারা। যেখানে ঘটবে তাদের মতের প্রতিফলন। সুখে-দুঃখে পাশে পাবেন নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের।
রিটার্নিং কর্মকর্তা মাহফুজা আক্তার আরও জানান, ১৯২টি ভোটকেন্দ্রের প্রতিটিতে একজন এসআইয়ের নেতৃতে থাকবেন পাঁচজন করে পুলিশ সদস্য। এ ছাড়াও আটজন পুরুষ ও চারজন নারী আনসার সদস্য নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকবেন। নাসিক নির্বাচনে পুলিশের ২৭টি ইউনিট স্ট্রাইকিং ফোর্স ছাড়াও পুলিশের মোবাইল টিম থাকবে ৬৪টি, প্রতি টিমে সদস্য থাকবেন পাঁচজন।
যেকোনো অপ্রীতিকর অবস্থা তৈরি হওয়ার আগেই নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে প্রস্তুত থাকবেন বলে জানান রিটার্নিং কর্মকর্তা মাহফুজা আক্তার। তিনি বলেন, ‘নারায়ণগঞ্জে আদালাভাবে ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্র নেই, সবগুলো কেন্দ্রকেই বিশেষ বিবেচনায় রেখে গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে দেখা হচ্ছে।’
নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনে ২৭টি ওয়ার্ডের ১৯২টি কেন্দ্রের এক হাজার ৩৩৩ ভোটকক্ষে ৫ লাখ ১৭ হাজার ৩৬১ জন ভোটার তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগের সুযোগ পাবেন।