আজ ভোট : নারায়ণগঞ্জ সিটির দায়িত্বে আইভী না তৈমূর?
নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে আজ রোববার ভোট। সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত বিরতিহীন ১৯২টি কেন্দ্রে এ ভোটগ্রহণ চলবে। অপরদিকে, অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন নিশ্চিত করতে সব ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে নির্বাচন কমিশন। জেলা প্রশাসকও জানিয়েছেন শান্তিপূর্ণ হবে নারায়ণগঞ্জ সিটির ভোট।
নির্বাচন কমিশনার রফিকুল ইসলাম বলেন, ইতোমধ্যে বহিরাগতদের নির্বাচনি এলাকা ছাড়ার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। নির্বাচনি এলাকায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পর্যাপ্ত সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে।
নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনে ইলেক্ট্রনিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএম) ভোটগ্রহণ করা হবে। এ জন্য নারায়ণগঞ্জে দুই হাজার ৯১২টি ইভিএম মেশিন আনা হয়েছে। প্রতিটি কেন্দ্রে প্রয়োজনের তুলনায় দেড়গুণ ইভিএম রাখা হবে। গতকাল শনিবার দুপুর থেকে ভোটকেন্দ্রগুলোতে নির্বাচনি সামগ্রী পৌঁছানো শুরু হয়।
ইসি থেকে জানানো হয়, নির্বাচনে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পাশাপাশি ১৪ জন জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। পেনাল কোডের অধীনে তারা মামলা নিয়ে সংক্ষিপ্ত বিচার কাজ পরিচালনা করবেন।
নির্বাচনের প্রধান আকর্ষণ মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা নিয়ে। নির্বাচনে মেয়র পদে সাতজন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। তারা হলেন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভী (নৌকা), স্বতন্ত্র প্রার্থী বিএনপির সাবেক নেতা ও আইনজীবী তৈমূর আলম খন্দকার (হাতি), খেলাফত মজলিসের এ বি এম সিরাজুল মামুন (দেয়ালঘড়ি), ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মাওলানা মো. মাছুম বিল্লাহ (হাতপাখা), বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলনের মো. জসীম উদ্দিন (বটগাছ), বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টির মো. রাশেদ ফেরদৌস (হাতঘড়ি) এবং স্বতন্ত্র প্রার্থী কামরুল ইসলাম (ঘোড়া)।
নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনে ২৭টি ওয়ার্ডের ১৯২টি কেন্দ্রের এক হাজার ৩৩৩ ভোটকক্ষে পাঁচ লাখ ১৭ হাজার ৩৬১ জন ভোটার তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগের সুযোগ পাবেন। তার মধ্যে চারজন তৃতীয় লিঙ্গের ভোটারও রয়েছেন।
২৭টি সাধারণ ওয়ার্ডে কাউন্সিলর পদে ১৪৮ জন ও সংরক্ষিত নয়টি ওয়ার্ডে মহিলা কাউন্সিলর পদে রয়েছেন ৩৪ জন প্রার্থী।
ইসি জানায়, নাসিক নির্বাচনকে ঘিরে পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। ১৯২টি ভোটকেন্দ্রে ও কেন্দ্রের বাইরে নিরাপত্তা নিশ্চিতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পাঁচ হাজারের বেশি সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে। প্রতিটি কেন্দ্রে থাকবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ২৬ জন সদস্য।
নারায়ণগঞ্জ সিটি নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা মাহফুজা আক্তার শনিবার দুপুরে সাংবাদিকদের জানান, নারায়ণগঞ্জে আলাদাভাবে কোনো ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্র নেই। সব কেন্দ্রকেই বিশেষ বিবেচনায় রেখে গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে দেখা হচ্ছে। ১৯২টি ভোটকেন্দ্রের প্রতিটিতে একজন এসআইয়ের নেতৃত্বে থাকবে পাঁচজন করে পুলিশ সদস্য। এ ছাড়া আটজন পুরুষ ও চারজন নারী আনসার সদস্য নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকবেন।
রিটার্নিং কর্মকর্তা আরও বলেন, নাসিক নির্বাচনে পুলিশের ২৭টি ইউনিট, স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে থাকবে। এ ছাড়া পুলিশের ৬৪টি মোবাইল টিম (প্রতি টিমে সদস্য থাকবে পাঁচজন) আর বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) ১৪ প্লাটুন সদস্য থাকবে। র্যাবের স্ট্রাইকিং ফোর্স থাকবে তিনটি, চেকপোস্ট ছয়টি ও টহলটিম থাকবে সাতটি।
এ দিকে নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করতে নয়টি সংস্থার ৪২ জন পর্যবেক্ষককে অনুমতি দিয়েছে নির্বাচন কমিশন। সংস্থাগুলো হলো জাতীয় নির্বাচন পর্যবেক্ষণ পরিষদ (জানিপপ), সার্ক মানবাধিকার ফাউন্ডেশন, আইন সহায়তা কেন্দ্র (আসক) ফাউন্ডেশন, সমাজ উন্নয়ন প্রয়াস, তৃণমূল উন্নয়ন সংস্থা, তালতলা যুব উন্নয়ন সংগঠন, রিহাফ ফাউন্ডেশন, বিবি আছিয়া ফাউন্ডেশন এবং মানবাধিকার ও সমাজ উন্নয়ন সংস্থা-মওসুস।
তবে, পর্যবেক্ষক হিসেবে কাজ করতে নির্বাচন পর্যবেক্ষণ নীতিমালা মানার পাশাপাশি এসব সংস্থাকে ভোট শেষ হওয়ার এক সপ্তাহের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিলের শর্ত দিয়েছে নির্বাচন কমিশন।
জানা যায়, ১৮৭৬ সালে নারায়ণগঞ্জ পৌরসভা গঠিত হয়। ২০১১ সালে নারায়ণগঞ্জ, সিদ্ধিরগঞ্জ ও কদমরসুল পৌরসভাকে এক করে নারায়ণগঞ্জকে দেশের সপ্তম সিটি করপোরেশনে উন্নীত করা হয়।
ওই বছরেই আওয়ামী লীগের ‘বিদ্রোহী’ প্রার্থী ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভী এক লাখ ৮০ হাজার ৪৮ ভোট পেয়ে প্রথম মেয়র নির্বাচিত হন। তার প্রতিদ্বন্দ্বী আওয়ামী লীগের প্রার্থী শামীম ওসমান পান ৭৮ হাজার ৭০৫ ভোট। ওই ভোটের শেষ মুহূর্তে বিএনপির মনোনীত প্রার্থী তৈমূর আলম খন্দকার কেন্দ্রের নির্দেশে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ান।
২০১৬ সালে অনুষ্ঠিত দ্বিতীয় নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে আইভী এক লাখ ৭৪ হাজার ৬০২ ভোট পেয়ে আবার মেয়র নির্বাচিত হন। সেবার তার প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন বিএনপি মনোনীত প্রার্থী সাখাওয়াত হোসেন খান।
এবারের নির্বাচনে মেয়র পদে প্রধান দুই প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী তাদের প্রচার-প্রচারণায় নির্বাচন সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ হবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আর সন্দেহের কথা বলেছেন; বলেছেন আত্মবিশ্বাসের কথাও। তারা প্রত্যেকেই বলেছেন, তিনিই জিতবেন লাখো ভোটের ব্যবধানে। কিন্তু তাদের সেই কথা কি শুধুই কথার কথা নাকি বাস্তবতা, তা আজ নিরূপণ করবে নারায়ণগঞ্জবাসী। আজ রাতেই জানা যাবে তার ফল। কে হাসবেন বিজয়ের হাসি?