এজেন্টদের অ্যারেস্ট করতে হলে ছয় মাস আগে, না হয় নির্বাচনের পর : সিইসি
নির্বাচনের আগে পোলিং এজেন্টদের অ্যারেস্ট করার বিষয়ে প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেছেন, আমরা বারবার করে সরকারকে এটা জানাবো, যদি তাদের অ্যারেস্ট করতে হয় ছয় মাস আগেই অ্যারেস্ট করে ফেলেন সবাইকে। আর যদি অ্যারেস্ট করতে হয় নির্বাচনের পরে গিয়ে অ্যারেস্ট করেন। নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করা উচিত হবে না।
আজ বুধবার (৪ অক্টোবর) নির্বাচন ভবনে আয়োজিত ‘অবাধ ভোটাধিকার : প্রার্থী ও পোলিং এজেন্টের ভূমিকা’ শীর্ষক কর্মশালায় অংশ নিয়ে সিইসি এ কথা বলেন।
কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেছেন, নির্বাচনি কালচারের অপরিহার্য অংশ হচ্ছে কারচুপি। এটা কোথায় হয় কীভাবে হয় আমরা কিন্তু অভিজ্ঞ ব্যক্তি নই। অনেকে বলেন ভোটকেন্দ্রের ভেতরে হয়, যদি ভোটকেন্দ্রের ভেতরে হয়, আমরা জানি সেখানে একজন পোলিং এজেন্ট থাকে। যেমন প্রিজাইডিং কর্মকর্তা কিন্তু একজনের পক্ষ নিতে পারে, কিন্তু আমার মা যদি আমাকে ইয়ে.. করে তাহলে কী আমি আমরা মায়ের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করবো? তা তো করবো না। যদি পোলিং এজেন্টরা শক্ত অবস্থান নেন তাহলে নির্বাচনে কারচুপি করা কতটা সহজ আমি অনেকের কাছে জানতে চেয়েছিলাম, অনেকে বলেছেন কারচুপি করা খুবই ডিফিকাল্ট। কারণ পোলিং এজেন্টকে যে শিক্ষা দেওয়া হয় সেখানে সেনাপ্রধান বা পুলিশের আইজি সাহেবও যদি সেখানে আসেন, উনি তো ভোটার নন, পোলিং এজেন্ট যদি এটা জানেন, উনার নলেজটা যদি থাকে, আর সে যদি দৃষ্টি রাখে ভোটের কোনো অনিয়ম হচ্ছে কি-না, সঙ্গে সঙ্গে যদি প্রিজাইডিং অফিসারকে অবহিত করেন। আবার পোলিং এজেন্ট নিজেও দুষ্টু হতে পারেন। এটা একটা উভয় সংকট। আমরা ভাবছিলাম যদি প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক নির্বাচন হয়, সেখানে যদি প্রকৃত প্রতিদ্বন্দ্বি প্রার্থী তারাই তাদের দক্ষ, সাহসী ও বলিষ্ঠ পোলিং এজেন্ট নিয়োজিত করতে পারেন, তারাই যদি চারদিকে দৃষ্টি রাখে, তাহলে ওই কারচুপিগুলো রোধে সহায়ক হতে পারে কি না।
কাজী হাবিবুল আউয়াল আরও বলেন, এজেন্টকে বের করে দেওয়ার আরেকটা অভিযোগ আমরা পাই। আমি প্রকৃত বিষয় জানি। ব্যাপকভাবে পারসেপশন হচ্ছে শক্তিশালী প্রার্থী দুর্বল প্রার্থীর এজেন্ট বের করে দেয়। এটা কীভাবে ব্যালেন্স করা যেতে পারে আমরা এ নিয়ে চিন্তা করবো যে কীভাবে পোলিং এজেন্টের রোলকে নির্বাচনমুখী করা যায়।
পোলিং এজেন্টকে যদি মালামাল পৌঁছার আগে কেন্দ্রে আসা নিশ্চিত করতে পারি তাহলে তারা ব্যালট বাক্স খালি কি না দেখতে পারবেন, এটাও আমরা বিবেচনা করবো।
কাজী হাবিবুল আউয়াল আরও বলেন, যেখানেই অনাচার হচ্ছে প্রিজাইডিং অফিসারকে জানাতে হবে। এবং তখন তাকে ব্যবস্থা নিতে হবে, এজন্য আমরা কিন্তু প্রশিক্ষণ দিচ্ছি। সম্প্রতি একটি আইনে বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত করেছি। কোনো অনিয়ম হলে প্রিজাইডিং কর্মকর্তা প্রতিহত করবেন, নিজে না পারলে পুলিশকে বলবেন, তারা ভোটের অনুকূল পরিবেশ প্রতিস্থাপন করবেন। তারাই যদি প্রবল পেশিশক্তির কারণে না পারেন, তাহলে ভোট বন্ধ করে ভোটকেন্দ্র থেকে বেরিয়ে আসবেন। পোলিং এজেন্টের নামটা সাধারণত গোপন রাখা হয়। সকালবেলা দেওয়া হয় যাতে তারা নিরাপদে ওখানে পৌঁছাতে পারেন।
কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেন, আমাদের কাছে তারা একশ জন বা দেড়শ জনের নাম দিলেন। দিলে পরে যদি আমরা দেখি দেড়শজনই অ্যারেস্ট হয়ে গেছেন। তখন আমাদের একটা নেগেটিভ ইমপ্রেশন নিতে হবে। কেন তারা একমাস আগে অ্যারেস্ট হলেন না। কেন তারা দুই মাস আগে অ্যারেস্ট হলেন না। ভোটের আগের দিনই সবাই উধাও হয়ে গেল কেন। যেহেতু আমরা নির্বাচন করি, আমরা সৎভাবে করতে চাচ্ছি, আন্তরিকভাবে করতে চাচ্ছি। কোনো দলের পক্ষপাতিত্ব করার জন্য কিন্তু আমরা এই দায়িত্ব গ্রহণ করিনি।
কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেন, এটাও হতে পারে একটা লিস্ট যদি আগেই দেওয়া হয় আমরা তাদের ট্রেইন করব। এরপর যদি সবাই পটাপট অ্যারেস্ট হতে থাকলো, যে ১৫০ জন আছে এরমধ্যে ১৪০ জনই অ্যারেস্ট গেছে, তখন ইট উইল সার্টেইনলি মিন সামথিং যে তাদের অ্যারেস্ট করা হয়েছে বিশেষ একটা উদ্দেশ্যে। আমরা ওইক্ষেত্রটিকেই কখনো চাই না। আমরা আশা করবো, আমরা বারবার করে সরকারকে এটা জানাবো, যদি তাদের অ্যারেস্ট করতে হয় ছয় মাস আগেই অ্যারেস্ট করে ফেলেন সবাইকে। আর যদি অ্যারেস্ট করতে হয় নির্বাচনের পরে গিয়ে অ্যারেস্ট করেন। নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করা উচিত হবে না। আামরাও কলঙ্কিত হবো সেই ক্ষেত্রে, এটা আমি আন্তরিকভাবে মনে করি। এটাই সবাই বলবেন পোলিং এজেন্ট যদি না থাকে, নির্বাচন তো গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। পারসেপশন উইল বি ভেরি নেগেটিভ ইন দ্যাট কেস।