রাজনৈতিক সংকট নিরসনের সামর্থ্য ইসির নেই, নিজেরাই সমাধান করুন : সিইসি
নির্বাচনের পরিবেশ অনুকূল-প্রতিকূল হওয়াটা আপেক্ষিক মন্তব্য করে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেন, ‘রাজনৈতিক যে সংকটগুলো আছে, আমরা বলেছি—সেগুলো সম্পর্কে আমাদের প্রত্যাশা সব সময় ইতিবাচক। কিন্তু, সেই সংকট নিরসন করার সামর্থ্যটা আমাদের নেই বা আমাদের সে ম্যান্ডেটও নেই। আমরাও বলেছি—আপনারাও নিজেদের মধ্যে চেষ্টা করতে পারতেন।’
রাজধানীর আগারগাঁওয়ের নির্বাচন ভবনে আজ শনিবার (৪ নভেম্বর) বিকেলে নিবন্ধিত ২৬ দলের সঙ্গে আলোচনা সভা শেষে সিইসি এসব কথা বলেন। এ সময় দলগুলোকে নিজেদের মধ্যে আলোচনা করে সমস্যা নিরসনের দায়িত্ব নেওয়ার পরামর্শ দেন তিনি।
দলগুলোর উদ্দেশে কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেছেন, নির্বাচন বিষয়ে বিদেশিরা এসে আমাদের অনেক পরামর্শ দিচ্ছেন। অথচ, আপনারা দিতে পারছেন না। রাজনৈতিক নেতা হিসেবে এ দায়িত্বটা নিতে পারতেন। বারংবার চেষ্টা করতে পারতেন–নিজেদের মধ্যে সংলাপ করে একটা অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টি করতে।
ইসির বাধ্যবাধকতার কথা স্মরণ করে কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেন, ‘আমরা স্পষ্টভাবে বলেছি—আমাদের স্পেস এবং টাইমটা সীমিত। আমরা কিন্তু অনেক বেশি স্পেস নিয়ে কাজ করতে পারি না। আমাদের জন্য সময়সীমা সংবিধানে নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে। এরমধ্যে আমাদের নির্বাচন করতে হবে। দলগুলোও তা বুঝতে পেরেছেন বলে আমি মনে করি।’
সিইসি বলেন, ‘আমাদের পাশেও খুব বেশি স্পেস নেই, সামনেও খুব বেশি স্পেস নেই, পেছনেও খুব বেশি স্পেস নেই। আশা করি, আমাদের বক্তব্য তারা অনুধাবন করতে পেরেছেন। আমরাও দলগুলোর বক্তব্য হৃদয়ঙ্গম করতে পেরেছি।’
সব দলের মতো বিএনপি ও অন্যদলগুলোকেও ভোটে প্রত্যাশার কথা জানান সিইসি। কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেন, ‘আমাদের অবস্থান থেকে সবসময় বলে এসেছি—আমরা সব রাজনৈতিক দল, বিএনপিও; আমাদের আসন্ন দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে ওনাদের অংশগ্রহণ প্রত্যাশা করি। কেউ পছন্দ করুক বা না করুক।’
কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেন, ‘আমরা আমাদের নির্বাচন করব। তাদের (আন্দোলনে থাকা রাজনৈতিক দল) প্রতি আমাদের উদাত্ত আহ্বান থাকেবে—আপনারা আসুন। কীভাবে আসবে, সে কোর্সটা আমরা চার্ট করে দিতে পারব না। আপনারা আসুন, আমাদের শুভ কামনা থাকবে। অংশগ্রহণ করে সফল হোক, সে শুভ কামনা থাকবে।’
দলগুলো ভোটে অংশ নিয়ে সক্রিয় ভূমিকা নেবে বলে আশা করেন সিইসি। তিনি বলেন, ‘আমরা মতবিনিময় করেছি, যাতে আগামী নির্বাচনটা সবার অংশ গ্রহণে, সবার সক্রিয় দায়িত্ব পালনের মাধ্যমে অবাধ, নিরপেক্ষ হয়। আমি এককভাবে সব করে দেব তা নয়, তাদেরও দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করতে হবে। আশা করি, সবাই উজ্জীবিত হবে, উদ্বুদ্ধ হবে, সংসদ নির্বাচনে অংশ নিতে আগ্রহী হবেন।’
সিইসি বলেন, ‘কিছকিছু আইন নিয়ে আলোচনা হয়েছে, ডিজিটাল ব্যবস্থাপনা বিষয়ে জানানো হয়েছে। কেউকেউ মনে করেন, নির্বাচন কমিশন এককভাবে একটি সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন করতে পারেন।’ তিনি বলেন, ‘নির্বাচন কমিশনের সামর্থ্য অত্যন্ত সীমিত। আমাদের সামর্থ্য সীমিত। আমরা নির্বাচনটা আয়োজন করি। কিন্তু, নির্বাচন পরিচালনার দায়িত্বটা আমাদের হস্তান্তর করে দিতে হয়। তাদেরও ওপর আমাদের নজরদারি থাকবে।’
পোলিং এজেন্টদের দায়িত্ব স্মরণ করিয়ে দেওয়ার জন্য দলগুলোকে পরামর্শ দেন সিইসি। কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেন, ‘নজরদারি থাকতে হবে প্রতিদ্বন্দ্বি দলের। দল, প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বি করলে সে আসনের প্রতিটি কেন্দ্রে পোলিং এজেন্ট দিতে হবে অবশ্যই। পোলিং এজেন্ট দিয়ে তাদের অবশ্যই স্ব স্ব স্বার্থ রক্ষা করতে হবে। পোলিং এজেন্ট যদি পারচেজ হয়ে যায়, আমার করার কিছু থাকবে না। পোলিং এজেন্ট যদি আপনাদের (প্রার্থী) প্রোটেক্ট করতে না পারে, আমরা ঢাকা থেকে প্রোটেক্ট করতে পারব না।’
দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের প্রস্তুতি নিয়ে সকালে ১৩টি দলের সঙ্গে ও বিকালে ১৩টি দলের সঙ্গে আলোচনা করে ইসি। দলের পক্ষ থেকে দুজন করে প্রতিনিধি অংশ নেয়। আমন্ত্রিত ৪৪ দলের মধ্যে বিএনপি ও সমমনা দলগুলোসহ ১৮টি দল অংশ নেয়নি। দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের অগ্রগতিসহ সার্বিক বিষয়ে আলোচনা সভায় ইসি সচিবালয়ের পক্ষ থেকে দলগুলো প্রস্তুতির বিষয় উপস্থাপন করা হয়। এ সময় চার নির্বাচন কমিশনার, ইসি সচিবসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।