সাকিব-নিক্সনসহ ২১ জনকে ইসির শোকজ
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার শেষ দিনে আচরণবিধি লঙ্ঘনের হিড়িক পড়ে। রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার সময় নির্বাচনি আচরণবিধির তোয়াক্কা না করে মিছিল, শোডাউন ও মোটর শোভাযাত্রাসহ মনোনয়নপত্র জমা দেন প্রার্থীরা। এসব প্রার্থীদের কয়েকজনকে শোকজ (কারণ দর্শানোর অভিযোগ) করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)।
এ ছাড়া মনোনয়ন ফরম জমা দেওয়ার আগে সংবর্ধনা ও সাংবাদিক লাঞ্ছনা ও হুমকি দিয়ে বক্তব্যের জন্য শোকজ করা হয়েছে। শোকজে পড়েছেন ২১ জনের মতো। তাদের মধ্যে আছেন মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীরাও। তাদের আজ শুক্রবারের (১ ডিসেম্বর) মধ্যেই জবাব দিতে বলা হয়েছে। শোকজের গ্রহণযোগ্য জবাব না দিতে পারলে তাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও উল্লেখ করেছে দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনের জন্য গঠিত নির্বাচনি অনুসন্ধান কমিটি।
ইসির আইন শাখা সূত্র জানায়, সরকারের মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীসহ ২১ জনকে বিভিন্ন অভিযোগে শোকজ করেছে ইসি। এর মধ্যে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ, জাতীয় পার্টি ও স্বতন্ত্র প্রার্থীরাও রয়েছেন।
তিন মন্ত্রীসহ যাদের শোকজ করা হয় তারা হলেন–নারায়ণগঞ্জ-১ (রূপগঞ্জ) আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী এবং বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজী, গাজীপুর-২ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী জাহিদ আহসান রাসেল ও ঢাকা-১৯ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী ডা. এনামুর রহমান, নাটোর-৩ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী ও আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জুনায়েদ আহমেদ পলক, সাবেক ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা মন্ডলীর সদস্য ও নরসিংদী-৫ রায়পুরা আসনে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী রাজিউদ্দিন আহমেদ রাজু, গাজীপুর-৫ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী সাবেক মহিলা ও শিশুবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী মেহের আফরোজ চুমকি, মাগুরা-১ আসনে আওয়ামী লীগ প্রার্থী (ক্রিকেটার) সাকিব আল হাসান, জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সংসদ সদস্য ও ঢাকা-৬ আসনে দলের প্রার্থী কাজী ফিরোজ রশীদ, ফরিদপুর-৪ (ভাঙ্গা-সদরপুর-চরভদ্রাসন) আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী ও যুবলীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মজিবুর রহমান চৌধুরী নিক্সন, চট্টগ্রাম-১৬ (বাঁশখালী) আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী মোস্তাফিজুর রহমান চৌধুরী, লক্ষ্মীপুর-১ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী আনোয়ার হোসেন খান, লক্ষ্মীপুর-২ (রায়পুর-সদর আংশিক) আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী অ্যাডভোকেট নুরউদ্দিন চৌধুরী নয়ন ও লক্ষ্মীপুর-৩ (সদর) আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী গোলাম ফারুক পিংকু, সুনামগঞ্জ-৪ আসনে জাতীয় পার্টির মনোনীত প্রার্থী পীর ফজলুর রহমান মিসবাহ, পটুয়াখালী-৪ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী মহিব্বুর রহমান, রংপুর-৩ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী তুষার কান্তি মন্ডল, মুন্সীগঞ্জ-৩ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী মৃণাল কান্তি দাস ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৩ আসনে আওয়ামী লীগ প্রার্থী র আ ম উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী, নাটোর-২ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী শফিকুল ইসলাম শিমুল ও ময়মনসিংহ-১১ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী কাজিম উদ্দীন আহম্মেদ ধনু।
এ ছাড়া নরসিংদী জেলা ছাত্রলীগ সভাপতি আহসানুল ইসলাম রিমনকেও উসকানিমূলক বক্তব্যের জন্য শোকজ করা হয়।
অনুসন্ধান কমিটি দেওয়ানি আদালতের ক্ষমতাপ্রাপ্ত হয়ে ভোটের দায়িত্ব পালন করছেন। কেউ আচরণবিধি লঙ্ঘন করে থাকলে গণপতিনিধিত্ব আদেশ অনুযায়ী সাজা পাবেন।
এ বিষয়ে গতকাল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় জানতে চাইলে ইসির আইন শাখার সিনিয়র সহকারী সচিব বিপ্লব দেবনাথ এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘আমি যতটুকু শুনেছি, এখন পর্যন্ত ১৫ জনকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয়েছে। প্রার্থীরা কারণ দর্শাবেন। তারপর হয়তো নির্বাচনি অনুসন্ধান কমিটি প্রথমবার প্রার্থীকে সতর্ক করে দেবেন। কিন্তু, প্রথমবার সতর্ক করে দেওয়ার অর্থ কিন্তু এই নয় যে তিনি ছাড় পেয়ে গেলেন। কোনোভাবে যদি ওই প্রার্থী যদি পুনরায় আচরণবিধি লঙ্ঘন করে থাকেন, তাহলে গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশের বলে জরিমানাসহ তার প্রার্থীতা বাতিল করার বিধানও রয়েছে।’