নারায়ণগঞ্জের প্রার্থীদের হলফনামায় যত সম্পদ
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে পাঁচটি আসনে ৪৫ জন মনোনয়ন সংগ্রহ করে জমা দিলেও হেভিওয়েট প্রার্থীদের হাড্ডা-হাড্ডি লড়াই হবে তিনটি আসনে (রূপগঞ্জ, আড়াইহাজার, সোনারগাঁ)। অন্য দুটি আসনে ওসমান ভাতৃদ্বয়ের (শামীম ওসমান ও সেলিম ওসমান) বিপক্ষে শক্ত কোনো প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী নেই বললেই চলে।
নারায়ণগঞ্জ-১ (রূপগঞ্জ) আসনে ত্রিমুখী লড়াইয়ের সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে শুরু থেকেই। এই আসনে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী গোলাম দস্তগীর গাজীর বিপক্ষে মাঠে রয়েছেন তৃণমূল বিএনপির মহাসচিব তৈমুর আলম খন্দকার ও স্বতন্ত্র প্রার্থী আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও টানা তিনবারের উপজেলা চেয়ারম্যান শাহজাহান ভূইয়া। তিনি উপজেলা চেয়ারম্যান পদ থেকে পদত্যাগ করে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করছেন। নারায়ণগঞ্জ-২ (আড়াইহাজার) আসনে আওয়ামী লীগ মনোননীত প্রার্থী নজরুল ইসলাম বাবুর বিপক্ষে শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে মাঠে রয়েছেন জাতীয় পার্টির প্রার্থী আলমগীর সিকদার লোটন। এ ছাড়া নারায়ণগঞ্জ-৩ (সেনারগাঁ) আসনে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী আব্দুল্লাহ আল কায়সার হাসনাতের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন টানা দুইবারের সংসদ সদস্য ও জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য লিয়াকত হোসেন খোকা।
নির্বাচন কমিশনে দাখিল করা হলফনামায় পাওয়া গেছে তাঁদের দেওয়া বিভিন্ন সম্পদের তথ্য। এগুলো বিশ্লেষণ করে হেভিওয়েট প্রার্থীদের সম্পদের পরিমাণ নিম্নে উল্লেখ করা হলো।
নারায়ণগঞ্জ-১
গোলাম দস্তগীর গাজীর হলফনামায় বাড়ি ও অন্যান্য ভাড়া থেকে বাৎসরিক আয় এক লাখ ২৬ হাজার টাকা। ব্যবসা থেকে বার্ষিক আয় ৮২ কোটি তিনি লাখ ৬২ হাজার ৬০০ টাকা। শেয়ার, সঞ্চয়পত্র ও ব্যাংক আমানত আছে ৯১ লাখ ৪২ হাজার ৩৭৫ টাকা। সংসদ সদস্য হিসেবে প্রাপ্ত ভাতা বাৎসরিক ৩২ লাখ ৯৪ হাজার ৩৪৮ টাকা। তার কাছে নগদ টাকা আছে নয় কোটি ৬২ লাখ ৪৬ হাজার ৬৯৬ টাকা। ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে জমা আছে ৬১ লাখ ৪৩ হাজার ১২৯ টাকা। পরিবহণ খাতে তাঁর সম্পত্তির পরিমাণ এক কোটি ৯৩ লাখ ১৩ হাজার ৫৫৭ টাকা। অন্যান্য সম্পত্তির পরিমাণ এক হাজার ৩০৪ কোটি ৩১ লাখ ৬৬ হাজার ৬৭২ হাজার টাকা বলে তিনি তাঁর হলফনামায় উল্লেখ করেছেন। এছাড়া তার নামে জমি রয়েছে ৭৮ কোটি ৬৬ লাখ ৭৯ হাজার ৪৪৭ টাকা মূল্যের। তার নামে দালানকোঠা রয়েছে ২৮ কোটি ৬৮ লাখ ৫০ হাজার ১৯১ টাকা মূল্যের। বিভিন্ন ব্যাংক ও অন্যান্য আর্থিক প্রতিষ্ঠানে ঋণের পরিমাণ ৯৩৫ কোটি ৩২ লাখ ৫ হাজার ২০৭ টাকা।
তৈমুর আলম খন্দবারের বাড়ি অ্যাপার্টম্যান্টের ভাড়া থেকে বার্ষিক আয় সাত লাখ ৭২ হাজার ৮৩৯ টাকা। শেয়ার/সঞ্চয়পত্র আছে ৪৬ হাজার ৪০৯ টাকা। পেশাগত বা কাজ করে তার উপার্জন চার লাখ টাকা। নগদ অর্থ রয়েছে ছয় লাখ ৫১ হাজার ৫০২ টাকা। ব্যাংকে জমা অর্থের পরিমাণ ৩৬ লাখ ৬৮ হাজার ৪৯৮ টাকা। রাজউক প্লটে রয়েছে তার পাঁচ কাঠা জমি। এ ছাড়া তার রয়েছে একটি বাড়ি।
শাহজাহান ভুইয়ার হলফনামা অনুযায়ী বাড়ি/দোকান ভাড়া থেকে বছরে আয় ১২ লাখ ২৪ হাজার ৬২৮। ব্যবসা থেকে বার্ষিক আয় ২৬ লাখ ৪০ হাজার টাকা। শেয়ার/সঞ্চয়পত্র থেকে বছরে তার আয় দুই লাখ ৮০ হাজার টাকা। অন্যান্য সম্পদের পরিমাণ ৭০ হাজার টাকা। আবাসিক/বাণিজ্যিক দালানের অর্জনকালীন সময়ে অর্থিক মুল্য এক কোটি ৯৬ লাখ ১৭ হাজার ৬৩০ টাকা। বাড়ি অ্যাপার্টম্যান্ট ২৮ লাখ ৬০ হাজার টাকা। ব্যাংকের কাছে তার ঋণের পরিমাণ সাত লাখ টাকা।
নারায়ণগঞ্জ-২
নজরুল ইসলাম বাবুর হলফনামা অনুযায়ী শিক্ষাগত যোগত্যা এম এস এস, কৃষি খাত থেকে তাঁর আয় ১২ হাজার টাকা, বাড়ি বা অ্যাপার্টমেন্ট ভাড়া ৫৭ হাজার ৬৮ টাকা। ব্যাংক আমানত তিন লাখ ৩১ হাজার ১১৯। সংসদ সদস্য হিসেবে সম্মানিভাতা ৬ ছয় লাখ ৬০ হাজার টাকা। করমুক্ত সংসদ সদস্য হিসেবে সম্মানিভাতা ১৬ লাখ ৪০ হাজার পাঁচ টাকা। অস্থাবর সম্পত্তি : নগদ টাকা ছয় লাখ ২২ হাজার ১৩৫ টাকা। ব্যাংকে জমা দুই লাখ সাত হাজার ৪৯.৩৩২ টাকা। শেয়ার ক্রয় এক লাখ ৫০ হাজার ৩৯৫। স্থায়ী আমানতে বিনিয়োগ (সঞ্চয়পত্র ৫ বছরমেয়াদি) এক লাখ ২০ হাজার টাকা। গাড়ি টয়োটা ল্যান্ড ক্রুজার স্টেশন ওয়াগন জিপ এক টি যার মূল্য এক কোটি ছয় লাখ ৫০ হাজার টাকা। স্বর্ণ ৩৫ ভরি এবং ৩২ বোর পিস্তল ও ১২ বোর শর্টগান যার মূল্য ছয় লাখ ১২ হাজার ১৮৬ টাকা। ইলেক্টনিক সামগ্রী তিন লাখ ৩০ হাজার টাকা। আসবাবপত্র চার লাখ ১১ হাজার টাকা। সূচনা ডাইং অ্যান্ড প্রিন্টিং লি ১২ হাজার ৫০০টি শেয়ার যার মূল্য ১২ লাখ ৫০ হাজার টাকা এবং গ্রীন ল্যান্ড টাউন ডেভেলপমেন্ট লিমিটেডের ১৩ হাজার শেয়ার ১৩ লাখ টাকা স্থাবর সম্পত্তি কৃষি জমি ৩৩.১৩ শতাংশ। অকৃষি জমি ৩৬১.৭৯৫ শতাংশ যার মূল্য দুই কোটি পাঁচ লাখ ৫৫ হাজার টাকা। দালান ২.২৫ শতাংশ এক লাখ ৫৭ হাজার ৫০০ টাকা। বাড়ি ৩২৩৮ বর্গফুটের ফ্ল্যাট যার মূল্য ৮১ লাখ টাকা। প্লট ১০ কাটা ৪ ছটাক যার মূল্য ৪১ লাখ টাকা।
আলমগীর শিকদার লোটনের হলফনামায় নিজেকে একজন ব্যবসায়ী হিসেবে পরিচয় দিয়েছেন। ব্যবসা থেকে তাঁর বার্ষিক আয় চার লাখ ৬০০ হাজার টাকা। শেয়র/সঞ্চয়পত্র থেকে তার আয় ১৬ হাজার ৯১৫ টাকা। তার নগদ টাকার পরিমাণ চার লাখ ৫০ হাজার টাকা। ব্যাংকে জমা অর্থের পরিমাণ ১৬ হাজার ৯১৫ টাকা।
নারায়ণগঞ্জ-৩
আব্দুল্লাহ আল কায়সার হাসনাতের বাড়ি, অ্যাপার্টমেন্ট ও দোকান থেকে বার্ষিক আয় ৩৪ লাখ ৩৯ হাজার ৮০৮ টাকা। শেয়ার, সঞ্চয় বা ব্যাংকে আমানত হিসেবে রয়েছে ৫৮ হাজার ৭৪৫ টাকা। তার অস্থাবর সম্পদ হিসেবে রয়েছে দুটি মোটর যান যার মূল্য ৮১ লাখ ৭১ হাজার সাত টাকা; স্বর্ণ ও মূলবান ধাতু নির্মিত অলঙ্কার রয়েছে ২০ তোলা, যার মূল্য ৫২ হাজার টাকা; আসবাবপত্র রয়েছে ৩২ হাজার ৯০০ টাকার। তাঁর স্থাবর সম্পদের মধ্যে রয়েছে- পৈত্রিক সূত্রে পাওয়া ১৭৬ শতাংশ কৃষি জমি ও ৮৯.১০ শতাংশ অকৃষি জমি। এ ছাড়া রয়েছে ১০.৮৩ শতাংশের জমিতে সাততলা দালান। সেই সাথে তার রয়েছে পূর্বাচলে ১১ কাঠা ৪ ছটাক ৪ বর্গফুটের প্লট, যার মূল্য ৪৬ লাখ ৬১ হাজার ৮০০ টাকা।
লিয়াকত হোসেন খোকার হলফনামা অনুযায়ী তার পেশা ব্যবসা। তাঁর ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানগুলো হচ্ছে কালীরবাজার চারারগোপে যাবতীয় কাঁচা পাকা ফলের আড়ত্ ও মোগড়াপাড়া চৌরাস্তা এলাকায় লাবিবা ট্রেড লিংক আইউব প্লাজা, লাবিবা ট্রেড লিঃ, ইশাখাঁ অ্যাগ্রো লি.। তাঁর ব্যবসা থেকে বার্ষিক আয় নয় লাখ ৪১ হাজার ৭১১ টাকা। ব্যাংকে সুদ ও শেয়ার থেকে তিনি আয় করেন এক লাখ ৮৮ হাজার ৯৪১ টাকা। বাড়ি/দোকান ভাড়া চার লাখ ৯২ হাজার ৪৭৯ টাকা। এ ছাড়া জাতীয় সংসদ সদস্য হিসেবে তার বার্ষিক আয় ২২ লাখ ৪৬ হাজার ৮০০ টাকা। নগদ অর্থ রয়েছে ৩৪ লাখ ৮০ হাজার ৯৭১ টাকা ও ব্যবসা বহির্ভূত সম্পত্তি ৩২ লাখ ৪০ হাজার ৯৯২ টাকা। তাঁর নামে ব্যাংকে জমা অর্থ রয়েছে চার লাখ ৭৩ হাজার ৬০৬ টাকা। তাঁর নামে শেয়ার রয়েছে ১৭ লাখ টাকার। লিয়াকত হোসেন খোকার নিজের একটি জিপ গাড়ি রয়েছে। স্বর্ণালংকার তার নিকট উপহার হিসেবে রয়েছে ৩০ ভরি। লিয়াকত হোসেন খোকার সৈয়দপুরে ৮ শতাংশ জমি রয়েছে, যার মূল্য ২০ লাখ টাকা। তার নিজস্ব কোনো বাড়ি নেই তবে তাঁর স্ত্রীর শেয়ারে একটি তিনতলা বাণিজ্যিক ভবন রয়েছে যার মূল্য ২০ লাখ ৭২ হাজার ৬৭৯ টাকা।
নারায়ণগঞ্জ-৪
শামীম ওসমান হলফনামায় নিজেকে একজন ব্যবসায়ী হিসেবে পরিচয় দিয়েছেন। তাঁর চারটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান মেসার্স জেড এন করপোরেশন, জেড এন শিপিং লাইনস লিমিটেড, মাইশা এন্টারপ্রাইজ লিমিটেড, খান ব্রাদার্স ইনফোটেক লি. ও উইসডম নিটিং মিলস্ লি.। নিজের বাড়ি, দোকান ও অন্যান্য খাত থেকে বার্ষিক আয় চার লাখ ৫০ হাজার টাকা। ব্যবসা থেকে বার্ষিক আয় ৩৬ লাখ ৭৫ হাজার ৯৯২ টাকা। শেয়ার, সঞ্চয়পত্র ও ব্যাংক থেকে জামানত সুদে আয় ১৫ লাখ ৭৯ হাজার ৫৪১ টাকা। জাতীয় সংসদ সদস্য হিসেবে সম্মানি পান ২২ লাখ দুই হাজার টাকা। তার নিজ নামে নগদ অর্থ রয়েছে ১৭ লাখ ৮৭ হাজার ৫৯২ টাকা। বিভিন্ন ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে জমা অর্থের পরিমাণ ৭৩ লাখ চার হাজার ৬৮৯ টাকা। তার কাছে থাকা লাইসেন্স করা রাইফেলের মুল্য এক লাখ ২০ হাজার টাকা ও পিস্তলের মুল্য এক লাখ পাঁচ হাজার টাকা।
নারায়ণগঞ্জ-৫
সেলিম ওসমান হলফনামায় নিজেকে একজন ব্যবসায়ী হিসেবে পরিচয় দিয়েছেন। পাঁচটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের নাম উল্লেখ করেছেন- উইজডম অ্যাটায়ার্স, উইজডম ফ্যাবিক্স, উইজডম নিটিং মিলস্, ফাইভ স্টার ফার্ম হাউজ লি. ও ফাইভ স্টার ফার্ম হাউজ। কৃষি খাত থেকে সেলিম ওসমানের বার্ষিক আয় ৩১ লাখ ৬১ হাজার ২৯৮ টাকা। বাড়ি, দোকান ভাড়া ও অন্যান্য খাতে বার্ষিক আয় এক লাখ ৮৩ হাজার ৫১০ টাকা। ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান থেকে বার্ষিক আয় ৬০ লাখ, শেয়ার ও সঞ্চয়পত্রে সুদ থেকে আয় ৫১ লাখ ৯৫ হাজার ৭৯৫ টাকা। এ ছাড়া জাতীয় সংসদ সদস্য হিসেবে সম্মানিভাতা পান ২২ লাখ ২ হাজার টাকা।