আ.লীগ প্রার্থীর বেড়েছে নগদ অর্থ, স্বতন্ত্র প্রার্থীর ঋণ দুই হাজার তিনশ কোটি
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন উপলক্ষে নির্বাচন কমিশনে (ইসি) ব্রাহ্মণবাড়িয়া-১ (নাসিরনগর) আসন থেকে প্রার্থীরা হলফনামা দিয়েছেন। যেখানে দেখা গেছে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী ও বর্তমান সংসদ সদস্য বদরুদ্দোজা ফরহাদ মো. ফরহাদ হোসেনের (সংগ্রাম) বেড়েছে নগদ অর্থ, স্ত্রী হয়েছেন শূন্য থেকে অর্ধকোটি টাকার মালিক, স্বর্ণ জুড়িয়েছেন ১০০ তোলা। অপরদিকে, সদ্য বহিষ্কৃত বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার উপদেষ্টা স্বতন্ত্র প্রার্থী সৈয়দ এ কে একরামুজ্জামানের ঋণের বোঝা দুই হাজার ৩০০ কোটি টাকা।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া-১ (নাসিরনগর) আওয়ামী লীগ প্রার্থী বদরুদ্দোজা ফরহাদ
এই আসনের আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী ও বর্তমান সংসদ সদস্য বদরুদ্দোজা ফরহাদ মো. ফরহাদ হোসেন (সংগ্রাম) ও তার স্ত্রীর নগদ অর্থ বেড়েছে। পাশাপাশি বেড়েছে শেয়ার। নির্বাচন কমিশনে জমা দেওয়া হলফনামায় এ তথ্য উল্লেখ করেছেন তিনি।
২০১৮ সালে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সময় দেওয়া হলফনামা অনুযায়ী, ফরহাদ হোসেন সংগ্রামের নগদ টাকার পরিমাণ ছিল দুই কোটি ৭৩ লাখ ৯৯ হাজার ৮৮৯ টাকা। তার স্ত্রীর কোনো নগদ টাকা ছিল না। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের হলফনামায় তিনি উল্লেখ করেছেন, তার নগদ তিন কোটি ৪৪ লাখ ৫৬ হাজার ৫৫০ টাকা আছে এবং তার স্ত্রীর আছে ৬৫ লাখ ৬০ হাজার ৮৯৩ টাকা।
২০১৮ সালে সংগ্রামের বন্ড ও ঋণপত্রের শেয়ার ছিল এক কোটি ৪৭ লাখ ২৯ হাজার ৩৮৯ টাকা এবং তার স্ত্রীর নামে ছিল দেড় লাখ টাকার শেয়ার। কিন্তু এবারের হলফনামা অনুযায়ী সংগ্রামের শেয়ার হোল্ডিং চার কোটি ও শেয়ার এক কোটি ৪২ লাখ ১৯ হাজার ৪৬৭ টাকার হয়েছে। তার স্ত্রীর শেয়ার হোল্ডিং দেড় লাখের জায়গায় গত ৫ বছরে বেড়ে দাঁড়িয়েছে মোট এক কোটি ৩০ লাখ টাকার। এ ছাড়া ২০১৮ সালে সংগ্রামের স্ত্রীর কোনো স্বর্ণালঙ্কার না থাকলেও গত পাঁচ বছরে ১০০ তোলা স্বর্ণালঙ্কারের মালিক হয়েছেন।
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের হলফনামায় সংগ্রামের অন্য বিনিয়োগ ছিল ৯ লাখ ৫০ হাজার ৮০০ টাকা। এবারের হলফনামায় তার অন্য মূলধন ছয় লাখ ৮৫ হাজার ৯৬৯ টাকা ও অন্য বিনিয়োগ ৩৪ লাখ ৫০ হাজার ৮০০ টাকা।
এ ছাড়া ২০১৮ সালে সংসদ সদস্য বদরুদ্দোজা ফরহাদ হোসেন সংগ্রামের দায় ছিল ৭৬ লাখ ৯৮ হাজার ৮১৮ টাকা। এবার নির্বাচনে দাখিল করা হলফনামায় তার মার্জিন লোন ২২ লাখ ৩১ হাজার ৭৯৭ টাকা ও অফিস ভাড়া বাবদ দায় ৩৭ লাখ ৪২ হাজার ৮৯৮ টাকা। তার শিক্ষাগত যোগ্যতা স্নাতকোত্তর।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া-১ (নাসিরনগর) স্বতন্ত্র প্রার্থী সৈয়দ এ কে একরামুজ্জামান
ব্রাহ্মণবাড়িয়া-১ (নাসিরনগর) আসনে আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্ধিতা করবেন স্বতন্ত্র প্রার্থী সৈয়দ এ কে একরামুজ্জামান। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তার দেওয়া হলফনামায় ছয়টি মামলার উল্লেখ রয়েছে। এরমধ্যে চারটি মামলা চলমান।
এ ছাড়া এবারের হলফনামায় তার কৃষিখাত থেকে বাৎসরিক আয় ছয় লাখ ৩৫ হাজার ৮০৯ টাকা, বাড়ি-এপার্টমেন্ট-দোকান বা অন্যান্য ভাড়া থেকে তার নিজের আয় এক কোটি ৪৪ লাখ ৮৭ হাজার ৯০৩ টাকা, তার ওপর নির্ভরশীলদের আয় চার লাখ ৩৭ হাজার ৫৫৮ টাকা। ব্যবসা থেকে আয় ১০ কোটি ৪৮ লাখ ৩৮ হাজার ৮৩ টাকা, শেয়ার-সঞ্চয়পত্রও ব্যাংক আমানত থেকে আয় এক কোটি ৭২ লাখ ৮৯ হাজার ১৮৪ টাকা, আর এ কে সিরামিকস থেকে সম্মানী ভাতা দুই কোটি ৮৩ লাখ ৯৯ হাজার ৭৭৬ টাকা, শ্যামল বাংলা মিডিয়া লিমিটেড থেকে সম্মানী ভাতা ১৪ লাখ ৪০ হাজার, অংশীদারী কারবার থেকে আয় ৭৬ লাখ ৩৪ হাজার ১৯৬ টাকা, মুলধনী আয় ৩৬ কোটি ১৮ লাখ ৯৯ হাজার ৯৫৬ টাকা, করমুক্ত আয় ৩০ লাখ ৭৩ হাজার ৮৬৪ টাকা।
পাশাপাশি হলফনামায় তার অস্থাবর সম্পদ হিসেবে নগদ টাকার পরিমাণ ২৩ কোটি ৩৬ লাখ ৯৬ হাজার ৬৯২ টাকা, স্ত্রীর নামে ৬৩ লাখ ৫০ হাজার ৬৯৩ টাকা।
ব্যাংক এবং আর্থিক প্রতিষ্ঠানে জমাকৃত অর্থের পরিমাণ এক কোটি ২১ লাখ ৩১ হাজার ১৪৯ টাকা। স্ত্রীর নামে ৯ লাখ ৬৭ হাজার ৭৬৬ টাকা। বন্ড, ঋনপত্র ও শেয়ারের মধ্যে নিজের নামে অ-তালিকাভূক্ত শেয়ার ২৮২ কোটি ৩৩ লাখ ২৮ হাজার ৬১০ টাকা, তালিকাভূক্ত ১৪ কোটি ১৩ লাখ ৭২ হাজার ৯১৭ টাকার এবং স্ত্রীর নামে দুই কোটি তিন লাখ ৮১ হাজার টাকার রয়েছে।
এ ছাড়া অংশীদার কারবার ও ব্যবসায়িক মূলধনের পরিমাণ তিন কোটি ৫৮ লাখ ৯৫ হাজার ৫৯৩ টাকা, ঋণ প্রদান ৫১ কোটি ১৩ লাখ ৯৯ হাজার ৯৭৫ টাকা, শেয়ারমানি-ডিপোজিট ৪২ কোটি ৩০ লাখ ৭৩ হাজার ৬৪৫ টাকা। এ ছাড়া স্ত্রীর নামে রয়েছে পাঁচ লাখ ২০ হাজার টাকা। তবে তার স্বর্ণসহ অন্যান্য মূল্যবান ধাতু রয়েছে মাত্র ৩০ হাজার টাকার।
এ ছাড়া স্থাবর সম্পদ রয়েছে চার কোটি ৯৮ লাখ ৬৮ হাজার ৯৮৭ টাকা মূল্যের ২০৬৪ শতাংশ কৃষি জমি, ৩৫ কোটি পাঁচ লাখ ৭৪ হাজার ৫১৯ টাকা মূল্যের ১০৫৯ শতাংশ অকৃষি জমি এবং স্ত্রীর নামে ২০ লাখ ৮৬ হাজার ৫৬০ টাকার ৫৪ দশমিক ৪৪ শতাংশ অকৃষি জমি।
২১ হাজার ৯৭১ বর্গফুটের একটি বাণিজ্যিক ভবন, যার মূল্য ২২ কোটি ২৪ লাখ এক হাজার ৩২ টাকা। ছয় দশমিক ৬০ শতাংশ জমির ওপর নির্মিত ১০ কোটি দুই লাখ ২৩ হাজার ৫০৩ টাকার আরেকটি ভবন এবং স্ত্রীর নামে এক কোটি ৬৩ লাখ ৩৪ হাজার টাকা দামের ১০ পয়েন্ট সাত শতাংশ জমিসহ বাড়ি ও দুই হাজার ৪৪৯ বর্গফুটের ২৩ লাখ ৮৭ হাজার ২৯০ টাকা দামের ফ্ল্যাট।
হলফনামা অনুযায়ী তার ব্যক্তিগত ও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান মিলিয়ে ঋণ রয়েছে দুই হাজার ৩০১ কোটি ৫০ লাখ চার হাজার ১৫৪ টাকা। হলফনামা অনুযায়ী তার নামে বিভিন্ন ব্যাংকে ঋণ রয়েছে ২০৭ কোটি ১৫ লাখ ১০ হাজার টাকা। যার মধ্যে পূবালী ব্যাংক লিমিটেডে রয়েছে ৮৪ কোটি ১৮ লাখ ৪০ হাজার, ব্যাংক এশিয়া লিমিটেডে ১৪ কোটি চার লাখ ৩০ হাজার টাকা, ওয়ান ব্যাংক লিমিটেডের ২০ কোটি ১১ লাখ ২০ হাজার টাকা, স্টেট ব্যাংক অব ইন্ডিয়া ৩০ কোটি টাকা এবং স্ট্যান্ডার্ড চাটার্ড ব্যাংক লিমিটেডে রয়েছে ৫৮ কোটি ৮১ লাখ ২০ হাজার টাকা।
এ ছাড়া হলফনামা মতে তার বিভিন্ন বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের শেয়ারের বিপরীতে ঋণ রয়েছে দুই হাজার ৯৪ কোটি ৩৪ লাখ ৯৮ হাজার ১৫৪ টাকা। যারমধ্যে উত্তরা ব্যাংকে ৯৮ কোটি ৫৮ লাখ টাকা, ঢাকা ব্যাংক লি. থেকে ১০৪ কোটি ৬১ লাখ ৭১ হাজার ৮২৯ টাকা, ইস্টার্ন ব্যাংক পিএলসিতে রয়েছে ৩৩৭ কোটি ২২ লাখ ১৯ হাজার ৬৫ টাকা, ট্রাস্ট ব্যাংক লি. রয়েছে ৩১ কোটি ৩৫ লাখ ৬০ হাজার, এন আর বি ব্যাংক লি. রয়েছে ১৫ কোটি ৩৫ লাখ ১৫ হাজার ৯৪ টাকা, প্রাইম ব্যাংক লি. রয়েছে ১৬ কোটি ৬৪ লাখ এক হাজার ৯৬২ টাকা, মিডল্যান্ড ব্যাংক লি. রয়েছে ৪০ কোটি ৩৪ লাখ ২০ হাজার টাকা, দি সিটি ব্যাংক লি. রয়েছে ২০৩ কোটি ২৫ লাখ ৭১ হাজার ৬৫৪ টাকা এবং মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক লি. রয়েছে ৪১ কোটি ৬৬ লাখ ২০ হাজার টাকা, ইউনাইটেড কমারশিয়াল ব্যাংক পিএলসিতে রয়েছে ৩৫ কোটি ৫৮ লাখ ৮৩ হাজার ১২৬ টাকা, স্ট্যান্ডার্ড চাটার্ড ব্যাংক লি. রয়েছে ৭৮ কোটি ৯৩ লাখ ২০ হাজার টাকা, কমারশিয়াল ব্যাংক অব সিলন পিএলসিতে রয়েছে ৩৬ কোটি ১৯ লাখ ১০ হাজার টাকা, ডাচ বাংলা ব্যাংক লি. রয়েছে ৩৬৭ কোটি ৯৯ লাখ ২৩ হাজার ৮৫ টাকা, ইনভেস্টমেন্ট করপোরেশন অব বাংলাদেশ রয়েছে ৭১ কোটি ছয় লাখ ৪২ হাজার ১২৬ টাকা, আই ডি এল সি ফাইনান্স লি. রয়েছে ৬৯ লাখ ৭৩ হাজার ৯৪৪ টাকা, পূবালী ব্যাংক লি. রয়েছে ৮৪ কোটি ১৮ লাখ ৪০ হাজার টাকা, ব্যাংক এশিয়া লি. রয়েছে ১১৩ কোটি ৯৬ লাখ ২৮ হাজার ৯১৩ টাকা, ওয়ান ব্যাংক লি. রয়েছে ২০ কোটি ১১ লাখ ২০ হাজার টাকা, স্টেট ব্যাংক অব ইন্ডিয়া ৩০ কোটি টাকা, যমুনা ব্যাংক লি. রয়েছে ১৩৫ কোটি ৫ লাখ ৪০ হাজার ৭৯৫ টাকা, ব্রাক ব্যাংক লি. রয়েছে ৭৪ কোটি ৬৬ লাখ ১০ হাজার ৫৬৬ টাকা এবং সোশাল ইসলামী ব্যাংক পিএলসিতে রয়েছে ১৫৬ কোটি ৮৮ লাখ ২৫ হাজার ৯৪৫ টাকা।