পাবনা-১ আসনের স্বতন্ত্রপ্রার্থীর প্রচারণায় বাধার অভিযোগ
প্রচারণার প্রথম দিনেই পাবনা-১ (বেড়া-সাঁথিয়া) আসনের স্বতন্ত্রপ্রার্থী সাবেক তথ্য প্রতিমন্ত্রী অধ্যাপক আবু সাইয়িদের প্রচারণায় বাধা ও অবরুদ্ধ করে রাখার অভিযোগ উঠেছে নৌকার কর্মী-সমর্থকদের বিরুদ্ধে। আজ মঙ্গলবার (১৯ ডিসেম্বর) দুপুরে সাঁথিয়া উপজেলার বোয়াইলমারী বাজারে এ ঘটনা ঘটে।
দুই ঘণ্টা পর সাঁথিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও সহকারী রিটার্নিং অফিসার আলপনা ইয়াসমিনের হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়। অধ্যাপক সাইয়িদ এ ঘটনার জন্য আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের দায়ী করেছেন।
এ সময় সেখানে বিপুল সংখ্যক পুলিশ ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য মোতায়েন করা হয়।
অধ্যাপক আবু সাইয়িদ অভিযোগ করেন, আজ দুপুর দেড়টার দিকে নিজ বাড়ি থেকে সাঁথিয়া উপজেলায় নির্বাচনি প্রচারণার উদ্দেশে কয়েকটি গাড়ি নিয়ে বের হন। পথিমধ্যে বোয়াইলমারী বাজার এলাকায় জনসংযোগ চলাকালে স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা সেখানে উপস্থিত হয়ে তাঁর বিপক্ষে স্লোগান দিতে শুরু করলে পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। এ সময় আওয়ামী লীগনেতাকর্মীরা অধ্যাপক আবু সাইয়িদের প্রচারণায় বাধা দিয়ে তাকে চলে যাওয়ার জন্য স্লোগান দিতে থাকে।
এ সময় অধ্যাপক আবু সাইয়িদ পাশে একটু সরে গিয়ে বসে অবস্থান নেন। আর নৌকার সমর্থকরা পাশেই তাঁর বিপক্ষে নানা স্লোগান দেয় এবং তারাও অবস্থান নেয়। পুলিশ উভয় পক্ষকে ঘিরে রাখে। এ সময় আবু সাইয়িদকে লক্ষ্য করে বেশ কয়েকটি ডিম নিক্ষেপ করে নৌকার সমর্থকরা। সেগুলো অধ্যাপক আবু সাইয়িদের মাথায় গিয়ে পড়ে বলে অভিযোগ করেন সাইয়িদ সমর্থকরা।
সাঁথিয়া পৌর মেয়র মাহবুবুল আলম বাচ্চু, উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান সোহেল রানা খোকন ও বেড়া উপজেলার ভাইস চেয়ারম্যান মেজবাহ মোল্লার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগনেতাকর্মীরা অধ্যাপক আবু সাইয়িদকে ঘিরে ধরে স্লোগান দিতে থাকে। এ অবস্থায় প্রায় দুই ঘন্টা পর সাঁথিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আলপনা ইয়াসমিন ঘটনাস্থলে এসে উভয় পক্ষকে সরে যেতে বাধ্য করেন। উভয় পক্ষ সরে গেলে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়।
এ সময় অধ্যাপক আবু সাঈদের প্রধান নির্বাচনি এজেন্ট ও বেড়া পৌর সভার সাবেক মেয়র আব্দুল বাতেন বলেন, সরকার ও প্রধানমন্ত্রী নিরপেক্ষ নির্বাচনের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। কিন্তু আপনারা আজকে দেখলেন কীভাবে আমাদের অবরুদ্ধ করে রাখা হয়েছে। এটা কি নির্বাচনে স্বাভাবিক পরিবেশ বা নিরপেক্ষ পরিবেশ বলে?
এ বিষয় সাঁথিয়া উপজেলা ভাইস-চেয়ারম্যান সোহেল রানা খোকন বলেন, নির্বাচনের প্রচারণায় বাধা দেওয়ার অভিযোগ সত্য নয়। আজকে নৌকার প্রার্থী শামসুল হক টুকুর নির্বাচনি প্রোগ্রাম ছিল। সেই প্রোগ্রামকে বাধাগ্রস্ত করতেই অধ্যাপক আবু সাইয়িদ আজকে এই এলাকায় এসেছিলেন। তাঁরাই আমাদের মিছিলের সামনে গাড়ি রেখে বাধাগ্রস্ত করছিল।
এ বিষয় গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলতে অপারগতা প্রকাশ করেন সাঁথিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আলপনা ইয়াসমিন। নির্বাচনি পরিবেশ নিরপেক্ষ ও স্বাভাবিক রয়েছে দাবি করে ঘটনাস্থল ত্যাগ করেন তিনি। কথা বলতে রাজি হননি সাঁথিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আনোয়ার হোসেনও।
এদিকে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে বিপুল পুলিশ ও ডিবি পুলিশ মোতায়েন করা হয়।
এ বিষয়ে পাবনা-১ (বেড়া-সাঁথিয়া) আসনের আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী ডেপুটি স্পিকার অ্যাডভোকেট শামসুল হক টুকু সাংবাদিকদের বলেন, মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে আজ মঙ্গলবার সাঁথিয়ায় আওয়ামী লীগের পূর্ব নির্ধারিত বিজয় শোভাযাত্রার কর্মসূচি ছিল। এ সময় স্বতন্ত্রপ্রার্থী সাবেক তথ্য প্রতিমন্ত্রী অধ্যাপক আবু সাইয়িদের বেশ কয়েকটি খালি গাড়ি ঘটনাস্থলে এসে পড়ায় তিনি কিছু সময়ের জন্য শোভাযাত্রার কারণে আটকা পড়েন। পরে তিনি সেখান থেকে নির্বিঘ্নে চলে যেতে পেরেছেন।
এ বিষয়ে জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তা মু. আসাদুজ্জামান মুঠোফোনে সাংবাদিকদের বলেন, আমি বিষয়টি শুনেছি। নির্বাচনী প্রচারণায় বাধা দেওয়ার অধিকার কারো নেই। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে আইনগত ব্যবস্থা নিতে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।