নৌকার তিন অনুসারীর বিরুদ্ধে আরও মামলার সুপারিশ
ঝিনাইদহ-১ (শৈলকূপা) আসনের আওয়ামী লীগ মনোনীত নৌকার প্রার্থী আব্দুল হাইয়ের তিন অনুসারীর বিরুদ্ধে নির্বাচনি আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগের সত্যতা মিলেছে। অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে আরও মামলা করার জন্য ইতিমধ্যে নির্বাচন কমিশন (ইসি) বরাবর সুপারিশ করেছে নির্বাচনি অনুসন্ধান কমিটির চেয়ারম্যান ও বিচারক ল্যান্ড সার্ভে ট্রাইব্যুনাল (যুগ্ম জেলা ও দায়রা জজ) মো. গোলাম নবী। মামলা করাসহ অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য সুপারিশ করা হয়েছে।
আজ শনিবার (৩০ ডিসেম্বর) সন্ধ্যায় বিষয়টি এনটিভি অনলাইনকে নিশ্চিত করেছেন জেলা জ্যেষ্ঠ নির্বাচন কর্মকর্তা মো. রোকুনুজ্জামান। এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত নির্বাচন কমিশনের আদেশ পাওয়া যায়নি বলে জানান এই কর্মকর্তা।
মামলার সুপারিশপ্রাপ্তরা হলেন—শৈলকূপা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল হাকিম, উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও ধলাহরচন্দ্র ইউপি চেয়ারম্যান মো. মতিয়ার রহমান এবং হাকিমপুর ইউপি চেয়্যারম্যান শিকদার ওয়াহিদুজ্জামান ইকু।
এর আগে গত ২৪ ডিসেম্বর নৌকার প্রার্থী আবদুল হাইয়ের বিরুদ্ধে আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগে জ্যেষ্ঠ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে পৃথক দুটি মামলা করেন শৈলকূপা উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা তায়জুল ইসলাম। মামলা দুটিতে শৈলকুপা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আবদুল হাকিম ও সারুটিয়া ইউপি চেয়ারম্যান মাহমুদুল হাসান মামুনকেও আসামি করা হয়। আদালত আসামিদের বিরুদ্ধে সমন জারি করে ৩ জানুয়ারি হাজির হতে নিদের্শ দিয়েছেন।
সূত্র বলছে, সেদিন আদালতে হাজির হয়ে আসামিদের জামিন নিতে হবে। অন্যথায় তাদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি হতে পারে।
গত ২২ ডিসেম্বর ঝিনাইদহ-১ আসনের ট্রাক প্রতীকের স্বতন্ত্রপ্রার্থী নজরুল ইসলাম দুলাল বিশ্বাস জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তা বরাবর একটি অভিযোগ করেন। ওই অভিযোগে তিনি বলেন, নির্বাচনি আচরণবিধি লঙ্ঘন করে হাকিমপুর ইউনিয়নে ট্রাক মার্কার পোস্টার ও প্রচারেযুক্ত মাইক ব্যবহার করতে দিচ্ছে না চেয়্যারম্যান শিকদার ওয়াহিদুজ্জামান ইকু ও তার বাহিনী। ধলাহরচন্দ্র ইউনিয়নেও প্রতিনিয়ত ব্যানার ও পোস্টার টাঙাতে না দেওয়াসহ প্রচার মাইক ব্যবহারে বাধা দিচ্ছে ইউপি চেয়ারম্যান মতিয়ার রহমান বিশ্বাস ও তার ছেলে।
সেই অভিযোগের প্রতিবেদনে নির্বাচনি অনুসন্ধান কমিটির চেয়ারম্যান মো. গোলাম নবী বলেন, গত ২৪ ডিসেম্বর সকালে হাকিমপুর ইউনিয়নে গিয়ে কোথাও নৌকা প্রতীকের পোস্টার ব্যতীত অন্য কোনো প্রতীকের পোস্টার দেখতে পাওয়া যায়নি। ওদিন ফেরার পথে দুপুরে শৈলকূপা পৌরসভার হল বাজার এলাকা থেকে প্যাকেট করা দুই ভ্যান বিরিয়ানি জব্দ করা হয়। পাশাপাশি ভ্যান চালকদের জবানবন্দি নেয় অনুসন্ধান কমিটি। সে সময় ভ্যান চালক মো. বিশারত ও খাইরুল বলেন, খাবারের প্যাকেটগুলো ইকু চেয়ারম্যানের বাড়ি থেকে নিয়ে নৌকা প্রতীকের প্রার্থীর সভায় নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। খবর পেয়ে সেখানে এসে ইকু চেয়ারম্যান অনুসন্ধান কমিটির চেয়ারম্যানের সঙ্গে ঔদ্ধত্য আচরণ করেন।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, একই দিন বিকেলে শৈলকুপা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির মিলনায়তনের দ্বিতীয় তলায় গিয়ে একটি সভা হয়। সেখানে হিন্দু-খ্রিস্টান-বৌদ্ধ ঐক্য পরিষদের নেতাকর্মীদের নিয়ে উপজেলা চেয়ারম্যান আব্দুল হাকিম, যুবলীগের সভাপতি শামিম হোসেন মোল্যাসহ অন্যান্যরা সভা করছেন। সভা শেষে উপজেলা আওয়ামী লীগের কার্যালয় থেকে খাবারের প্যাকেট পরিবেশন করা হয়। যা সংসদ নির্বাচনে রাজনৈতিক দল ও প্রার্থীর আচরণ বিধিমালা–২০০৮-এর বিধি ১০ (চ)-এর সুস্পষ্ট লঙ্ঘন।