নির্বাচনি মাঠে কঠোর ইসি : বাতিল হচ্ছে প্রার্থিতা, চলছে শোকজ-মামলা
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ভোটগ্রহণ ৭ জানুয়ারি। এই নির্বাচনকে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ করতে নানা পদক্ষেপ নিয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। ইতোমধ্যে নির্বাচনি মাঠে দেখিয়েছে নানা কঠোরতা। এরইমধ্যে অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় করা হয়েছে প্রার্থিতা বাতিল। এ ছাড়া অভিযোগে উঠলেই প্রার্থীকে দেওয়া হচ্ছে কারণ দর্শানোর চিঠি, করা হচ্ছে মামলা, আদায় করা হচ্ছে জরিমানাও।
গত ১৫ নভেম্বর তফসিল ঘোষণার পর থেকে এখন পর্যন্ত আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, স্বতন্ত্রপ্রার্থী ও তাদের সমর্থকদের অন্তত ৪৯০টি নোটিশ দিয়েছে নির্বাচনি অনুসন্ধান কমিটি। শোকজ, তলব, জরিমানা ও মামলা করা হয় অনেকের বিরুদ্ধে। এর মধ্যে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টির গুরুত্বপূর্ণ নেতারাও রয়েছেন। এরপরও নানা অভিযোগ আসতে থাকায় বেপরোয়া প্রার্থীদের লাগাম টানতে প্রার্থিতা বাতিলের হুমকি দিয়ে আসছিল ইসি। আজ মঙ্গলবার (২ জানুয়ারি) রিটার্নিং কর্মকর্তা, জেলা প্রশাসক (ডিসি) ও পুলিশ সুপারকে (এসপি) হুমকির অভিযোগে লক্ষ্মীপুর-১ আসনের স্বতন্ত্রপ্রার্থী হাবিবুর রহমান পবনের প্রার্থিতা বাতিলের মধ্য দিয়ে সেটিকে বাস্তবতায় আনল সাংবিধানিক সংস্থাটি। যদিও পবন নিজেকে নিরপরাধ ও জুলুমের শিকার বলে দাবি করেছেন। ইসির এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে যাবেন, বলেছেন যুবলীগের এই প্রেসিডিয়াম সদস্য।
এদিকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকত্বের তথ্য গোপন করে নোয়াখালী-১ আসন থেকে স্বতন্ত্রপ্রার্থী হন খন্দকার রুহুল আমিন। তাকে প্রতীক বরাদ্দ দেয় নির্বাচন কমিশন। পরে ১৯ ডিসেম্বর তার প্রার্থিতা বাতিলের জন্য ইসিতে আবেদন করেন জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি শফিকুর রহমান। তাতে সাড়া না পেয়ে ২০ ডিসেম্বর রিট করেন তিনি। রিটের পরিপ্রেক্ষিতে বিষয়টি যাচাই করে প্রতিবেদন দিতে পুলিশের স্পেশাল ব্রাঞ্চ ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে নির্দেশ দেন হাইকোর্ট। দুই সংস্থার প্রতিবেদনে খন্দকার রুহুল আমিনের দ্বৈত নাগরিকত্বের প্রমাণ মেলে। তাই তার প্রার্থিতা বাতিলে পদক্ষেপ নিতে নির্বাচন কমিশনকে ২৭ ডিসেম্বর নির্দেশ দেন হাইকোর্ট। পরে আপিল বিভাগ ওই আদেশ বহাল রাখলে ইসির আইন শাখার উপসচিব আব্দুছ সালাম স্বাক্ষরিত এক নির্দেশনা জারি করে তার প্রার্থিতা বাতিল করেন। সেখানে বলা হয়, রিপ্রেজেনটেশন অব দ্যা পিপল অর্ডার, ১৯৭২ এর আর্টিকেল ৯২-ই এর ক্লস (২)-এর বিধান অনুযায়ী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে খন্দকার আর আমিনের প্রার্থিতা বাতিল করা হলো।
এদিকে নির্বাচনি আচরণবিধি ভঙ্গের দায়ে আজও কয়েকজন প্রার্থী ও তাদের সমর্থকে শোকজ করা হয়। এর মধ্যে রয়েছেন ঢাকা-১৯ আসনের স্বতন্ত্রপ্রার্থী সাইফুল ইসলাম, কিশোরগঞ্জের বাজিতপুর পৌরসভার সাবেক কাউন্সিলর শফিকুল ইসলাম, একই উপজেলা অ্যাডভোকেট বোরহান উদ্দীন ও মোবারক মাস্টার, মাকসুদুর রহমান তপু, সুনামগঞ্জের জামালগঞ্জ উপজেলার এম. নবী হোসেন, বেগমগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি এ বি এম জাফর উল্লাহ, কুমিল্লা-৬ আসনের স্বতন্ত্রপ্রার্থী আন্জুম সুলতানা সীমাসহ আরও অনেকে।
নির্বাচন কমিশনের তথ্য অনুযায়ী, এবারের নির্বাচনে এক হাজার ৮৯১ জন প্রার্থী মাঠে রয়েছেন। এরমধ্যে স্বতন্ত্রপ্রার্থী ৩৮২ জন। ভোটে অংশগ্রহণকারী ২৭টি দলের ও স্বতন্ত্রদের অনেকে উচ্চ আদালত এবং আপিল বিভাগের রায়ে বাদ পড়েন, অনেকে ফিরে পান প্রার্থিতা।
নির্বাচনি আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগ উঠেছে ঝিনাইদহ-১ (শৈলকুপা) আসনে নৌকার প্রার্থী আব্দুল হাইয়ের বিরুদ্ধে। এই অভিযোগে হয়েছে মামলাও। তিনিসহ শৈলকূপা উপজেলা চেয়ারম্যান মো. আব্দুল হাকিম ও আরও দুজনের বিরুদ্ধে পৃথক দুটি মামলা করেন শৈলকূপা উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মো. তায়জুল ইসলাম। গতকাল সোমবার করা ওই মামলার অপর দুই আসামি হাকিমপুর ইউনিয়ন চেয়ারম্যান ইকু শিকদার ও শৈলকূপা উপজেলা যুবলীগের সভাপতি শামীম হোসেন মোল্যা। এর আগে ইসির নির্দেশনায় গত ২৪ ডিসেম্বর নৌকার প্রার্থী আব্দুল হাইয়ের বিরুদ্ধে আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগে সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটের আমলি আদালতে পৃথক দুটি মামলা করেন শৈলকূপা উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মো. তায়জুল ইসলাম।
এই যখন অবস্থা, তখন নির্বাচন কমিশনার আনিছুর রহমান আজ মঙ্গলবার বলেন, অবাধ, সুষ্ঠু, গ্রহণযোগ্য নির্বাচন না করতে পারলে সমগ্র বিশ্ব থেকে বাংলাদেশ বিচ্ছিন্ন হয়ে যাবে। আমাদের উদ্দেশ একটিই, সেটি হলো অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন আয়োজন করা। আমরা যদি অবাধ, সুষ্ঠু, গ্রহণযোগ্য নির্বাচন না করতে পারি, কোনো কারণে যদি আমরা ব্যর্থ হই, তাহলে আমাদের রাষ্ট্র নিজেই ব্যর্থ রাষ্ট্র হয়ে যাবে। কারণ, আমরা সমগ্র বিশ্ব থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাব।