সুষ্ঠু নির্বাচন নিয়ে শঙ্কা স্বতন্ত্রপ্রার্থী উপজেলা আ.লীগ সভাপতির
মাদারীপুর-৩ আসনে আচরণবিধি লঙ্ঘনের ২১ অভিযোগের ২০টিরই কোনো সুরাহা হয়নি উল্লেখ করে নিরপেক্ষ নির্বাচন নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন স্বতন্ত্রপ্রার্থী ও কালকিনি উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও নারী আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য তাহমনিা বেগম।
জানা গেছে, মাদারীপুর-৩ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী আবদুস সোবহান মিয়া গোলাপের বিরুদ্ধে রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে আচরণবিধি লঙ্ঘনের ২১টি লিখিত অভিযোগ করেছেন ঈগল প্রতীকের স্বতন্ত্র প্রার্থী তাহমিনা বেগম। এর মধ্যে একটি অভিযোগ আমলে নিয়ে কালকিনি ও ডাসার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে প্রত্যাহার করা হলেও অন্য অভিযোগগুলোর বিষয়ে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।
স্বতন্ত্রপ্রার্থী তাহমিনা বেগমের অভিযোগ, নৌকার প্রার্থী ও তাঁর সমর্থকরা আচরণবিধি লঙ্ঘন করে নির্বাচনি প্রচার চালালেও তাঁদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না। ফলে সাধারণ ভোটারদের মধ্যে সুষ্ঠু নির্বাচন নিয়ে আতঙ্ক বেড়েছে। অবশ্য এই অভিযোগ ভিত্তিহীন বলে দাবি করেছেন নৌকার প্রার্থী আবদুস সোবহান মিয়া গোলাপ।
মাদারীপুর জেলা নির্বাচনি অনুসন্ধান কমিটির চেয়ারম্যান ও যুগ্ম জেলা জজ (ল্যান্ড সার্ভে ট্রাইব্যুনাল) মো. শরিফুল হকের আদালতে কর্মরত পেশকার মোহাম্মদ আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘আমাদের কাছে আসা প্রতিটি অভিযোগের তদন্ত করে শুনানি করা হয়েছে। তারপর তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ নির্বাচন কমিশনের আইন শাখায় পাঠানো হয়। ওখান থেকে ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ আসবে। তবে যে কয়টি সুপারিশ পাঠানো হয়েছে, তার একটিরও ফিরতি চিঠি আমরা হাতে পাইনি।’
জেলা নির্বাচন কমিশন ও রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয়ের সূত্রে জানা গেছে, প্রচার-প্রচারণা শুরু হওয়ার দিন থেকে গতকাল বৃহস্পতিবার (৪ জানুয়ারি) পর্যন্ত স্বতন্ত্রপ্রার্থী তাহমিনা বেগম ২১টি লিখিত অভিযোগ করেছেন। এর মধ্যে নৌকার প্রার্থীর বিরুদ্ধে ঈগলের নির্বাচনি প্রচারণায় বোমা হামলা, কর্মীকে কুপিয়ে হত্যা, ক্যাম্প ভাঙচুর ও তালা দেওয়া, বিভিন্ন এলাকায় পোস্টার ছিঁড়ে ফেলা, কর্মীদের মারধর, ভোটারদের হুমকি দেওয়ার বিষয় আছে। ঈগল প্রতীকের প্রার্থী তাহমিনা বেগমের বিরুদ্ধেও নৌকার প্রার্থী পাঁচটি অভিযোগ করেছেন।
এসব অভিযোগের বেশির ভাগই রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয় থেকে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য জেলা নির্বাচনি অনুসন্ধান কমিটির কাছে পাঠানো হয়। এই কমিটি অভিযোগের সত্যতা যাচাই-বাছাই করে তদন্ত করে। পরে প্রার্থী ও তাঁদের সমর্থক বা কর্মীকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয়। সন্তোষ জনক জবাব পেলে প্রার্থী ও সমর্থকদের সাধারণ ক্ষমা করা হয়। আর অসন্তোষ জনক জবাব পেলে তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে নির্বাচন কমিশনের উপসচিব (আইন) শাখায় সুপারিশ পাঠানো হয়।
তবে এখন পর্যন্ত নির্বাচন কমিশন থেকে সুপারিশের শাস্তিমূলক কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি বলে দাবি স্বতন্ত্র প্রার্থী তাহমিনা বেগমের।
এই বিষয়ে জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা আহমেদ আলী বলেন, নির্বাচন কমিশন থেকে শাস্তিমূলক কোনো ব্যবস্থা না নেওয়া হলেও মাদারীপুর-৩ আসনের নৌকা ও ঈগলের প্রার্থীকে শতর্ক করে নোটিশ করা হয়েছে। এরপর তাঁরা একই কর্মকাণ্ড করলে তখন হয়তো নির্বাচন কমিশন থেকে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
স্বতন্ত্রপ্রার্থী তাহমিনা বেগম বলেন, ‘প্রতীক বরাদ্দ হওয়ার আগে থেকেই নৌকার প্রার্থী গোলাপ একের পর এক আচরণবিধি ভঙ্গ করে যাচ্ছেন। তাঁর বিরুদ্ধে নির্বাচন কমিশন অনেকটা নির্বাক। এখন পর্যন্ত আমরা ২১টি অভিযোগ দিয়েছি। একটি অভিযোগ আমলে নিয়েছে। বাকি একটিরও কোনো সুরাহা আমরা পাইনি।’
অভিযোগের বিষয়ে আবদুস সোবহান গোলাম বলেন, ‘স্বতন্ত্রপ্রার্থীর প্রতিটি অভিযোগ ভিত্তিহীন, মিথ্যা ও বানোয়াট। এসব নিয়ে আমরা বিচলিত নই।’
জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তা ও জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মারুফুর রশিদ খান বলেন, ‘আমাদের কিছু সীমাবদ্ধতা থাকে। তবে প্রার্থীর পক্ষ থেকে লিখিত অভিযোগ পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে নির্বাচনি অনুসন্ধান কমিটির কাছে পাঠানো হয়। তারা তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য নির্বাচন কমিশনে সুপারিশ করবে। নির্বাচন কমিশনের নির্দেশনা অনুসারে আমরা প্রার্থীদের শোকজও করেছি। ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না, এটি আসলে সঠিক কথা নয়। তবে নির্বাচন সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ করতে আমরা সব ধরনের পদক্ষেপ নিয়েছি।’
মাদারীপুর-৩ আসনে নৌকার প্রার্থী আবদুস সোবহান গোলাপ কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক এবং বর্তমান সংসদ সদস্য। তাঁর শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বী তাহমিনা বেগম সংরক্ষিত নারী আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য ও কালকিনি উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি। এই দুই প্রার্থী ছাড়া আরও চারটি দলের প্রার্থী এই আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। তবে ওই চার প্রার্থীর নির্বাচনি কোনো প্রচার চোখে পড়ে না।
এই আসনে মোট ভোটার তিন লাখ ৫৮ হাজার ৩৪১। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার এক লাখ ৮৭ হাজার ১৭০ এবং নারী ভোটার এক লাখ ৭১ হাজার ১৬৮ জন। তৃতীয় লিঙ্গের ভোটার রয়েছেন তিনজন।
স্বতন্ত্রপ্রার্থী তাহমিনা বেগম কেন্দ্র দখলের হুমকিতে রয়েছেন বলে জানান। জয়ের ব্যাপারে আশাবাদী তিনি।
আবদুস সোবহান গোলাপ বলেন, উন্নয়নের ধারাবাহিকতা রক্ষা করতে নৌকায়ই ভোট দেবে জনগণ। তাই আমি জয়ের ব্যাপারে শতভাগ আশাবাদী।
সাবেক যোগাযোগমন্ত্রী সৈয়দ আবুল হোসেন এই আসন থেকে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে ১৯৯১, ১৯৯৬, ২০০১, ২০০৮ সালে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ২০১৪ সালে জয় পান আওয়ামী লীগনেতা বাহাউদ্দিন নাছিম। ২০১৮ সালে জয়লাভ করেন আবদুস সোবহান মিয়া গোলাপ।