কড়া নাড়ছে ভোট, পুড়ছে ট্রেন ফুটছে ককটেল
কড়া নাড়ছে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ভোটগ্রহণের দিন। হাতে আর এক দিন-এক রাত। রোববার (৭ জানুয়ারি) সকাল হলেই শুরু হবে ভোটগ্রহণ। ভোট শুরুর অপেক্ষায় আছেন প্রার্থীরা। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও তাদের সমমনা জোটের পাশাপাশি নির্বাচনে অংশ নিয়েছে স্বতন্ত্রপ্রার্থীরা। তবে, ভোটের মাঠে নেই বিএনপি ও তাদের সমমনারা। এমন এক নির্বাচনকে ঘিরে সারা দেশে দেখা গেছে পাল্টাপাল্টি অভিযোগ, মিলেছে সহিংসতার তথ্য, অনেকে সরে গেছেন নির্বাচনি প্রতিদ্বন্দ্বিতা থেকে, আবার চলেছে হত্যাকাণ্ড। এরই মধ্যে সুষ্ঠু, অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের পথে হাঁটছে নির্বাচন কমিশন। যদিও এই নির্বাচনকে অনেকে বলেছেন 'একতরফা'।
নির্বাচনে প্রার্থী ও বেশ কিছু ভোটারদের দাবি, এই নির্বাচনের ফলাফলে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ এগিয়ে থাকবে। কারণ, সব দিক দিয়ে তাদের অনুকূলে আছে পরিবেশ। তবে, উদ্বেগ-উৎকণ্ঠার কমতি নেই বলেও জানিয়েছেন তারা।
দেশের বিভিন্ন স্থানে ইতোমধ্যেই নির্বাচনি সহিংসতায় কমপক্ষে পাঁচজনের প্রাণহানির খবর পাওয়া গেছে। শুক্রবার রাত ৯টার সময় যখন এ প্রতিবেদন লেখা হচ্ছিল, তখনও রাজধানীর গোপীবাগে বেনাপোল এক্সপ্রেস ট্রেন দাউ দাউ করে জ্বলছিল। সে সময় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়া একটি ভিডিওতে দেখা যাচ্ছিল, বগির মধ্যে জ্বলা আগুনে একজন পুড়ে যাচ্ছে। পরে রাত ১০টা ২২ মিনিটে জানা যায়, এই আগুনে মারা গেছে চারজন। যদিও কীভাবে আগুন লেগেছে তা নিশ্চিত নয় কেউ।
ইসির সার্বিক প্রস্তুতি সম্পন্ন, নজরদারি বৃদ্ধি
ইসি বলছে, রোববার সকাল ৮টা থেকে ভোটগ্রহণে সার্বিক প্রস্তুতি শেষ করেছে তারা। এখন কেবল ভোটগ্রহনের জন্য অপেক্ষা। তার আগে নির্বাচনকে সামনে রেখে গতকাল শুক্রবার সকাল ৮টায় শেষ হয়েছে প্রার্থীদের আনুষ্ঠানিক প্রচার-প্রচারণা। নির্বাচন উপলক্ষে অনভিপ্রেত পরিস্থিতি এড়াতে ভোটকেন্দ্র, সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান এবং ভবনের নিরাপত্তা জোরদার ও নজরদারি বাড়ানোর নির্দেশ দিয়েছে সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানটি।
প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেছেন, প্রায় আট লাখ সরকারি কর্মকর্তা, কর্মচারি তারা পোলিং কালেকশনের সঙ্গে সম্পর্কিত। ওরা ভোটগ্রহণ করবেন। আরও এক লাখ স্ট্যান্ড বাই থাকবেন। আর আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর যে সংস্থাগুলো আনসার ও ভিডিপি, র্যাব, বিজিবি সব মিলিয়ে সাড়ে সাত লাখ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য মাঠে আছেন। থাকবে ভোট শেষ হওয়া পর্যন্ত। তো এটি একটি বেশ বড় কর্মযজ্ঞ। আইনশৃঙ্খলা রক্ষার জন্য প্রায় তিন হাজার ম্যাজিস্ট্রেট ও জাজেস মাঠে আছে। গত ১৫ নভেম্বর জাতির উদ্দ্যেশে দেওয়া ভাষণে সিইসি ৩০০ আসনের তফশিল ঘোষণা করেন। পরে এক স্বতন্ত্র প্রার্থীর মৃত্যুর কারণে নওগাঁ-২ আসনের ভোট স্থগিত করা হয়। ফলে, ভোটগ্রহণ হবে ২৯৯ আসনে।
ভোটকেন্দ্রের নিরাপত্তা জোরদারের নির্দেশ
নির্বাচন উপলক্ষে অনভিপ্রেত পরিস্থিতি এড়াতে ভোটকেন্দ্র, সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান এবং ভবনের নিরাপত্তা জোরদার ও নজরদারি বাড়ানোর নির্দেশ দিয়েছে ইসি। গতকাল শুক্রবার ইসির নির্বাচন ব্যবস্থাপনা শাখার উপসচিব মো. আতিয়ার রহমান নির্দেশনাটি সব রিটার্নিং কর্মকর্তাদের পাঠিয়েছেন। নির্দেশনায় বলা হয়েছে, নির্বাচন উপলক্ষে সারা দেশে সরকারি-বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ অন্যান্য স্থাপনায় মোট ৪২ হাজার ২৪টি ভোটকেন্দ্র স্থাপন করা হয়েছে। যেসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভোটকেন্দ্র স্থাপন করা হয়েছে সেসব প্রতিষ্ঠানের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি, সম্পাদক বা অনুরূপ কমিটির দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তি এবং ব্যক্তি মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানের মালিকপক্ষের সঙ্গে সভা করে বা যোগাযোগের মাধ্যমে অথবা দায়িত্ব দিয়ে ভোটকেন্দ্রের নিরাপত্তা ও নজরদারি বাড়ানোর সিদ্ধান্ত হয়েছে।
২২ সদস্যের মনিটরিং সেল গঠন
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সমন্বয়ে ২২ সদস্যের মনিটরিং সেল গঠন করেছে কমিশন। এই মনিটরিং সেলের নেতৃত্ব দেবেন আইডিএ প্রকল্প-২ এর প্রকল্প পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আবুল হাসনাত মোহাম্মদ সায়েম। নির্বাচন কমিশনের নির্দেশনা অনুযায়ী, মনিটরিং সেল শনিবার সকাল ৮টা থেকে ৯ জানুয়ারি সকাল ৮টা পর্যন্ত মোট ৭২ ঘণ্টা পরিচালনা করা হবে। দায়িত্বরত কর্মকর্তারা বিভিন্ন উৎস থেকে তথ্য সংগ্রহ করে মাঠপর্যায়ে যথাসম্ভব যাচাই-বাছাই করা আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি সম্পর্কে নির্বাচন কমিশনকে অবহিতকরণ এবং জরুরি প্রয়োজনে বিশেষ প্রতিবেদন পাঠাবেন।
কেন্দ্রে সকালে যাবে ব্যালট পেপার
এবারের নির্বাচনে মোট ৪২ হাজার ২৪টি কেন্দ্র রয়েছে। এর মধ্যে অপেক্ষাকৃত দুর্গম দুই হাজার ৯৬৪ কেন্দ্রে ভোটগ্রহণের আগের দিন আজ শনিবার ব্যালট পেপার পাঠানো হবে বলে জানিয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। এ ছাড়া ভোটের দিন সকালে ৩৯ হাজার ৬১ কেন্দ্রে ব্যালট পেপার যাবে। ব্যালট পেপার পরিবহণ ও বিতরণে সর্বোচ্চ সতর্ক থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ভোটগ্রহণের দিন সংশ্লিষ্ট সহকারী প্রিজাইডিং অফিসার রিটার্নিং অফিসার বা সহকারী রিটার্নিং অফিসারের কাছ থেকে ব্যালট পেপার সংগ্রহ করে পর্যাপ্ত নিরাপত্তার সঙ্গে সকাল ৬টার মধ্যে সংশ্লিষ্ট প্রিজাইডিং অফিসারের কাছে হস্তান্তর করবেন। ভোটগ্রহণের দিন সকালে ব্যালট পেপার পরিবহনের বিষয়ে মোবাইল ও স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে নিয়োজিত আইনশৃঙ্খলা বাহিনী প্রয়োজনীয় নিরাপত্তা পরিকল্পনা গ্রহণ করবেন। অবশ্য চার হাজারের বেশি দুর্গম ভোটকেন্দ্রে বৃহস্পতিবার ব্যালট পেপার চলে গেছে। যাতায়াত পথ বিবেচনায় এসব কেন্দ্রে আগের দিন ব্যালট পেপার পাঠানো হচ্ছে।
সহিংসতা ঠেকাতে প্রস্তুত পুলিশ
নির্বাচন ঘিরে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সব ধরনের অরাজকতা থামাতে প্রস্তুত বলে জানিয়েছেন পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি) চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল-মামুন। নির্বাচনি মাঠকে ঘিরে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। সুষ্ঠু পরিবেশ বজায় রাখতে সোচ্চার তারা।
সাড়ে ৭ লাখ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য
নির্বাচনে সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিতে প্রায় সাড়ে সাত লাখ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে। এর মধ্যে পাঁচ লাখ ১৭ হাজার ১৪৩জন আনসার সদস্য। বাকীদের মধ্যে রয়েছে বিজিবি, র্যাব, পুলিশ, কোস্টগার্ড ও নৌবাহিনী। ইতিমধ্যেই গত ৩ জানুয়ারি থেকে ভোটের মাঠে স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যরা। ১০ জানুয়ারি পর্যন্ত মোট আট দিন মাঠে থাকবেন তারা। নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ করার লক্ষ্যে আগামী ৯ জানুয়ারি পর্যন্ত বৈধ আগ্নেয়াস্ত্র বহন ও প্রদর্শনের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে। এ সময় পর্যন্ত লাইসেন্সধারীরাও আগ্নেয়াস্ত্র বহন করতে পারবেন না।
প্রায় তিন হাজার জুডিশয়াল-এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট
নির্বাচনকে কেন্দ্র করে আট বিভাগে দুই হাজারেরও বেশি এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োজিত রয়েছেন। বিভিন্ন অপরাধের বিচার সম্পন্ন করতে গতকাল শুক্রবার থেকে মাঠে নেমেছেন আরও ৬৫৩ জন বিচারিক হাকিম। বিচারিক হাকিমরা ভোটের আগে-পরে পাঁচদিন দায়িত্ব পালন করবেন। সবমিলিয়ে প্রায় তিন হাজার জুডিশিয়াল ও এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট দায়িত্ব পালন করবেন। এর আগে সারা দেশে ৩০০ আসনের জন্য ৩০০টি নির্বাচনি অনুসন্ধান কমিটি গঠন করা হয়। তারা বিভিন্ন অপরাধে প্রার্থী ও তাদের সমর্থকদের রেকর্ড সংখ্যাক মোকজ, তলব ও জরিমানা করেন। এ ছাড়া এসব কমিটির সুপারিশে নিয়মিত আদালতে অন্তত অর্ধশতাধিক প্রার্থী ও তাদের সমর্থকের বিরুদ্ধে মামলার সিদ্ধান্ত দিয়েছে।
১৮৬ বিদেশিকে নির্বাচন পর্যবেক্ষণের অনুমতি
নির্বাচন দেখার জন্য যে বিদেশিরা আবেদন জানিয়েছিলেন তাদের মধ্যে ১৮৬ জন পর্যবেক্ষক ও সাংবাদিকদের অনুমোদন দিয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। তাদের মধ্যে ১২৭ জন পর্যবেক্ষক আর ৫৯ জন বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমের কর্মী। এ ছাড়া নির্বাচন দেখতে দেশি ২০ হাজার ৭৭৩ জন পর্যবেক্ষককে অনুমোদন দিয়েছে ইসি। তাদের মধ্যে কেন্দ্রীয়ভাবে ৪০টি পর্যবেক্ষক সংস্থার ৫১৭ জন এবং স্থানীয়ভাবে ৮৪টি পর্যবেক্ষণ সংস্থার ২০২৫৬ জন ভোট পর্যবেক্ষণ করবে।
যানচলাচলে নিষেধাজ্ঞা-নির্দেশনা
নির্বাচন উপলক্ষে ৭২ ঘণ্টা মোটরসাইকেল চলাচলের বিষয়ে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। এ সময় কেবল আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, সশস্ত্র বাহিনী, প্রশাসনের সদস্য ও অনুমোদিত পর্যবেক্ষক, জরুরি সেবার যানবাহন, ওষুধ, চিকিৎসা সরঞ্জাম ও অভিন্ন কাজে ব্যবহৃত জিনিসপত্র এবং সংবাদপত্র বহনকারী সব ধরনের যানবাহন (মোটরসাইকেলসহ), দূরপাল্লার যানবাহন, প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী ও তাদের এজেন্টদের ক্ষেত্রে এই বিধিনিষেধ শিথিল করা হবে। সাংবাদিক, পর্যবেক্ষক, নির্বাচনসংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা-কর্মচারী, জাতীয় মহাসড়ক, প্রধান আন্তজেলা রুট, মহাসড়ক এবং প্রধান মহাসড়কের সংযোগ সড়কের ক্ষেত্রেও বিধিনিষেধ শিথিল থাকবে।
বিএনপির কর্মসূচি
বিএনপিসহ সরকারবিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো এই নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দিয়েছে। আজ রোববার ও আগামীকাল তারা সারা দেশে ৪৮ ঘণ্টার হরতাল কর্মসূচি ঘোষণা করেছে। গতকাল রাত থেকেই দেশের বিভিন্ন স্থানে ভোটকেন্দ্রে ককটেল বিস্ফোরণ ও অগ্নিসংযোগের খবর পাওয়া গেছে। অন্যদিকে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ কেন্দ্রে ভোটার উপস্থিতি বাড়াতে দলীয় স্বতন্ত্র প্রার্থী দাঁড় করানোসহ নানা কৌশল নিয়েছে। এক তৃতীয়াংশ আসনে আওয়ামী লীগের এই স্বতন্ত্র প্রার্থীরাই নির্বাচনে নৌকার বিরুদ্ধে প্রতিদ্বন্দ্বীতা গড়ে তোলার আভাস দিয়েছেন। ফলে প্রায় শতাধিক আসনে ব্যাপক উত্তেজনা বিরাজ করছে। অনেক স্থানে নির্বাচনি ক্যাম্প ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে। এসব ঘটনায় প্রার্থীরা একে অপরকে দোষারোপ করছেন।
জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে এই নির্বাচনের গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে উঠেছে প্রশ্ন, আবার অনেকে হয়েছেন সন্তুষ্ট। ২০১১ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বিলুপ্ত হওয়ার পরে তৃতীয়বারের মতো দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। এর আগে ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি বিরোধী দলের বর্জনের মধ্যেই ১৫৩ আসনে প্রার্থীরা বিনা ভোটে জয় নিশ্চিত করেন। বাকি আসনগুলোতে ব্যাপক সহিংসতার মধ্যে ভোটার উপিস্থিতির হার ছিল ৪০ ভাগের বেশি। এরপর ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত নির্বাচনে বিএনপিসহ প্রায় সবগুলো দল অংশ নিলেও নির্বাচনে ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ ওঠে। এই নির্বাচনে ভোটার উপস্থিতি ছিল ৮০ ভাগ। যদিও ভোটার উপস্থিতির হার নিয়েও রয়েছে ব্যাপক বিতর্ক।
জাতীয় ও আন্তর্জাতিক মহল থেকে বারবার অংশগ্রহণমূলক ও সুষ্ঠু নির্বাচনের তাগিদ দেওয়া হলেও বিএনপিসহ ইসির নিবন্ধিত ১৬টি রাজনৈতিক দল নির্বাচনের বাইরে রয়েছে। নির্বাচন কমিশন এবং সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, কেন্দ্রে ভোটারদের উপস্থিতি থাকলে নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক এবং গ্রহণযোগ্যতা নিশ্চিত করা যাবে। নির্বাচনের গ্রহণযোগ্যতা প্রশ্নে গতকাল ঢাকায় ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের এক সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, ‘নির্বাচনটা হতে দেন। গ্রহণযোগ্যতা পাবে কি না, সেটা বিদেশিরাই বলবেন। আমরা তো বলছি, ভোটার টার্ন আউট, অংশগ্রহণ সন্তোষজনক হবে। এ দেশে একটা ভালো নির্বাচন হবে। প্রধান বিরোধীদল যেখানে নেই, এটা আমরা রিগ্রেট (অনুশোচনা) করি। বিএনপি থাকলে নির্বাচন আরও প্রতিযোগিতাপূর্ণ হতো, সেটা আমরা স্বীকার করি। তারপরও এই নির্বাচন প্রতিযোগিতাপূর্ণ হচ্ছে।’
অন্যদিকে পৃথক সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আবদুল মঈন খান বলেছেন, ৭ জানুয়ারির একতরফা ও ভাগ-বাটোয়ারার নির্বাচনকে নিয়ে দেশে-বিদেশে হাস্যরস ও সমালোচনা চলছে। সরকার নিজ দায়িত্বে ও মরিয়া উদ্যোগে প্রতিদিন সেটিকে প্রহসন ও সহিংসতার নতুন মাত্রায় নিয়ে যাচ্ছে। ডামি প্রার্থী ও ডামি দল উৎপাদন করেই ক্ষান্ত হয়নি, এখন তারা নজর দিয়েছে জোরপূর্বক ডামি ভোটার সৃষ্টিতে।
নির্বাচন কমিশন থেকে জানান হয়েছে, সারা দেশে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে প্রায় আট লাখ সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে। পাশাপাশি বেসমারিক প্রশাসনকে সহায়তার জন্য সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যরাও মাঠে রয়েছেন। নির্বাহী ও জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে পৃথক মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করা হচ্ছে। এবারের নির্বাচনে সবচেয়ে বেশি প্রার্থী রয়েছে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের। হাইকোর্ট থেকে তিনজন প্রার্থিতা ফিরে পাওয়ায় দলটির প্রার্থীর সংখ্যা ২৬৬ জন। এ ছাড়া জাতীয় পাটি-জাপার ২৬৫ জন, তৃণমূল বিএনপির ১৩৫ জন, ন্যাশনাল পিপলস পার্টির ১২২ জন, বাংলাদেশ কংগ্রেসের ৯৬ জন, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের ৫৬ জনসহ নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধিত ২৭টি রাজনৈতিক দলের মোট প্রার্থী সংখ্যা এক হাজার ৫৩৪ জন। আর স্বতন্ত্রপ্রার্থী রয়েছেন আরও ৪৩৬ জন। ফলে এক এক হাজার ৯৭০ জনের নাম থাকবে ব্যালট পেপারে। যদিও জাপাসহ বেশ কয়েকটি দল ও স্বতন্ত্র প্রার্থীরা প্রতীক বরাদ্দের পরে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দিয়েছেন। বিএনপিসহ ১৬টি দল এ নির্বাচন বয়কট করেছে। নিরপেক্ষ নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনসহ একাধিক দাবিতে নির্বাচন থেকে দূরে রয়েছে দলগুলো।